হাজার সার্চেও টেইলর সুইফটের খোঁজ নেই এক্স-এ!

এ সপ্তাহের শুরুতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে টেইলর সুইফটের বেশ কিছু ডিপফেইক ছবি। এর মধ্যে কয়েকটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2024, 12:54 PM
Updated : 29 Jan 2024, 12:54 PM

থাকবে কী করে! সার্চ অপশনের গোড়াতেই সুইচ বন্ধ করে দিয়েছেন ইলন মাস্ক!

সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে টেইলর সুইফটের এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি ডিপফেইক ছবি। তারই ধারাবাহিকতায় নিজস্ব প্লাটফর্মে আমেরিকান এ পপ গায়িকার নাম সার্চ করার অপশনটি বন্ধ করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি।

বিবিসিকে দেওয়া ইমেইল বিবৃতিতে এক্স-এর ‘বিজনেস অপারেটর’ বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমের প্রধান জো বেনারচ বলেছেন, নিরাপত্তার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে তারা ‘সাময়িক এ পদক্ষেপ’ নিয়েছেন।

টেইলর সুইফটের নাম কেউ এখন এক্স-এ সার্চ বা অনুসন্ধান করলে, সেখানে “সামথিং ওয়েন্ট রং, ট্রাই লোডিং” শীর্ষক বার্তা দেখা যায়।

এ সপ্তাহের শুরুতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে টেইলর সুইফটের বেশ কিছু ডিপফেইক ছবি। এর মধ্যে কয়েকটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। আর সে ছবিগুলো দেখেছেন লাখ লাখ ব্যবহারকারী।

এ ঘটনার পরপরই নড়েচড়ে বসেন মার্কিন জনপ্রতিনিধি ও সুইফট ভক্তরা। পাশাপাশি এ বিষয়ে সতর্কবার্তাও জারি করেন তারা।

ডিপফেইক ছবিগুলো যে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পোস্ট ও শেয়ার হয়েছে, সেটি সুইফটের ভক্তদের নজরে আসে। পরবর্তীতে এক্স প্ল্যাটফর্মে ‘টেইলর সুইফটকে রক্ষা করুন’ এমন শ্লোগান দিয়ে গায়িকার সত্যিকারের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে  জনসচেতনতামূলক পোস্ট প্রচার করতেও দেখা যায় তাদেরকে।

ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়ার কারণে শুক্রবার এক বিবৃতি প্রকাশ করতে বাধ্য হয় এক্স। এতে উল্লেখ ছিল, সামাজিক মাধ্যমটিতে কোনো ব্যক্তির অসম্মতিতে তার নগ্ন ছবি বা ভিডিও পোস্ট করা ‘কঠোরভাবে নিষিদ্ধ’।

“এই ধরনের কনটেন্টের প্রতি আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। আমাদের দলটি নিজে থেকেই এই সমস্ত চিহ্নিত ছবিগুলো মুছে ফেলেছে এবং এগুলো পোস্ট করার জন্য দায়ী অ্যাকাউন্টগুলোর বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।” — বিবৃতিতে লিখেছে এক্স।

তবে এক্স নিজস্ব সাইট থেকে কখন সুইফটকে সার্চ করার অপশন বন্ধ করেছে বা এর আগে তারা অন্য কোনো সুপরিচিত ব্যক্তির জন্য সার্চ অপশন বন্ধ করেছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

“এই সার্চ অপশনটি বন্ধ করতে আমরা ব্যপক সতর্কতা অবলম্বন করেছি। কারণ, এতে নিরাপত্তার বিষয়টিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।” — বিবিসিকে ইমেইল বার্তায় বলেছেন বেনারোচ।

এমনকি হোয়াইট হাউজের নজরেও এসেছে বিষয়টি। গেল শুক্রবার এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি এমন ছবি ছড়িয়ে পড়াকে ‘শঙ্কাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছে হোয়াইট হাউজ।

“এ বিষয়ে শিথিল মনোভাব রাখলে তা যে নারীদের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে, সে বিষয়টি আমরা জানি। এমনকি এটি সেইসব নারীর ওপরও প্রভাব ফেলে, যারা ক্রমাগতই এর শিকার হয়ে আসছেন,” এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জন-পিয়েরে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকানোর মতো আইন বানানো উচিৎ। পাশাপাশি, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমকে এ জাতীয় কনটেন্ট পোস্ট বন্ধে নিজে থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ বলে উঠে এসেছে তার বক্তব্যে।

“আমরা বিশ্বাস করি, কারও সম্মতি ছাড়া তার অন্তরঙ্গ বা ঘনিষ্ঠ ছবি ও ভুল তথ্যের বিস্তার রোধে সামাজিক মাধ্যমগুলোর নিজস্ব নীতিমালা বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।”

এদিকে, অনুমতিহীন ডিপফেইক ছবিকে অপরাধের আওতায় আনতে নতুন আইন তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন রাজনীতিবিদরাও।

এআই প্রযুক্তির সহায়তায় কারও মুখ বা শরীরের অঙ্গ হেরফের করার মাধ্যমে ডিপফেইক ছবি তৈরি হয়ে থাকে।

২০২৩ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালে এআই প্রযুক্তির উত্থানের পর থেকে এমন ‘ডক্টরড (ফটোশপড বা ডিজিটাল উপায়ে পরিবর্তন করা)’ ছবি তৈরির প্রবণতা বেড়েছে সাড়ে পাঁচশ শতাংশ।

বর্তমানে ডিপফেইক ছবি শেয়ারিং বন্ধ করা বা এগুলো ঠেকানোর মতো কোনো আইন নেই যুক্তরাষ্ট্রে। তবে, এবার সমস্যাটি মোকাবেলার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবেই পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি উঠে এল বিবিসি’র প্রতিবেদনে।

এদিকে, ২০২৩ সালের ‘অনলাইন সেইফটি অ্যাক্ট’-এর অংশ হিসেবে ডিপফেইক পর্নোগ্রাফি শেয়ার করাকে ‘অবৈধ বা বেআইনি’ ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য।