আইনি পথে 'ঘি না উঠলে' যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধ করে দেবে বাইটড্যান্স

বাইটড্যান্সের মোট আয় ও দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীদের ছোট একটি অংশই আসে টিকটক থেকে। তাই, চরম পরিস্থিতেও আমেরিকান ক্রেতাদের কাছে বিক্রির পথে যাবে না তারা।

ছবি: রয়টার্স

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপ স্টোর থেকে টিকটক নিষিদ্ধ করা আইনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সকল রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে, মালিক কোম্পানি বাইটড্যান্স দেশটিতে সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ করে দেবে।

অ্যাপটি বিক্রি করার পরিবর্তে তারা এই বিকল্পই বেছে নেবেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট চারজন সূত্র।

টিকটকে ব্যবহার হওয়া অ্যালগরিদমের ওপরে ব্যাপকভাবে নির্ভর করে মালিক কোম্পানিটির কার্যক্রম। ফলে, এসব অ্যালগরিদমের কারণেই অ্যাপটি বিক্রির সম্ভাবনা খুব কম বলে জানিয়েছে বাইটড্যান্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

তারা আরও জানায়, বাইটড্যান্সের মোট আয় ও দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীদের ছোট একটি অংশই আসে টিকটক থেকে। তাই, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতেও আমেরিকান ক্রেতাদের কাছে বিক্রি না করে, যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপটি বন্ধ করে দিতে চায় চীনের এ কোম্পানি।

অ্যাপটি বন্ধ হয়ে গেলে বাইটড্যান্সের ব্যবসায় সামান্যই প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি, কার্যক্রমে ব্যবহার হওয়া মূল অ্যালগরিদমও ছাড়তে হবে না কোম্পানিটির।

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় সূত্রেরা নাম প্রকাশ করেনি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স। এ ছাড়া, বাইটড্যান্সও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইনফরমেশন এক প্রতিবেদনে লিখেছে, অ্যাপের ব্যবহারকারীদের ভিডিও সুপারিশ করার অ্যালগরিদম ছাড়াই, টিকটকের মার্কিন ব্যবসার অংশ বিক্রির বিষয়টি বিবেচনা করছে বাইটড্যান্স। এ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায়, বৃহস্পতিবার নিজেদের মালিকানাধীন চীনা মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘টুটিয়াও’-এ কোম্পানিটি বলেছে, টিকটক বিক্রির কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।

মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধের প্রতিক্রিয়ায় টিকটকের মুখপাত্র টুটিয়াও-এ পোস্ট করা বাইটড্যান্সের বিবৃতির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি বিলের স্বাক্ষর করে আইনে রূপান্তর করেছেন যা ১৭ কোটি আমেরিকানের ব্যবহৃত জনপ্রিয় ভিডিওভিত্তিক সামাজিক মাধ্যমটি দেশটিতে নিষিদ্ধ করবে অথবা মালিক কোম্পানির অ্যাপটি বিক্রি করতে হবে। সামাজিক মাধ্যমটি এর বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ জিতবে বলে বুধবার আশা প্রকাশ করেছেন টিকটকের সিইও শউ জি চিউ।

চীন আমেরিকানদের তথ্য চুরি করতে পারে বা নজরদারির জন্য অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারে, মার্কিন আইন প্রণেতাদের এমন শঙ্কা থেকেই মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটে বিলটি পাশ হয়েছে।

বাইডেনের স্বাক্ষরের ফলে অ্যাপটি বিক্রির জন্য আগামী বছরের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পাবে কোম্পানিটি। তবে, তিনি যদি নির্ধারণ করেন বাইটড্যান্স এ বিষয়ে অগ্রগতি করছে, সে ক্ষেত্রে সমসীমা আরও তিন মাস বড়িয়ে দিতে পারেন।

কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বা কোনো বিভাগের আর্থিক বিবরণ সবার সামনে তুলে ধরে না বাইটড্যান্স। চীনেই কোম্পানিটি বেশিরভাগ অর্থ আয় করছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে আরেকজন সূত্র। বিশেষ করে কোম্পানির অন্যান্য অ্যাপ, যেমন টিকটকের চীনা সংস্করণ ‘ডোউয়িন’-এর মাধ্যমে।

গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকটকের মোট আয়ের ২৫ শতাংশ এসেছিল বলে সূত্র অনুসারে লিখেছে রয়টার্স।

অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম, যেমন মেটা প্ল্যাটফর্মসের ফেইসবুক অথবা স্ন্যাপচ্যাটের তুলনায় টিকটকের মোট মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন। এর কারণ হিসেবে রয়টার্সের সাক্ষাৎকার নেওয়া ছয় জনের বেশি বিনিয়োগ খাতের ব্যাংক কর্মকর্তা বলেছেন, টিকটকের আর্থিক বিষয়গুলো জানা কঠিন।

বাইটড্যান্সের আয় ২০২২ সালের আট হাজার কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ১২ হাজার কোটি ডলায় হয়েছে বলে চারজনের মধ্যে দুজন সূত্র বলেছে। সূত্র অনুসারে, বাইটড্যান্সের বিশ্বব্যাপী দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর কেবল ৫ শতাংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।