যমুনার উপচে পড়া পানিতে স্থবির দিল্লি

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ আগামী কয়েকদিন বন্যাকবলিত রাজধানীতে আরও বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।

ছবি: রয়টার্স

কয়েকদিনের রেকর্ড বৃষ্টি ও হরিয়ানা রাজ্যের হাতিনিকুণ্ড ব্যারেজের অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ার পর যমুনা নদীর পানি রেকর্ড উচ্চতায় উঠে সৃষ্ট বন্যায় স্থবির হয়ে রয়েছে ভারতের দিল্লি।

নগরীটি যখন মারাত্মক বন্যার সঙ্গে লড়াই করছে তখন দেশটির আবহাওয়া দপ্তর আগামী কয়েকদিন রাজধানীতে আরও বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।

শুক্রবার দিল্লির বেশ কয়েকটি অংশে হাল্কা বৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মধ্যে আরও বৃষ্টি হলে বন্যার সঙ্গে অতিরিক্ত পানি যোগ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে, তাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। 

যমুনার পানির উচ্চতা ৪৫ বছরের রেকর্ড ভাঙার পর শনিবার সকালে কিছুটা নেমে ২০৭ দশমিক ৬৮ মিটার উচ্চতায় ঠেকেছে। তবে এতে দিল্লির তলিয়ে থাকা বেশ কয়েকটি এলাকার পরিস্থিতিতে তেমন প্রভাব পড়েনি।

১৯৭৮ সালে দিল্লির ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনার পানি ২০৭ দশমিক ৪৯ মিটার উচ্চতায় উঠেছিল, গত সপ্তাহে ওই রেকর্ড ভেঙে নদীটির পানি ২০৮ দশমিক ৬৬ মিটার উচ্চতায় উঠে।

বন্যায় দিল্লির রাস্তাগুলো ছোট নদীতে পরিণত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের পাশাপাশি কুকুর, গরুর মতো গৃহপালিত পশুও উদ্ধার করা হচ্ছে।

দিল্লির বিভিন্ন এলাকা বুক সমান পানিতে তলিয়ে আছে। নৌকাযোগে সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, বন্যার পানি বের করে দেওয়ার জন্য যমুনা ব্যারেজের পাঁচটি গেইট খুলে দিতে কাজ করা হচ্ছে।  

“আইটিও ব্যারেজের জ্যাম লেগে যাওয়া প্রথম গেইটটি খোলা হয়েছে। শিগগিরই পাঁচটি গেইটই খোলা হবে,” বলেছেন তিনি।

যমুনার পানি কমছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি বৃ্ষ্টি না হয় তাহলে শিগগিরই স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে। তবে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।”

লোকজনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, “বন্যার হুমকি এখনও কেটে যায়নি। পানির স্রোত অত্যন্ত তীব্র এবং যে কোনো সময় (নদীর) পানির উচ্চতা বাড়তে পারে।”

বন্যায় দিল্লির কেন্দ্রীয় এলাকার আইটিও ও রাজঘাট তলিয়ে গেছে। হুনুমান মন্দির, যমুনা বাজার, গীতি কলোনি, সিভিল লাইন্স এলাকার রাস্তাগুলো জলমগ্ন হয়ে আছে।

বন্যার পানি দেশটির সুপ্রিম কোর্টেও পৌঁছে গেছে এবং নিগম বোধ ঘাটসহ কয়েকটি শশ্মান তলিয়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় শুক্রবার সেনাবাহিনী ও জাতীয় দুর্যোগ বাহিনীকে তলব করা হয়েছে।

দিল্লির মুকুন্দপুর চক এলাকায় বন্যার পানিতে সাঁতার কাটার চেষ্টার সময় ডুবে তিন বালকের মৃত্যু হয়েছে। যমুনার পানি বিপৎসীমা ছাড়ানোর পর নগরীটি থেকে এই প্রথম কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল।

উপচে পড়া যমুনার পানিতে রাজধানীর রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় স্কুল-কলেজ আর অতি প্রয়োজনীয় নয় এমন সরকারি দপ্তর রোববার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে দিল্লি সরকার। রাজধানীর কিছু এলাকায় খাবার পানির সংকট ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন:

এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তুমুল বর্ষণ, বন্যা, মৃত্যু

দক্ষিণ কোরিয়ায় ভূমিধস, বন্যায় ৭ মৃত্যু

বন্যা: দিল্লির সুপ্রিম কোর্ট এলাকাও প্লাবিত, ধীর গতিতে কমছে পানি