ডেমোক্রেটদের সঙ্গে বৈঠক পণ্ড, ‘বাই বাই’ বললেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের এক-চতুর্থাংশ বিভাগ ও সংস্থায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা অচলাবস্থা নিরসনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শীর্ষ ডেমোক্রেট নেতাদের বৈঠক শুরুর কিছু সময়ের মধ্যেই পণ্ড হয়ে গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2019, 05:00 AM
Updated : 10 Jan 2019, 05:00 AM

মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের অর্থ দিতে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেটের সংখ্যালঘু অংশের নেতা চাক শুমার অস্বীকৃতি জানানোর পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি পরে শীর্ষ দুই ডেমোক্রেট নেতার সঙ্গে বৈঠককে ‘সময় নষ্ট’ হিসেবেও অভিহিত করেন।

অর্থ বিল নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ডেমোক্রেটরদের সমঝোতা না হওয়ায় চলতি সপ্তাহে প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মী বেতনহীন অবস্থায় থাকতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ট্রাম্প পরে টুইটারে জানান, বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসার সময় তিনি ডেমোক্রেটদের ‘বাই বাই’ বলেছেন।

“চাক আর ন্যান্সির সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসেছি। পুরোপুরি সময় নষ্ট। আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ৩০ দিনের মধ্যে কী হবে, যদি আমি খোলামেলা বলি, তোমরা কি দেয়াল বা ইস্পাতের বেষ্টনীসহ সীমান্ত নিরাপত্তায় বরাদ্দ দিতে রাজি হবে? ন্যান্সি বলল, না। আমি বলেছি বাই বাই, কোনোকিছুই কাজ করছে না,” বলেছেন এ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্প দুই শীর্ষ ডেমোক্রেটের অনড় অবস্থানকে দায়ী করলেও ন্যান্সি ও শুমার বলছেন, বুধবার ওয়েস্ট উইংয়ের বেজমেন্টে হওয়া বৈঠকটি পণ্ড হওয়ার মূল কারণ প্রেসিডেন্টের গোয়ার্তুমি। 

প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেট স্পিকার বলেন, লাখ লাখ সরকারি কর্মীর বেতনহীন অবস্থাকে ট্রাম্প ‘স্বাভাবিক ক্ষয়ক্ষতি’ হিসেবেই দেখছেন।

“এ বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে, তারা (বেতনহীন কর্মী) হয়তো তাদের বাবাদের কাছে আরও অর্থ চাইতে পারে। কিন্তু তারা পারে না,” বলেছেন ন্যান্সি।

শুমার জানান, দেয়াল নির্মাণে অর্থ দিতে অস্বীকৃতির কথা শোনার পরপরই ট্রাম্প বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান।

“তিনি দাঁড়িয়ে যান, বলেন, ‘আমাদের তাহলে আলোচনার কিছু নেই’, এবং তিনি বেরিয়ে যান। এর মাধ্যমে ফের আমরা তার মেজাজি নীতির বহিঃপ্রকাশ দেখলাম, কারণ তিনি তার আকাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পাননি,” বলেছেন নিউ ইয়র্কের এ ডেমোক্রেট সিনেটর।

অন্যদিকে ডেমোক্রেট নেতাদের আচরণে ‘হতাশা’ জানিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স; তারা ‘মধ্যস্থতায় ইচ্ছুক নয়’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। 

নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থিও বলেছেন, ডেমোক্রেট নেতাদের আচরণ ছিল ‘লজ্জাজনক’।

ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, দেয়াল নির্মাণের ইস্যুতে রিপাবলিকান পার্টি ‘পুরোপুরি ঐক্যবদ্ধ’; যদিও উদারপন্থি হিসেবে পরিচিত দলটির কিছু নেতার বক্তব্যে আসছে ভিন্ন সুর।

“অচলাবস্থার জন্য কোনো কারণ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, লাখ লাখ সরকারি কর্মী ও ঠিকাদারদের বেতনের চেক শিগগিরই দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম; ছোট ছোট ব্যবসা, যা ওই কর্মী ও ঠিকাদারদের ওপর নির্ভরশীল সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোনো কারণ নেই, এগুলোকে রাজনৈতিকভাবে জিম্মি করে রাখার,” বলেছেন রিপাবলিকান সিনেটর লিসা মুরকোওস্কি।

দেয়াল নির্মাণে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ পেতে প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা জারি করে কংগ্র্রেস পাশ কাটানোরও হুমকি দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মঙ্গলবার ওভাল অফিস থেকে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে জরুরি অবস্থা জারি হবে বলে অনেকে আশঙ্কা করলেও ট্রাম্প সেপথে হাঁটেননি।

নির্বাচনী প্রচারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে কংগ্রেসের কাছে সীমান্ত নিরাপত্তা বাবদ মোট ৫৭০ কোটি ডলার চেয়েছেন। জানুয়ারি থেকে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ডেমোক্রেটরা অবশ্য শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে। তারা বলছে, দেয়াল হলেও সাধারণ জনগণের করের টাকায় এটি নির্মাণ করতে দেয়া হবে না।

এ নিয়ে মতবিরোধে অর্থ বিল অনুমোদিত না হওয়ায় গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে।

অচলাবস্থার শিকার অনেক সরকারি কর্মী এরই মধ্যে তাদের দুর্দশার চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। অনেকে চাকরি ছেড়ে অন্য কোথাও থিতু হওয়া যায় কিনা সে চিন্তাও করছেন।