কাতারে চ্যাম্পিয়নদের হারানোর উল্লাস করতেই পারে আরব

ফুটবলের দুনিয়ায় এবার আরব বিশ্ব নিজেদের শক্তির জানান দিতে পেরেছে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2022, 12:37 PM
Updated : 18 Dec 2022, 12:37 PM

এক দশকের বেশি সময়ের মহাযজ্ঞের প্রস্তুতি, এক মাসের ফুটবল উন্মাদনা ও রোমাঞ্চ পেরিয়ে শেষ ধাপে পৌঁছে গেছে কাতার বিশ্বকাপ। মরক্কোর অবিশ্বাস্য সব পারফরম্যান্স আর একের পর এক অঘটন ঘটানোর যাত্রায় সম্ভাবনা জেগেছিল তাদের শিরোপা লড়াইয়ে উঠে আসার। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। তবে ফাইনালের মঞ্চে না থেকেও ফুটবলের দুনিয়ায় এবার আরব বিশ্ব নিজেদের শক্তির জানান দিতে পেরেছে।

মরক্কোর সেমি-ফাইনালে খেলার পাশাপাশি গৌরবের সেই পাতায় রয়েছে, এবারের দুই ফাইনালিস্ট ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনাকে কোনো আর্রব দলের হারানোর কীর্তি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে পারফরম্যান্সের দিক থেকে এবারের আসরই আরবের দেশগুলোর ইতিহাসের সবচেয়ে সফল।

লুসাইলে রোববার বিশ্ব সেরার মুকুট পরতে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা। পুরো আসরে এই দুই দল একটি করে ম্যাচই হেরেছে এবং দুটিই ছিল আরব দেশের বিপক্ষে।

তবে সবার অর্জনকে ছাড়িয়ে গেছে মরক্কো। এর আগে আরবের কোনো দল কখনও শেষ ষোলোতেই উঠতে পারেনি। সেখানে চমকের পর চমক দেখিয়ে এবার সেমি-ফাইনালে খেলেছে উত্তর আফ্রিকার দেশটি। গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়া ও বেলজিয়ামের মতো দলকে পেছনে ফেলে তারা গ্রুপের সেরা হওয়ার পর নকআউট পর্বে একে ছিটকে দেয় স্পেন ও পর্তুগালকে।

ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে অবশ্য ফ্রান্সের কাছে হেরে যায় ২-০ ব্যবধানে। এরপর গত শনিবার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছেও ২-১ গোলে হেরে শেষ হয় দলটির স্বপ্নময় পথচলা।

ম্যাচের পর মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগি বলেন, নিজেদের দেশের পাশাপাশি আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের জন্যও এই সাফল্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

“কেউ যদি আমাকে টুর্নামেন্টের আগে বলত যে, আমরা কাতারে সাতটি ম্যাচ খেলব, তাহলে আমি খুশিই হতাম। পুরো মরক্কো, আফ্রিকান এবং আরব লোকেরা দেখেছে যে এই দলটি কীভাবে লড়াই করেছে এবং দেশকে খুশি করতে চেয়েছে... আমরা চার বছর পরে ফিরে আসার চেষ্টা করব।”

এবারের আসরে সাত ম্যাচে মরক্কোর জয় তিনটি (শেষ ষোলোয় স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জিতেছিল তারা), ড্র একটি ও হার দুটি। নকআউট পর্বে স্পেন ও পর্তুগালের বিপক্ষে ছাড়া তাদের অন্য দুটি জয় গ্রুপে বেলজিয়াম ও কানাডার বিপক্ষে।

মরক্কোর এই অভূতপূর্ব সাফল্যের পাশে উজ্জ্বল হয়ে আছে সৌদি আরব ও তিউনিশিয়ার পারফরম্যান্সও। 

গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে এবারের আসরে তো বটেই, বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা একটি অঘটনের জন্ম দিয়ে আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় সৌদি আরব। ওই ম্যাচের আগে ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত ছিল দলটি। আবার ওই হারের পর টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে মেসিরা জায়গা করে নিয়েছে ফাইনালে। গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পরলেও সৌদি আরবের জয়টা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

আরবের আরেক দল তিউনিসিয়া গ্রুপের শেষ ম্যাচে চমক দেখায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে। যদিও প্রথম দুই ম্যাচ জিতে এই ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের অনেককেই বিশ্রাম দিয়েছিলেন দিদিয়ে দেশম। পরে তারকা ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপে নেমেছিলেন বদলি হিসেবে; কিন্তু তিউনিসিয়ার রক্ষণ ভাঙতে পারেননি তিনি।

নিজেদের অর্জনের বিশালত্ব তুলে ধরতে গিয়ে ৪১ বছর বয়সী তিউনিসিয়ান ভক্ত খলিল বেলহাজ রয়টার্সকে বলেন, ফ্রান্সের বিপক্ষে তাদের জয় ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে।

“ফ্রান্সের বিপক্ষে তিউনিসিয়া জাতীয় দলের জয় ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।”

আরব দেশগুলোর আলো ছড়ানোর মাঝে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি কাতার। ইতিহাসের দ্বিতীয় স্বাগতিক দেশ হিসেবে সব ম্যাচ হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের দলটি।

কাতার বিশ্বকাপের আগে বিশ্ব সেরার মঞ্চে আরবের আটটি দল মিলে ৭৩ ম্যাচ খেলে জিতেছিল মাত্র ১০টি। আর এবার ১৬ ম্যাচ খেলেই তার প্রায় অর্ধেক ম্যাচ জিতেছে যৌথভাবে মরক্কো, সৌদি আরব ও তিউনিসিয়া।

এবারের আগে আরব দেশগুলোর সেরা সাফল্যের মধ্যে রয়েছে মেক্সিকোর বিপক্ষে তিউনিসিয়ার ৩-১ গোলে জয় (১৯৭৮), পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে আলজেরিয়ার ২-১ ব্যবধানে জয় (১৯৮৬)। এছাড়াও রয়েছে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে পর্তুগালকে ২-১ ব্যবধানে মরক্কোর হারানোর এবং ১৯৯৪ আসরে বেলজিয়ামের বিপক্ষে সৌদি আরবের ১-০ গোলে জয়ের গল্প।