মাস্কের ইমেইল প্রকাশ করে চলমান দ্বন্দ্বে ‘ঘি ঢালল’ ওপেনএআই

“আমরা অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখতাম এমন একজনের কাছ থেকে এ অভিযোগ পেয়ে আমরা ব্যথিত। এমন একজন, যিনি নিজেই আমাদের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য রাখার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2024, 11:17 AM
Updated : 7 March 2024, 11:17 AM

ওপেনএআইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে ইলন মাস্কের মামলার পর এবার তার কয়েকটি ইমেইল বার্তা প্রকাশ করেছে এআই স্টার্টআপ কোম্পানিটি।

গত সপ্তাহে ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন কোম্পানিটির একসময়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক। তার যুক্তি ছিল, কোম্পানিটি নিজের মূল মিশন থেকে সরে এসেছে, যা হল মানবতার পক্ষে কাজ করা। এ ছাড়া, নিজেদেরকে ওপেন সোর্স রাখার প্রতিশ্রুতি ধরে রাখতেও ব্যর্থ হয়েছে চ্যাটজিপিটি’র নির্মাতা কোম্পানিটি।

মাস্কের দাবি, এর পরিবর্তে লাভের মুখ দেখার প্রতি বেশি মনযোগ দিয়েছে কোম্পানিটি।

মাস্কের সেই দাবির জবাব হিসেবে দীর্ঘ এক পোস্ট করেছে ওপেনএআই, যেখানে মাস্কের বিভিন্ন ইমেইল বার্তাও জুড়ে দেওয়া হয়। সেইসব বার্তা থেকে ইঙ্গিত মেলে, ওপেনএআই থেকে লাভের মুখ দেখতে চেয়েছিলেন মাস্ক নিজেই। আর একে টেসলার সঙ্গে সমন্বয় করতে চেয়েছিলেন তিনি।

আরও খবর:

Also Read: মানবকল্যাণে ব্যর্থতার অভিযোগে ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে মাস্কের মামলা

একই ব্লগ পোস্টে স্যাম অল্টম্যান, গ্রেগ ব্রকম্যান ও ইলায়া সুটস্কেভার’সহ ওপেনএআইয়ের বাকি প্রতিষ্ঠাতারা বলেছেন, তারা মাস্কের সকল দাবি নাকচ করে এর বিপরীতে পদক্ষেপ নেবেন।

“আমরা অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখতাম এমন একজনের কাছ থেকে এ অভিযোগ পেয়ে আমরা ব্যথিত। এমন একজন, যিনি নিজেই আমাদের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য রাখার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন,” বলেন তারা।

“পরবর্তীতে তিনি বললেন, আমরা ব্যর্থ হব। এমনকি একটি প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবস্থাও দাঁড় করান তিনি। আর শেষমেষ আমাদের বিরুদ্ধে তিনি এমন সময় মামলা করলেন, যখন আমরা তাকে ছাড়াই ওপেনএআইয়ের মিশনের দিকে অর্থবহ অগ্রগতি দেখাচ্ছি।”

ওই পোস্ট অনুসারে, ২০১৭ সালে নিজেদেরকে একটি লাভজনক কাঠামোয় রূপান্তরে রাজি হয়েছিল ওপেনএআই। এর কারণ ছিল, অলাভজনক হিসেবে থাকলে ‘আর্টিফিসিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই)’ বিকাশ সম্ভব হয়ে উঠবে না। এটি এমন এক ধারণা, যেখানে বিভিন্ন মেশিন মানুষের মতোই কাজ করার সক্ষমতা পাবে।

“মিশনটিকে এগিয়ে নিতে আমরা যখন লাভজনক কাঠামো হয়ে ওঠার বিষয়ে আলোচনা করেছি, তখন ইলন চেয়েছিলেন, এর পুরো নিয়ন্ত্রণ যেন তার হাতে থাকে অথবা একে নিজের আরেক কোম্পানি টেসলার সঙ্গে সমন্বিত করা হয়,” বলেছে ওপেনএআই।

কোম্পানিটি আরও যোগ করে, “আমরা সে শর্তে ইলনের সঙ্গে রাজি হতে পারিনি কারণ আমাদের মনে হয়েছে, একজনকে ওপেনএআইয়ের পুরো নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আমাদের মিশনের পরিপন্থী।”

“২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইলন আমাদেরকে একটি ইমেইল ফরওয়ার্ড করেন, যেখানে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ওপেনএআইয়ের অর্থ প্রবাহ সচল রাখতে একে টেসলার সঙ্গে সমন্বয় করা উচিৎ। তিনি আরও মন্তব্য করেন, গুগলের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে টেসলাই সঠিক বিকল্প হতে পারে।”

বেশকিছু ইমেইল থেকে ইঙ্গিত মেলে, ওপেনএআইয়ের মিশন এজিআই’সহ কোম্পানির সকল প্রযুক্তি অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা নয়। আর এর সঙ্গে একমতও ছিলেন মাস্ক।

ব্লগ পোস্টে প্রকাশিত বিভিন্ন ইমেইল অনুসারে, ২০১৬ সালে সুটস্কেভারের পাঠানো এক ইমেইল বার্তার জবাবে ‘ইয়াপ’ লিখেছিলেন মাস্ক। ওই ইমেইল বার্তায় উল্লেখ ছিল, ‘আমরা যেহেতু এআই বিকাশের কাছাকাছি, তাই একে শুরুতে কম উন্মুক্ত রাখাই সমীচীন হবে।’

সুটস্কেভার বলেন, ওপেনএআইয়ের মিশনের মানে দাঁড়ায়, এআই প্রযুক্তি থেকে সবার লাভ হওয়া উচিৎ। তবে, এর পেছনের বিজ্ঞান শেয়ার না করলেও ‘চলবে’। তবে, প্রাথমিকভাবে কর্মী নিয়োগের সময় নিজেদের সকল পরিকল্পনাই শেয়ার করা সঠিক মনে হয়েছে কোম্পানির কাছে।

এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট মাস্ক ও এক্স-এর মন্তব্য জানতে চাইলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে বুধবার ওপেনএআই’কে বিদ্রুপ করে কয়েকটি সিরিজ পোস্ট করেন মাস্ক, যেখানে কোম্পানিকে ‘ক্লোজডএআই’ বলেও ডাকার আহ্বান জানান তিনি।