অ্যামাজনে খোঁজ মিলল বিশাল আদিম ডলফিন জীবাশ্মের

এ অবিশ্বাস্য গবেষণায় এমন এক প্রজাতির ডলফিন সামনে এসেছে, যার অস্তিত্ব ছিল প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ বছর আগে ও এর দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন মিটার।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2024, 11:49 AM
Updated : 27 March 2024, 11:49 AM

সম্প্রতি অ্যামাজন রেইনফরেস্টে খোঁজ মিলেছে বিশাল আকারের প্রাচীন ডলফিন জীবাশ্মের।

এই যুগান্তকারী অনুসন্ধান চালিয়েছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ জুরিখ’-এর বিজ্ঞানীরা। আমাজনের পেরুভিয়ান অঞ্চলে বিশাল মিঠা পানির ডলফিন জীবাশ্ম আবিষ্কারের ফলে একটি নতুন প্রজাতিরও সন্ধান পেয়েছেন তারা।

এ অবিশ্বাস্য গবেষণায় এমন এক প্রজাতির ডলফিন সামনে এসেছে, যার অস্তিত্ব ছিল প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ বছর আগে ও এর দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন মিটার। আর এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া অন্যতম বৃহৎ নদীর ডলফিন এটি।

বর্তমান সময়ের নদীর ডলফিনের বিপরীতে নতুন আবিষ্কৃত ‘পেবনিস্তা ইয়াকুরুনা’ নামের এই প্রাচীন প্রাণীটি আমাজন থেকে অনেক দূরে পাওয়া গেলেও দক্ষিণ এশিয়ায় পাওয়া নদীর ডলফিনের সঙ্গে এর যোগসূত্র রয়েছে বলে উঠে এসেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজের প্রতিবেদনে।

বর্তমানে পানির মধ্যে থাকা সবচেয়ে অনন্য ও বিপন্ন প্রাণী হল নদীর ডলফিন।

‘পেবনিস্তা ইয়াকুরুনা’ প্রাণীটি পৃথিবীর আকর্ষণীয় প্রাণী বিবর্তন ও বৈচিত্র্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেয়।

বর্তমানে পৃথিবীর সমুদ্র ও নদীতে যেসব ডলফিন সাঁতার কাটছে, তার বিপরীতে এ প্রাচীন প্রাণীটি ‘পেবনিস্তা প্লাটানিস্টোডিয়া’ নামের একটি পুরনো গোষ্ঠীর অন্তর্গত, যা কোটি কোটি বছর আগে মহাসাগরগুলোয় বিকশিত হয়েছিল।

এ নতুন ডলফিন প্রজাতি পৃথিবীর সেই সময়ের একটি গল্প বলে, যখন আমাজন এমন বিশাল রেইনফরেস্ট ছিল না। তবে সে সময় এটি হ্রদ ও জলাভূমির বিশাল এক কাঠামো। এই জলাভূমির সাধারণ নাম ছিল ‘পেবাস’।

সে সময় এ অঞ্চলটি দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল, যা বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর আবাসস্থল ছিল।

তবে, যেহেতু আমাজনের পরিবর্তন ঘটে এটি রেইনফরেস্টে পরিণত হয়েছে তাই পেবনিস্তা প্রজাতির জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়ে যায়।

আমাজনের এমন পরিবর্তনে পেবনিস্তা’দের খাদ্যের বিভিন্ন উৎস শেষ হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত এই দানব আকৃতির ডলফিনের বিলুপ্তি ঘটে। আর অ্যামাজন নদীতে জায়গা নিয়ে নেয় তাদের উত্তরসূরীরা।

‘পেবনিস্তা ইয়াকুরুনা’ প্রাণীদের অনুসন্ধানে খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়গুলোর একটি হল– এর উন্নত প্রতিধ্বনি ক্ষমতা। এটি এমন এক দক্ষতা, যেটির ওপর নির্ভর করেই ঘোলা পানিতে পথ ও শিকার খোঁজা মতো কাজে নির্ভর করে বর্তমান সময়ের নদীর ডলফিন।

অনুসন্ধানটি বেশ অবাক করার মতোই ছিল। কারণ, বর্তমানে অ্যামাজন নদীতে পাওয়া ডলফিনের কাছাকাছি কোনো প্রজাতি খুঁজে পাওয়ার আশা করছিলেন গবেষকরা। এর বদলে গবেষকরা দেখতে পান, পেবনিস্তা’র নিকটতম আত্মীয়রা আসলে দক্ষিণ এশিয়ার নদীর ডলফিন।

এ দানব আকৃতির প্রাচীন ডলফিনের জীবাশ্মের সন্ধান কেবল ‘জীববৈচিত্র্যের হটস্পট’ হিসেবে আমাজনের তাৎপর্যকে তুলে ধরেনি বরং প্রাচীন প্রজাতির প্রাণীদের শৈশবাবস্থাকেও তুলে ধরেছে।

তবে, আমাজনে জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন, যার জন্য পেরুভিত্তিক একদল জীবাশ্মবিজ্ঞানী একটি চ্যালেঞ্জিং অভিযান শুরু করেন, যার ব্যাপ্তি ছিল প্রায় তিন সপ্তাহ।

বিজ্ঞানীরা তাদের যাত্রার শেষেই এই বিশাল ডলফিনের মাথার খুলি খুঁজে পান, যা জীবাশ্মবিদ্যায় একটি ‘যুগান্তকারী মুহূর্ত’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

অনুসন্ধানটি কেবল ডলফিন বিবর্তনের জটিল ইতিহাসের ওপরই আলোকপাত করেনি, বরং পৃথিবীর প্রাকৃতিক জগৎ সংরক্ষণের গুরুত্বের ওপরও আলোকপাত করেছে। আর এতে অতীতের বিভিন্ন রহস্য এখনও উন্মোচনের অপেক্ষায় রয়েছে।