টুইটার, ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রামে ‘ফেরার প্রস্তুতি’ ট্রাম্পের

“এ বিষয়ে তিনি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে কথা বলছেন। তবে ট্রাম্প কখন কী বলেন, তা কারো পক্ষে আঁচ করা কঠিন।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2023, 08:37 AM
Updated : 19 Jan 2023, 08:37 AM

শীর্ষ সামাজিক প্ল্যাটফর্ম টুইটার, ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল দাঙ্গার পর নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ট্রাম্প তার পরিকল্পনা অনুযায়ী সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে ফিরতে পারেন এই মাসেই। ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত তিনি এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে উঠে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে’।

ইলন মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণের পর প্ল্যাটফর্মে থাকা নিজস্ব অ্যাকাউন্ট ফিরে পেয়েছেন ট্রাম্প। এ ছাড়া, ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তার দল ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মালিক কোম্পানি মেটাকে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্টগুলো প্ল্যাটফর্মে ফেরানোর আবেদন করছে।

গেল বুধবার মার্কিন গণমাধ্যম ফক্স নিউজ ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলার সময় মেটার সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি স্বীকার করেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। তবে, ট্রাম্প নিজের গতানুগতিক ধরনেই নিজের অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে আনতে চাওয়ার বিষয়টি নাকচ করেন।

“আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি। আর আমরা দেখব এটি কীভাবে কাজ করতে পারে।” --বলেন তিনি।

“তারা আমাদের ফেরালে এটি তাদের ব্যপক সহায়তা করবে। আর এতে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে, প্রয়োজনটা আমাদের চেয়ে তাদের বেশি।”

এ মাসের কোনো এক সময় ট্রাম্পের অ্যাকাউন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারে মেটা।

নভেম্বরে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট ফিরে পেলেও প্ল্যাটফর্মটিকে দুইবার নাকচ করেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের প্রচারণা দলের মুখপাত্র স্টিভেন চিউং বলেন, ফেইসবুকে তার প্রত্যাবর্তন ‘২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর গুরুত্বপূর্ণ টুল’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

“আমাদের বিশ্বাস, ফেইসবুকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অ্যাকাউন্টে নিষেধাজ্ঞা নাটকীয়ভাবে বিকৃত করা হয়েছে। আর এতে জনসাধারণের বক্তব্যও বাধার মুখে পড়েছে।” --মেটাকে দেওয়া চিঠিতে লিখেছে ট্রাম্পের প্রচারণা দল। চিঠিটি দেখার কথা বলেছে মার্কিন গণমাধ্যম এনবিসি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ লোকজন ভেবেছিলেন তিনি হয়তো মেটাকে মামলার হুমকি দেবেন। তবে, তার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।

এর পরিবর্তে, প্রচারণা দল মনযোগ দিয়েছে বাক স্বাধীনতার গুরুত্বের ওপর। পাশাপাশি, প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে তারা একটি বৈঠক আয়োজনের অনুরোধও জানায়।

মেটার এক মুখপাত্র এনবিসিকে বলেন, তারা ‘নিজেদের প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংগতি রেখে আসন্ন সপ্তাহগুলোর মধ্যে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত’ জানাবে।

২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি ফেইসবুক ও টুইটার দুটো প্ল্যাটফর্মই ট্রাম্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর আগের দিন তৎকালীন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ২০২০ সালের নির্বাচনে সাংবিধানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করার কার্যক্রম বানচাল করার উদ্দেশ্যে ট্রাম্প সমর্থকরা ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে আক্রমণ চালায়।

ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সে সময় অতি উৎসাহী সমর্থকরা বিশ্বাস করে বসেছিলেন যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট ডাকাতি হয়েছে। এর কয়েক মাস আগে থেকেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মিথ্যাচার করে আসছিলেন তিনি।

সে সময় ফেইসবুক ট্রাম্পের অ্যাকাউন্টে দুই বছরের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়। ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে পর্যালোচনা সাপেক্ষে তার অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনার কথা জানিয়েছিল মেটা।

টুইটার তাকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। প্ল্যাটফর্মটি কেনার পর ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেন ইলন মাস্ক। তবে, ট্রাম্প এখন পর্যন্ত নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো টুইট করেননি। এর পরিবর্তে, নিজস্ব সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশালেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করার কথা বলেছেন তিনি।

রিপাবলিকান দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য এনবিসিকে জানিয়েছেন, “ট্রাম্প সম্ভবত টুইটারে ফিরে আসছেন। প্রশ্ন হলো, কখন ও কীভাবে?”

“এ বিষয়ে তিনি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে কথা বলছেন। তবে ট্রাম্প কখন কী বলেন, তা কারো পক্ষে আঁচ করা কঠিন।”

ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট সদস্য অ্যাডাম শিফ’সহ তিন কংগ্রেস সদস্য মেটাকে এক চিঠিতে বলেন, ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে ক্ষতিকারক নির্বাচনী কনটেন্ট পোস্ট অব্যাহত রেখেছেন। এগুলো সম্ভবত ফেইসবুকের নীতিমালা লঙ্ঘন করবে।

“আমাদের বিশ্বাস, প্রত্যাবর্তনের সুযোগ পেলে তিনি পুনরায় ফেইসবুকে একই ধরনের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ছড়াবেন।”

ইনডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, টুইটার ও ফেইসবুকে ফিরে এলে ট্রাম্পের ব্যপ্তি ছড়িয়ে পড়বে। নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশালে তার ফলোয়ার সংখ্যা ৪৮ লাখ হলেও টুইটার ও ফেইসবুকের বেলায় এই সংখ্যা যথাক্রমে আট কোটি ৮০ লাখ ও তিন কোটি ৪০ লাখ।