দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময় মূল গোলরক্ষক এদেরসনকে ছাড়াই খেলতে হয় ম্যানচেস্টার সিটিকে।
Published : 10 Mar 2024, 10:46 PM
চোটের ছোবলে দলে নেই একগাদা ফুটবলার, তারওপর ম্যাচের শুরুর দিকেই গোল হজমের ধাক্কা। সেখান থেকে দ্রুত নিজেদের সামলে নিল লিভারপুল। প্রতিপক্ষের ভুলে বিরতির পরপর গোলও পেয়ে গেল তারা। এরপর, শুরু করল প্রবল আক্রমণ। দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটা সময় কোণঠাসা হয়ে রইল ম্যানচেস্টার সিটি। অবশ্য তারাও সুযোগ একেবারে কম পেল না। তবে, ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলের দেখা শেষ পর্যন্ত মিলল না।
অ্যানফিল্ডে রোববার প্রিমিয়ার লিগের হাইভোল্টেজ ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। জন স্টোন্স সিটিকে এগিয়ে নেওয়ার পর সমতা টানেন আলেক্সিস মাক আলিস্তের।
গত নভেম্বরে দুই দলের প্রথম লেগের লড়াইটিও একই স্কোরলাইনে শেষ হয়েছিল।
অন্তত এই সপ্তাহের জন্য লিগ টেবিলের শীর্ষেই থাকছে আর্সেনাল। ২৮ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৬৪। সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে দুইয়ে লিভারপুল। আর তাদের চেয়ে ১ পয়েন্ট কম নিয়ে তৃতীয় স্থানে পেপ গুয়ার্দিওলার সিটি।
আত্মবিশ্বাসী সিটি শুরু থেকে চোটজর্জর ইয়ুর্গেন ক্লপের দলকে চেপে ধরার চেষ্টা করে। প্রথম ১০ মিনিটে নিজেদের সীমানা থেকে সেভাবে বের হতেই পারেনি লিভারপুল। নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে চতুদর্শ মিনিটে প্রথম আক্রমণ শাণায় তারা, তবে দূরের পোস্টে দারউইন নুনেসকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে পারেননি নাথান আকে।
১৯তম মিনিটের পাল্টা আক্রমণে নুনেসের পাস বক্সে ফাঁকায় পেয়ে জালে পাঠান লুইস দিয়াস। তবে বল রিসিভের সময় অফসাইডে ছিলেন নুনেস, লাইন্সম্যানের পতাকা ওঠায় থেমে যায় লিভারপুলের উল্লাস।
এর চার মিনিট পরই দেখা মেলের গোলের, মাঠের অন্যপাশে। কেভিন ডে ব্রুইনের দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত কর্নারে ছয় গজ বক্সে বল পেয়ে টোকায় জালে পাঠান ইংলিশ ডিফেন্ডার স্টোন্স।
৩১তম মিনিটে সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি দমিনিক সোবোসলাই। সতীর্থের ক্রস দারুণ পজিশনে পেয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হেড করেন লিভারপুল মিডফিল্ডার। বিরতির আগে লক্ষ্যে প্রথম শট নিতে পারে তারা। তবে অনেক দূর থেকে সোবোসলাইয়ের ফ্রি কিক ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন এদেরসন।
দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটেই চরম এক ভুল করে বসেন ডাচ ডিফেন্ডার আকে, গোলরক্ষকের উদ্দেশ্যে বাড়ান দুর্বল ব্যাকপাস। কাছেই থাকা নুনেস ছুটে গিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর তাকে ফাউল করেন এদেরসন।
সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে কোনো ভুল করেননি মাক আলিস্তের। বুলেট গতির স্পট কিকে সমতা টানেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার।
সিটির সমস্যা ওখানেই শেষ নয়। ওই ফাউল করতে গিয়েই পায়ে ব্যথা পান ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এদেরসন। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েও খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি, উঠে যান কিছুক্ষণ পর।
চোটের ছোবলে অনেক দিন ধরে মাঠের বাইরে লিভারপুলের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক আলিসন। তার জায়গায় পোস্ট সামলানো কুইভিন কেলেহার ৫৮তম মিনিটে ফিল ফোডেনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন।
৬১তম মিনিটে একসঙ্গে দুটি পরিবর্তন করেন ক্লপ। কনর ব্র্যাডলি ও সোবোসলাইকে তুলে অ্যান্ডি রবার্টসন ও মোহামেদ সালাহকে নামান কোচ।
পরের মিনিটেই দলকে এগিয়ে নেওয়ার পথ তৈরি করে দেন চোট কাটিয়ে ফেরা সালাহ, বাড়ান দারুণ থ্রু পাস। বল ধরে গতিতে সবাইকে পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে পড়েন দিয়াস; কিন্তু ওয়ান-অন-ওয়ানে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিয়ে হতাশ করেন তিনি।
পরের কয়েক মিনিটেও সিটির ওপর আক্রমণের ঝড় বইয়ে দেয় লিভারপুল। ৬৫তম মিনিটে মাক আলিস্তেরের প্রচেষ্টা ঝাঁপিয়ে রুখে দেন বদলি গোলরক্ষক স্টেফান ওর্টেগা। জার্মান এই গোলরক্ষক একটু পর আরেকটি দারুণ সেভ করেন, ঠেকিয়ে দেন নুনেসের শট।
প্রতিপক্ষের ওই দুই প্রচেষ্টার মাঝে অবাক করা এক সিদ্ধান্ত নেন গুয়ার্দিওলা; দলের তারকা প্লেমেকার ডে ব্রুইনেকে তুলে নামান মাতেও কোভাসিচকে। বেরিয়ে যাওয়ার সময় বেলজিয়ান মিডফিল্ডারের চোখে-মুখে ছিল অসন্তোষের ছাপ। শিরোপা লড়াইয়ের মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে নিজেকে একেবারেই মেলে ধরতে পারেননি আর্লিং হলান্ড। তবে পুরোটা সময় তাকে মাঠেই রাখেন গুয়ার্দিওলা।
একই সঙ্গে আরও একটি বদল আনেন সিটি কোচ, হুলিয়ান আলভারেসকে তুলে নামান জেরেমি ডোকুকে। কিন্তু চিত্রপটে কোনো পরিবর্তন আসেনি; একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে লিভারপুল।
শেষ কয়েক মিনিটে লড়াইয়ের উত্তাপ ওঠে তুঙ্গে। ৮৯তম মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল সিটি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ডোকুর কোনাকুনি শট গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও বাধা পায় পোস্টে।
আট মিনিট যোগ করা সময়ে আরও যেন মরিয়া হয়ে ওঠে লিভারপুল। এই সময়ে তিনটি কর্নার আদায় করে নেয় তারা। প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল, এই গোল হলো বলে। শেষ পর্যন্ত যদিও তা হয়নি।