ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে যাওয়ার আগেই বেশ কিছু মার্কিন পণ্যে শুল্ক কমিয়েছেন।
Published : 13 Feb 2025, 06:15 PM
ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম তার সঙ্গে বৈঠক করতে দুইদিনের সফরে ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে নিয়ে গেছেন একাধিক মার্কিন পণ্যে শুল্ক কমানোর ‘উপহার’।
এতে ভারতীয় পণ্যে ট্রাম্পের চাপানো শুল্কে ছাড় পাওয়ার আশা করছেন মোদী। তবে শুল্কের বিষয়টি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক বাণিজ্যিক চুক্তি করা এবং চীন প্রশ্নে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আনুকূল্য পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্সির এক মাস না পেরোতেই শত্রু মিত্র সব দেশের ওপরই শুল্ক চাপানোর হুমকি দিয়েছেন এবং কিছু দেশে তা কার্যকরও করেছেন। নতুন বাণিজ্য চুক্তি, বিনিয়োগ এবং আই প্রয়োগে সহায়তা পাওয়ার চেষ্টায় তার এ পদক্ষেপ।
ভারতও সেদিক থেকে ব্যতিক্রম নয়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভারতের সঙ্গে উষ্ন সম্পর্ক থাকার পরও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতকে তিনি ভর্ৎসনা করেছেন। এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার আগেই ট্রাম্প ইস্পাতের উপর চড়া হারে শুল্ক চাপিয়েছেন।
অ্যালুমিনিয়াম এবং ইস্পাতজাত পণ্যের উপর নতুন শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেন তিনি। ওই পণ্যগুলোর ওপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকেই বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আদায়ের বলেও বার্তা দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারতের চাপে পড়ার পট প্রস্তুত হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের ঠিক আগেই ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা দেখা দেয়।
কিন্তু ভারত ট্রাম্পকে ভালভাবেই চেনে। মোদীর বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেক মন্ত্রীই ট্রাম্পের আগের মেয়াদেও ছিলেন।
সেকারণে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পর থেকেই তাকে তুষ্ট রাখার চেষ্টা করতে দেখা গেছে ভারতকে। তারা মার্কিন পণ্যে শুল্ক কমানো, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বাস করা অবৈধ ভারতীয়দেরকে ফেরত নেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের তেল কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে।
মোদী বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে যাওয়ার আগেই বেশ কিছু মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে ভারত। ইলেকট্রনিক, মেডিকেল, অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম এবং রাসায়নিকসহ কয়েকডজন খাতে এই শুল্ক কমানো হয়েছে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা এর পাশাপাশি বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা, ভারতে মার্কিন কৃষিপণ্য রপ্তানি নিয়ে সম্ভাব্য চুক্তি এবং পারমাণবিক শক্তি খাতে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা চান।
ট্রাম্প শিবির মনে করে এই খাতগুলোতে ভারতের উন্নতি করার প্রয়োজন রয়েছে। ফলে, এক ভারতীয কর্মকর্তার মতে, এসবই ট্রাম্পের জন্য ‘উপহার’।
ভারতীয় আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠকের উদ্দেশ্য হল বাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানো। মোদী মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার আর্জি জানাতে পারেন। এই চুক্তি হওয়ার মানে হল দুপক্ষেই শুল্ক কমানো।
সম্প্রতি কয়েকবছরে ভারত বাণিজ্য চুক্তি করতে অনেক বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে। এক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন আগের বাইডেন প্রশাসনের চেয়ে আলোচনায় অনেক বেশি আগ্রহী হতে পারে।
কূটনীতিকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মোদীর এই প্রথম সফরে প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে নতুন ঘোষণা আসতে পারে। সি-১৩০ হারকিউলিস সামরিক পরিবহণ বিমান, পি-এআইটআই সামুদ্রিক নজরদারি বিমান কেনার চুক্তি করতে পারে দিল্লি। পরমাণু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা হতে পারে। জিই এবং ওয়েস্টিংহাউস সংস্থা থেকে পরমাণু চুল্লি কেনা নিয়েও কথা হতে পারে।
তাছাড়া, মোদী সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে আরও বেশি করে মার্কিন পণ্য কেনাসহ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও করা হতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে ভারতের অনেকেই আশাবাদী যে, মোদী ও ট্রাম্পের মুখোমুখি বৈঠকে অনেক মতপার্থক্য কেটে যাবে। বৃহত্তর ক্ষেত্রে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে দিশা দেখাবেন মোদী এবং ট্রাম্প।