‘ম্যাচের আগেই হেরে যেও না’, জামালদের উদ্দেশে সালাউদ্দিন

বর্তমান দল নিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এবার ভালো কিছু পাওয়ার আশা করছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।

প্রতিবারই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে প্রত্যাশার ফানুস ওড়ে। তা চুপসেও যায় নিমিষে। তবে এবারের দল নিয়ে ভালো কিছুর সম্ভাবনা জোরালভাবে দেখছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। প্রতিপক্ষ যতটা ভালো, নিজেরাও ততটা ভালো-এই মানসিকতা নিয়ে জামাল-জিকোদের খেলার বার্তা দিয়েছেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার। 

ভারতের বেঙ্গালুরুতে আগামী ২১ জুন শুরু হবে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এ উপলক্ষে সোমবার থেকে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় প্রস্তুতি শুরু করেছে দল। সেখানেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সালাউদ্দিন। 

যদিও গুঞ্জন আছে, পূর্ব নির্ধারিত ১০ জুনে উইমেন’স ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরু হওয়া নিয়ে জেগে ওঠা সংশয়ের বিষয়ে আলাপ সারতে বসুন্ধরায় গিয়েছেন সালাউদ্দিন। পুরোপুরি বিষয়টি অস্বীকারও করেননি তিনি। তবে বলেছেন, জাতীয় দলকে অনুপ্রাণিত করতেই মূলত কিংস অ্যারেনায় যাওয়ার কথা। 

সেখানে উত্তরসূরিদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলার পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন সালাউদ্দিন। মাঠের লড়াই শুরুর আগে দলকে আত্মবিশ্বাস না হারানোর বার্তা দিয়েছেন বলে জানান সাম্প্রতিক সময় নানা বিতর্কের মধ্যে থাকা বাফুফে সভাপতি। 

“জাতীয় দলের প্রথম ট্রেনিং সেশনে আসার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আশা করুন, আসছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দল ভালো করবে। আমি এখানে এসেছি খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলতে। ওদেরকে বলতে এসেছি যে, তোমরা খেলার আগে ম্যাচ হেরে যেও না। ৯০ মিনিট পরে রেজাল্ট হবে, জিতবে বা হারবে, কিন্তু প্রতিপক্ষ যেমন ভালো, তোমরাও তেমন ভালো-এই মনোভাব নিয়ে মাঠে নামো।”

“কিছুদিন ধরে আমি যেটা দেখছি, ছেলেদের মনোভাব খুবই শক্তিশালী এবং তাদের মানসিকতাতেই জয়ের আকাঙ্খা দেখছি। আমি বলতে এসেছি, জেতার মতো দল তোমাদের আছে, কিন্তু ম্যাচের আগেই যদি তুমি হেরে যাও, তাহলে সমস্যা। তো এটাই ছিল খেলোয়াড়দের সাথে আমার মূল আলোচনা। (উইমেন’স সুপার লিগ) ওই বিষয়গুলো নিয়ে কথা যদি হয়, হতে পারে। তবে আমি এদের সঙ্গেই কথা বলতে এসেছি।” 

অভিজ্ঞ ও তরুণ মিলিয়ে ৩০ জনকে নিয়ে ঢাকা পর্বের প্রস্তুতি শুরু করেছেন হাভিয়ের কাবরেরা। দল নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন কোচ। লক্ষ্য হিসেবে কোচ, খেলোয়াড়দের কণ্ঠে ঘুরেফিরে প্রতিধ্বনিত হয়েছে সেমি-ফাইনাল খেলার আশাবাদ। সালাউদ্দিনেরও বিশ্বাস ‘ভালো কিছু হবে’। 

“আমার পর্যবেক্ষণ বলছে, এবার ছেলেরা খুবই ভালো করবে। আন্তরিকভাবে আমি এটা বিশ্বাস করি। কেননা, কিছু খেলোয়াড়ের লিগের পারফরম্যান্স আমি দেখেছি, যেটা ছিল অনেক আলাদা মানের। আগের থেকে দুই-চার জন খেলোয়াড়ের অনেক উন্নতি হয়েছে। কিছু নতুন খেলোয়াড়ও আছে, আপনারা আবাহনী, মোহামেডান, বসুন্ধরার শেষ চার-পাঁচটা ম্যাচ দেখেছেন, সেখানে কিছু খেলোয়াড় দারুণ পারফরম করেছে।” 

“ছেলেরা পুরো লিগ খেলেছে। টপ ফর্মে আছে। যে কন্ডিশনে আমি খেলোয়াড়দের দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা ভালো কিছু করব। আমি শুধু চাই, আপনারা এই ছেলেদের সমর্থন করুন। এটা আপনার, আমরা এবং এই ছেলেদের দেশ। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি, তাহলে আমাদের ফল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।” 

‘সেরা’দের বেছে নিয়েই কাবরেরা দল গুছিয়েছেন বলে মনে করেন সালাউদ্দিন। জানালেন চূড়ান্ত দল নির্বাচনের সময় করবেন না কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ। তার চাওয়া শুধু কোচের নির্দেশনা মাঠে বাস্তবায়ন করুক খেলোয়াড়রা। 

“দল চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে আমি নাক গলাব না। এটা করা আমার কাজও নয়। আমার জ্ঞান কম না বেশি, সেটা বিষয় নয়। কোচ এই দলের প্রধান, তিনিই সিদ্ধান্ত নিবেন। আমি কখনই নাক গলাব না। আমি হয়ত আলোচনা করব, পরোক্ষভাবে কিছু বলব, কিন্তু সরাসরি হস্তক্ষেপ করব না। বাফুফে সভাপতি হিসেবে আমি যা করতে পারি, তা হচ্ছে আমি ছেলেদের সঙ্গে কথা বলতে পারি, অনুপ্রাণিত করতে পারি, সাহায্য করতে পারি। আমি তো খেলে দিতে পারব না। খেলাটা ওদেরই খেলতে হবে।” 

“ওরা আমাকে বলুক, এটা দরকার, এটা নাই, এই সাপোর্ট দরকার, আমি সেগুলো দিব। কিন্তু দিনশেষে ওরাই খেলবে। কোচ নির্দেশনা দিবে, সে অনুযায়ী তারা খেলবে। আমি যেটা বলব, সেটা হয়ত এক কান দিয়ে শুনবে, মনে থাকবে কিংবা থাকবে না, কিন্তু কোচ হচ্ছে মূল ব্যক্তি, যার কথাটা ওদের মনে থাকবে এবং পারফরম করতে হবে খেলোয়াড়দেরই। আপনিও খেলবেন না, আমিও খেলব না। তাই এই বিশ্বাসটুকু ওদের উপর রাখতে হবে। কেননা, এই সেরা দলই আমাদের হাতে আছে।”