চাঁদের দক্ষিণ মেরুতেই কেন নজর সবার?

চাঁদে প্রথম অ্যাপোলো মিশন অবতরণের আগে অর্থাৎ ৬০’র দশক থেকেই বিজ্ঞানীরা অনুমান প্রকাশ করে আসছেন, চাঁদে পানির অস্তিত্ব মিলতে পারে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2023, 08:22 AM
Updated : 23 August 2023, 08:22 AM

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান নামানোর একেবারে দ্বারপ্রান্তে আছে ভারতের মহাকাশ সংস্থা ইসরো।

এর মাধ্যমে ভারতের মহাকাশ লক্ষ্যমাত্রা এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চাঁদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান জমাটবদ্ধ বরফ সম্পর্কেও প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

চাঁদে জমাট বরফের সম্ভাব্য উপস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে রয়টার্স। আর বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থা ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানি কেন একে চাঁদে আবাস তৈরি, খনিজ আহরণ ও মঙ্গল গ্রহে সম্ভাব্য অভিযান পরিচালনার মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করছে, সেটিও ব্যাখ্যা করা হয়েছে এতে।

বিজ্ঞানীরা কীভাবে চাঁদে পানি খুঁজে পেলেন?

চাঁদে প্রথম অ্যাপোলো মিশন অবতরণের আগে অর্থাৎ ৬০’র দশক থেকেই বিজ্ঞানীরা অনুমান করে আসছেন, চাঁদে পানির খোঁজ মিলতে পারে। তবে, ৬০’র দশকের শেষে ও ৭০’র দশকের শুরুর দিকে অ্যাপোলো মিশনের নভোচারীরা চাঁদ থেকে যেসব নমুনা পৃথিবীতে এনেছেন, সেগুলো সবই ছিল একেবারে খটখটে, শুকনো।

২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্রাউন ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে পুনরায় সেইসব নমুনা পরীক্ষা করেন। আর এতে তারা চাঁদ থেকে পাওয়া আগ্নেয়গিরির কাঁচের ভেতর হাইড্রোজেনের অস্তিত্ব খুঁজে পান।

২০০৯ সালে নাসার সহায়তায় ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ‘ইসরো’র পাঠানো ‘চন্দ্রযান ১’ মহাকাশযানটিও চাঁদের পৃষ্ঠে পানির অস্তিত্ব শনাক্ত করে।

একই বছর নাসার অনুসন্ধানে উঠে আসে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর পৃষ্ঠের নীচে জমাট বরফ থাকতে পারে। এর আগে ১৯৯৮ সালে নাসার পরিচালিত ‘লুনার প্রসপেক্টর’ মিশনে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত ‘ছায়াযুক্ত গর্তে’ উচ্চমাত্রার জমাট বরফ থাকা প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়।

চাঁদে পানি থাকা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বিজ্ঞানীদের চাঁদে জমাট বরফের অস্তিত্ব নিয়ে আগ্রহ দেখানোর কারণ, এর থেকে খোঁজ মিলতে পারে চাঁদে থাকা আগ্নেয়গিরির ও এমন উপাদানের, যা পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ধুমকেতু ও গ্রহাণুগুলোতে পাওয়া যায়। আর এর মাধ্যমে মহাসাগরের উৎপত্তি নিয়েও ধারণা মিলতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

চাঁদে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পাওয়া যায়, তবে এটি চাঁদে যাওয়া নভোচারীদের পানযোগ্য পানির উৎস হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্র শীতল করার ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে।

এ ছাড়া, মহাকাশযানের জ্বালানীর জন্য প্রয়োজনীয় হাইড্রোজেন ও নভোচারীদের শ্বাস নেওয়ার জন্য অক্সিজেনও তৈরি করা যেতে পারে এর মাধ্যমে। পাশাপাশি, মঙ্গল গ্রহে যাত্রা ও চাঁদে ‘মাইনিংয়ের’ ক্ষেত্রেও এটি সহায়ক হতে পারে।

১৯৬৭ সালে জাতিসংঘের মহাকাশ বিষয়ক চুক্তিতে চাঁদে কোনো একক দেশের মালিকানার বিষয়টি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে, বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই এতে।

চাঁদে অভিযান চালানো ও এর উপাদানের ব্যবহার নিয়ে ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’ নামে এক নীতিমালা তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরইমধ্যে ২৭টি দেশ এতে স্বাক্ষর করলেও চীন ও রাশিয়া তা করেনি।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যাওয়া এত জটিল কেন?

এর আগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হলেও সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে। এই সপ্তাহে ওই এলাকায় অবতরণ করার কথা ছিল রাশিয়ার ‘লুনা ২৫’ নভোযানের। তবে, রোববার সেটি চাঁদের পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে।

চাঁদের নিরক্ষ রেখার অঞ্চল থেকে অনেক দূরে অবস্থান করা দক্ষিণ মেরুতে এর আগে বেশ কয়েকবার অবতরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নাসার যাত্রীবাহী অ্যাপোলো মিশনও। তবে, ওই এলাকায় বেশ কিছু গভীর গর্ত থাকায় তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

ইসরো বলেছে, তাদের ‘চন্দ্রযান ৩’ মিশনটি অবতরণ করতে পারে বুধবার। এর আগে ২০১৯ সালে ভারতের ‘চন্দ্রযান ২’ নভোযানটি অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এবারের মিশনে অবশ্য এর কাছাকাছি এলাকায় অবতরণের লক্ষ্যস্থির করেছে চন্দ্রযান ৩।

এদিকে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই।