জাপানের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কে কাঁটা হয়ে থাকা এ ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সমাধান করতেই এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিউল।
Published : 06 Mar 2023, 09:37 PM
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানি কারখানাগুলোতে শ্রম দিতে বাধ্য হওয়া দক্ষিণ কোরীয়দের ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে খোদ দক্ষিণ কোরিয়া।
বিবিসি জানায়, জাপানের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কে কাঁটা হয়ে থাকা এ ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সমাধান করতেই এমন বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছে সিউল।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্ক জিন এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থেই দুষ্টচক্র ভেঙে বেরিয়ে আসা দরকার বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র তাৎক্ষণিকভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ায় এই পরিকল্পনার বিরোধী এবং ভুক্তভোগীরা এর সমালোচনা করে বলেছে, এতে জাপান জবাবদিহি করা থেকে পার পেয়ে যাবে।
তাছাড়া, টোকিওর কাছ থেকে পূর্ণ ক্ষমা প্রার্থনা এবং সংশ্লিষ্ট জাপানি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরাসরি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার দাবিও এতে পূরণ হবে না।
প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার কোরীয় সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের কারখানাগুলোতে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। সেই সময় ১৯১০-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত কোরীয় উপদ্বীপে জাপানের উপনিবেশ ছিল।
সোমবার বিক্ষোভকারীরা রাজধানী সিউলে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বাইরে জড়ো হয়ে সরকারের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলোকে সরকারি তহবিল ভুক্তভোগীদেরকে দিতে হবে।
দক্ষিণ কোরিয়া এর আগে দুটি জাপানি কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের যে দাবি জানিয়ে আসছিল তা থেকে সরে আসায় জাপান সরকার সিউলকে স্বাগত জানিয়েছে
দক্ষিণ কোরিয়ার আগের সরকারগুলো টোকিওর কাছ থেকেই ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যেসব জাপানি কোম্পানিতে দক্ষিণ কোরীয়রা কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল তাদের ১৫ জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ২০১৮ সালে জাপানি ওই কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সুপ্রিম কোর্ট।
কিন্তু জাপানি কোম্পানিগুলো তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দুই দেশের সম্পর্কে আরও বৈরিতা দেখা দেয়। ওই জাপানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল মিৎসুবিশি এবং নিপ্পন স্টিল।
গতবছর দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইয়োল ক্ষমতায় আসার পর তিনি জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো জাপানও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ। তাই জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চাপ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
দক্ষিণ কোরিয়ার পরিকল্পনামতে, ১৯৬৫ সালে জাপানের সঙ্গে যুদ্ধপরবর্তী চুক্তি থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার যে কোম্পানিগুলো লাভবান হয়েছে তারা এই ক্ষতিপূরণ দেবে। ৩০ লাখ ডলার বিতরণ করা হবে ভুক্তভোগী ১৫ জনের পরিবারকে, যাদের মাত্র তিনজন এখন জীবিত আছে।
তবে এই তিনজনই বলেছেন, তারা ক্ষতিপূরণের এ অর্থ নেবেন না।