৮ গোলের রোমাঞ্চে আতলেতিকোকে হারিয়ে ফাইনালে রেয়াল

মাদ্রিদের দুই দলের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসল কার্লো আনচেলত্তির দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2024, 09:48 PM
Updated : 10 Jan 2024, 09:48 PM

একবার আতলেতিকো মাদ্রিদ এগিয়ে যায় তো আরেকবার রেয়াল মাদ্রিদ। মনে হচ্ছিল রোমাঞ্চ ছড়ানো লড়াইয়ের নিষ্পত্তি হবে টাইব্রেকারে। কিন্তু অন্তিম সময়ের দুই গোলে শেষ হাসি হাসল স্পেনের সফল দলটি। নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে পৌঁছাল রেয়াল। 

রিয়াদের কিং সাউদ ইউনিভার্সিটি স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে সেমি-ফাইনালে ৫-৩ গোলে জিতেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। 

মারিও এরমোসোর গোলে শুরুতেই এগিয়ে যায় আতলেতিকো। আন্টোনিও রুডিগার সমতা ফেরানোর পর রেয়ালকে এগিয়ে নেন ফেরলঁদ মঁদি। 

অঁতোয়ান গ্রিজমান সমতা আনার পর রুডিগারের আত্মঘাতী গোলে ফের এগিয়ে যায় আতলেতিকো। পরে আবার দানি কারভাহাল সমতা ফেরালে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর এই পর্বের শেষ দিকে স্তেফান সাভিচের আত্মঘাতী গোলের পর ব্রাহিম দিয়াসের গোলে জয় নিশ্চিত হয়ে যায় রেয়ালের। 

চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত গতিতে ছুটছে রেয়াল। এখন পর্যন্ত ইউরোপের সফলতম দলটির একমাত্র হার এই আতলেতিকোর বিপক্ষেই, লা লিগায়। নগর প্রতিদ্বন্দ্বীরা এবারও কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে ভিনিসিউস জুনিয়র-রদ্রিগোদের। 

শুরুতেই তাদের পেছেনে ফেলে দেয় আতলেতিকো। সপ্তম মিনিটে গ্রিজমানের কর্নারে সবার ওপরে লাফিয়ে আড়াআড়ি হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন এরমোসো। গোলমুখে বেশ জটলা থাকলেও সবার মাঝ দিয়ে বল যায় জালে, কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষক কেপা আরিসাবালাগার।  

পিছিয়ে পড়ে যেন জেগে ওঠে রেয়াল। আক্রমণাত্মক ফুটবলে ভীষণ চাপ তৈরি করে তারা। বল পায়ে নিজেদের অর্ধ ছেড়ে বের হতেই পারছিল না দিয়েগো সিমেওনের দল। 

অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতে অষ্টাদশ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পায় আতলেতিকো। কিন্তু মার্কোস ইয়োরেন্তের ক্রসে দূরের পোস্টে শট একটুর জন্য লক্ষ্যে রাখতে পারেননি আলভারো মোরাতা।

দুই মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে জুড বেলিংহ্যামের শট আতলেতিকোর একজনের পায়ে লেগে বেরিয়ে যায় পোস্ট ঘেঁষে। লুকা মদ্রিচের সেই কর্নার থেকেই চমৎকার হেডে সমতা ফেরান রুডিগার। দূরের পোস্টে পুরোপুরি অরক্ষিত ছিলেন এই ডিফেন্ডার। 

২৭তম মিনিটে রদ্রিগোর শট ইয়ান ওবলাকের হাত ফস্কে যায়। তবে আতলেতিকো গোলরক্ষকের কপাল ভালো। বল বেরিয়ে যায় পোস্টের পাশ দিয়ে। 

প্রতিপক্ষকে প্রবল চাপে রেখেই রেয়াল এগিয়ে যায় ৩০তম মিনিটে। কারভাহালের নিচু ক্রস ডি-বক্সে পেয়ে আলতো কিন্তু কার্যকর এক টোকায় দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে পাঠান মঁদি। 

তিন মিনিট পর গোল পেতে পারতেন গ্রিজমান। পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে ফরাসি ফরোয়ার্ডের হেড যায় গোলরক্ষক বরাবর। নষ্ট হয় সমতা ফেরানোর চমৎকার সুযোগ।

৩৭তম মিনিটে আর ব্যর্থ হননি গ্রিজমান। পায়ের দারুণ কারিকুরি আর দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে স্কোরলাইন ২-২ করেন তিনি। রদ্রিগো দে পলের কাছ থেকে ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে কয়েকজনকে এড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে নিখুঁত শটে জাল খুঁজে নেন তিনি। 

৪৩তম মিনিটে ওবলাকের অবিশ্বাস্য সেভে হতাশায় পোড়েন রদ্রিগো। সুযোগ পেয়েও চাপের মুখে বল ক্লিয়ার করতে পারেনি আতলেতিকো। কয়েক জনের পা ঘুরে ডি-বক্সে বল পেয়ে যান রদ্রিগো। বুক দিয়ে বল রিসিভ করে পায়ের কারিকুরিতে দুজনকে এড়িয়ে এগিয়ে যান তিনি। গোলরক্ষক ওবলাক বিভ্রান্ত হয়ে ডাইভ দেন, ঠাণ্ডা মাথায় তার পাশ দিয়ে বল জালে পাঠাতে চেয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে পা দিয়ে বলের গতি কমিয়ে দেন ওবলাক। এরপরও বল যাচ্ছিল জালের দিকেই, ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি।  

কারভাহালের মারাত্মক ভুলে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পিছিয়ে পড়তে বসেছিল রেয়াল। ডি-বক্সের একটু বাইরে ভুল পাস দিয়ে বসেন এই অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার। তবে মোরাতার কাছ থেকে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেলেও আড়াআড়ি শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি সামুয়েল দিয়াস লিনো। 

৭১তম মিনিটে আচমকা ফ্রি কিক নিয়ে দারুণ সুযোগ তৈরি করে রেয়াল। কিন্তু বিপজ্জনক জায়গা থেকেও ওবলাককে পরাস্ত করতে পারেননি নাচো ফের্নান্দেস। তৎপর গোলরক্ষক পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন রেয়াল ডিফেন্ডারের শট। 

সাত মিনিট পর কেপার ভুলে পিছিয়ে পড়ে রেয়াল। এগিয়ে গিয়ে একটি ক্রস বিপদমুক্ত করতে চেয়েছিলেন গোলরক্ষক। কিন্তু মোরাতার চ্যালেঞ্জের মুখে ঠিকমতো পারেননি। কেপার হাত ফসকে বল রুডিগারের গায়ে লেগে জড়ায় জালে! 

৮৫তম মিনিটে ফের সমতা টানে রেয়াল। ভিনিসিউসের শট কোনোমতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন ওবলাক। বেলিংহ্যামের দুটি চেষ্টাও গোললাইনের সামনে প্রতিহত হয়। কিন্তু কারভাহালের বুলেট গতির শটের জবাব জানা ছিল না আতলেতিকো গোলরক্ষকের। 

পরের কিছুক্ষণ যেন ঝড় বয়ে যায় ওবলাক-এরমোসোদের ওপর। প্রতিপক্ষকে ভীষণ চাপে রেখে একটির পর একটি শট নেন রেয়ালের খেলোয়াড়রা। কিন্তু কোনোটিই খুঁজে পায়নি ঠিকানা। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

মনে হচ্ছিল এই ধাপ পেরিয়ে ম্যাচ গড়াবে টাইব্রেকারে। কিন্তু সৌভাগ্যের এক গোলে ১১৬তম মিনিটে এগিয়ে যায় রেয়াল। কারভাহালের ক্রসে হোসেলু ঠিক মতো মাথা ছোঁয়াতে পারেননি। কিন্তু তার পাশেই থাকা সাভিচের পায়ে লেগে বল জড়ায় জালে। দারুণ চেষ্টার পরও ঠেকাতে পারেননি ওবলাক। 

গোল শোধের জন্য মরিয়া হয়ে কর্নারের সময় আতলেতিকো গোলরক্ষকও চলে এসেছিলেন রেয়ালের ডি-বক্সে। তাতে কাজ হয়নি। উল্টো দারুণ গতিতে প্রতি-আক্রমণে ছুটে গিয়ে ব্যবধান আরও বাড়ান দিয়াস। 

চার দলের নতুন আঙ্গিকের এই সুপার কাপে টানা তৃতীয় ও সব মিলিয়ে চতুর্থবার ফাইনালে খেলবে রেয়াল। ২০১৯-২০ মৌসুমে প্রথম আসরে ফাইনালে খেলার পর থেকে সেমি-ফাইনাল থেকেই বিদায় নিচ্ছে আতলেতিকো। লড়াকু ফুটবল উপহার দেওয়া দলটি শূন্য হাতে ফিরল আরও একবার। 

আগামী রোববারের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের প্রতিপক্ষ জানার অপেক্ষায় রেয়াল। বৃহস্পতিবার বার্সেলোনা ও ওসাসুনার লড়াইয়ে জয়ী দলের বিপক্ষে খেলবে তারা।