‘বিশাল কোয়ান্টাম ঘূর্ণি’ বানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা

এটি ঠিক একইভাবে আচরণ করে যেভাবে বিভিন্ন ব্ল্যাক হোল এদের আশপাশে ঘিরে থাকা মহাবিশ্বের উপর মহাকর্ষীয় প্রভাব ফেলে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2024, 12:48 PM
Updated : 21 March 2024, 12:48 PM

বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন এক ‘জায়ান্ট কোয়ান্টাম ঘূর্ণি’ তৈরি করেছেন, যা ব্ল্যাক হোল’কে অনুকরণ করতে ও এর বিভিন্ন রহস্য উন্মোচনে সহায়তা করতে পারে।

ব্ল্যাক হোলের আচরণ বুঝতে এ গবেষণায় ‘সুপারফ্লুইড’ বা অতিতরল হিলিয়াম ব্যবহার করেছেন গবেষকরা। তাদের আশা, ব্ল্যাক হোল কীভাবে আচরণ করে ও মহাবিশ্বের সঙ্গে এটি কীভাবে যোগাযোগ করে, সে বিষয়গুলো আরও ভালভাবে বোঝা যাবে এ পরীক্ষার মাধ্যমে।

পরীক্ষাটি চালাতে বিজ্ঞানীরা এক বিশাল আকৃতির ঘূর্ণি তৈরি করেছেন, যাকে অতি তরল হিলিয়ামে রেখে যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা করা হয়। পরবর্তীতে এর পৃষ্ঠের ক্ষুদ্র তরঙ্গগুলো কীভাবে আচরণ করে, তারা দেখতে পান গবেষকরা।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি অবস্থার মতোই কাজ করে এটি।

“পানিতে অতি তরল হিলিয়াম ব্যবহার করে আমরা ক্ষুদ্র পৃষ্ঠের নানা তরঙ্গ নিয়ে আগের বিভিন্ন পরীক্ষার চেয়ে বিস্তারিত ও নির্ভুল গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছি,” বলেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি অফ নটিংহাম’-এর প্যাট্রিক এসভানকারা।

“যেহেতু অতি তরল হিলিয়ামের সান্দ্রতা বা তরল পদার্থের অভ্যন্তরীণ ঘর্ষণের ফলে প্রবাহে বাধা দেওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত কম, তাই আমরা অতি তরল টর্নেডোর সঙ্গে এদের মিথস্ক্রিয়া নিয়ে নিখুঁত অনুসন্ধান চালানোর পাশাপাশি নিজেদের বিভিন্ন তাত্ত্বিক অনুমানের সঙ্গেও এ গবেষণার ফলাফল তুলনা করতে পেরেছি।”

এটি এমন এক পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছিল, যা এক লিটার অতি তরল হিলিয়ামকে ঠাণ্ডা করতে পারে মাইনাস ২৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। সাধারণত এ ধরনের উপাদান অনেক ঠাণ্ডা করলে তা কোয়ান্টামের মতো অদ্ভুত আচরণ করে।

“অতি তরল হিলিয়ামে ‘কোয়ান্টাম ভরটাইস’ নামের ক্ষুদ্র বস্তু থাকে, যেগুলোতে একে অপর থেকে আলাদা হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা যায়,” বলেছেন ড. এসভানকারা।

“পরীক্ষায় আমরা এমন বেশ কয়েক হাজার কোয়ান্টা সমন্বিত করে ছোট টর্নেডোর মতো দেখতে একটি আবদ্ধ বস্তুতে সীমাবদ্ধ করেছি, যেখানে তরল কোয়ান্টামের ক্ষেত্রে রেকর্ড-ভাঙা শক্তি ঘূর্ণি প্রবাহও অর্জিত হয়েছে।”

এ ঘূর্ণি প্রবাহ দেখে গবেষকরা অনুমান প্রকাশ করছেন, বিভিন্ন ব্ল্যাক হোল যেভাবে এদের আশপাশ ঘিরে থাকা মহাবিশ্বের ওপর মহাকর্ষীয় প্রভাব ফেলে, এটা ঠিক একই ধরনের আচরণ করে।

বিজ্ঞানীদের আশা, বিভিন্ন জটিল পদার্থবিদ্যার কাজ অনুকরণে ব্যবহার করা যেতে পারে এটি।

গবেষণাটির ব্যাখ্যা রয়েছে ‘রোটেটিং কার্ভড স্পেসটাইম সিগনেচার ফ্রম অ্যা জায়ান্ট কোয়ান্টাম ভর্টেক্স’ শীর্ষক নতুন এক গবেষনাপত্রে, যা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ।