পদত্যাগের চাপে জুমা, গুপ্ত পরিবারে পুলিশের হানা

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়তে থাকার মধ্যে তার সঙ্গে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে ভারতীয় বংশোদ্ভুত গুপ্ত পরিবারের বাড়িতে হানা দিয়েছে পুলিশ। এ অভিযানে পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2018, 02:10 PM
Updated : 14 Feb 2018, 02:32 PM

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রভাবশালী এ গুপ্ত পরিবারের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট জুমার সঙ্গে বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য দেশটির রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। যদিও পরিবারটি বরাবরই দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

ভ্রেদে শহরের একটি খামার নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের আওতায় জোহানেসবার্গে গুপ্তদের বিলাসবহুল বাড়িতে বুধবার সকালে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘দ্য এলিট হাই-প্রায়োরিটি ক্রাইমস ইউনিট’- দ্য হাওকস এ অভিযান চালায়।

আটকদের মধ্যে গুপ্ত পরিবারের তিন ভাইয়ের একজন আছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) আহ্বানে জুমার ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়ার মধ্যে গুপ্ত পরিবারে এ পুলিশী অভিযানে পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নিয়েছে।

এএনসি জুমাকে বুধবার দিনশেষের মধ্যেই পদত্যাগ করতে বলেছে। তবে জুমা এখনো পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কট জিইয়ে রেখেছেন। তার পদত্যাগের যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি এবং তাকে অন্যায়ভাবে সরানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

ওদিকে, এএনসি নেতারা জুমার ওপর চাপ বাড়িয়ে বলেছেন, তিনি পদত্যাগ না করলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট আনা হবে। এএনসি’র চিফ হুইপ বৃহস্পতিবারই পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট প্রস্তাবের শুনানি অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে জুমাকে পদত্যাগে বাধ্য করার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে, গুপ্ত পরিবারের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা।

গুপ্ত পরিবার এবং জুমা উভয়ই কোনোরকম অপকর্ম করার কথা অস্বীকার করে আসছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রি স্টেট প্রদেশের ভ্রেদে শহরে দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ কৃষকদের সহায়তা করতে শুরু হয়েছিল এস্তিনা ডেইরি ফার্ম প্রকল্প। এ প্রকল্পের নামে গুপ্ত পরিবার লাখ লাখ ডলার পকেটে ভরেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত বছর ফাঁস হওয়া কিছু ইমেইল থেকে গুপ্ত পরিবারের ওই পুকুর চুরির খবর প্রকাশ্যে চলে আসে। সান সিটিতে গুপ্ত পরিবারের এক সদস্যের চোখ ধাঁধানো বিয়ের আয়োজনে ওই অর্থের কিছু অংশ ব্যয় হয়েছে বলেও জানা গেছে।

জানুয়ারিতে ফ্রি স্টেট প্রদেশের প্রধান এইস মাগাশুলের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে এস্তিনা ডেইরি ফার্ম প্রকল্প সম্পর্কিত কাগজপত্র জব্দ করে ‘দ্য হাওকস।’

তার আগের মাসেই মাগাশুলে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) মহাসচিব নির্বাচিত হন।

তল্লাশি নয় বরং সন্দেহভাজনেদের গ্রেপ্তারের জন্য গুপ্ত কম্পাউন্ডে অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানায় ‘দ্য হাওকস’।

গুপ্ত পরিবারের পুকুর চুরির খবর প্রকাশের পর তাদের সঙ্গে দহরমমহরমের কারণে জুমার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়।

গুপ্ত পরিবার:

১৯৯৩ সালে গুপ্ত পরিবারের তিন ভাই অতুল, রাজেশ ও অজয় ভারত থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান।

দেশটির কম্পিউটার, খনি, বিমান পরিবহন, জ্বালানি, প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন খাতে এ পরিবারের বিনিয়োগ আছে।

জুমার পুরো পরিবারের সঙ্গে গুপ্ত পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পর্কও আছে।