ফিলিস্তিনের বিপক্ষে নিজেদের দিনের খোঁজে বাংলাদেশ

আবেগের স্রোতকে পাশ কাটিয়ে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে দিতে চান জামাল ভূঁইয়া।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2024, 08:24 AM
Updated : 21 March 2024, 08:24 AM

হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা। সেখানে লেখা ‘সেভ প্যালেস্টাইন ফ্রম দ্য টেরোরিস্ট ইসরায়েল।’ গত অক্টোবরে মালদ্বীপকে হারানোর পর সতীর্থদের নিয়ে এভাবেই ফ্রেমবন্দী হয়েছিলেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ। নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে এভাবেই একাত্মতা প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ দল। সেই ফিলিস্তিন এবার বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ।

পেশাদার ফুটবলে মুখোমুখি হওয়ার মঞ্চে আবেগের জায়গা খুব একটা নেই। স্বাভাবিকভাবে বৃহস্পতিবার কুয়েতের জাবের আল-আহমাদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টায় বিশ্বনাথ-জামালরা নামবেন আবেগের স্রোতকে পাশ কাটিয়ে। ভালো কিছু করার লক্ষ্যে।

লক্ষ্যের প্রশ্নে কোচ, খেলোয়াড়দের কণ্ঠে ঘুরেফিরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে পয়েন্ট পাওয়া, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল খেলা, কৌশল ও শারীরিকভাবে এগিয়ে থাকা শক্তিশালী ফিলিস্তিনকে আটকে দিতে চাওয়ার কথা। সংবাদ সম্মেলনে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার কণ্ঠেও সেই একই সুর। গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপপর্বে লেবানন ও সেমি-ফাইনালে কুয়েতের বিপক্ষে হারলেও ওই ম্যাচগুলো লড়াকু পারফরম্যান্সের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি পেতে চাইছেন ফিলিস্তিন ম্যাচের অনুপ্রেরণা।

“আমাদের দলটি বিশেষ করে গত বছর থেকে বিকশিত হচ্ছে, উন্নতি করছি আমরা। দলে অনেক খেলোয়াড় আছে, সৌদিতে আরবে ভালো একটা ক্যাম্প করার পর সঠিক ও দল অন্তঃপ্রাণ সিনিয়রদের সাথে ভালো মেধাবী তরুণ খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে ভারসাম্য তৈরির চেষ্টা করছি আমরা। সৌদিতে সুদানের বিপক্ষে ভালো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি, এখানে এসেও অনুশীলন করেছি।”

“ফিলিস্তিনের মান ও শক্তি নিয়ে বাস্তব ধারণা আছে আমাদের, বিশেষ করে গত জানুয়ারিতে তারা যে এশিয়ান কাপ খেলেছিল, সেখানে তাদের খেলা দেখে। কিন্তু শক্তিশালী ও ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে উপরের দিকে থাকা দলের বিপক্ষে আমরা ভালো পারফরম্যান্স করেছি এবং সেটা খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। আমরা সেই একই মানসিকতা নিয়ে ফিলিস্তিনের মুখোমুখি হবো, আশা করি ইতিবাচক ফল পাব।”

বর্তমান ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮৬ ধাপ এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিনের বিপক্ষে জয়ের গল্প নেই বাংলাদেশের। ২০০৬ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে ১-১ ড্র এখন পর্যন্ত সেরা প্রাপ্তি। এরপর খেলা পাঁচ ম্যাচের সবগুলোতেই সঙ্গী হারের হতাশা। সবশেষ ২০২১ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের দেখায় ২-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।

বাছাইয়ে এখন পর্যন্ত জিততে পারেনি বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭-০ গোলে হেরে শুরুর পর লেবাননের বিপক্ষে ১-১ ড্র করেছিল দল। ফিলিস্তিনও জয়হীন। লেবাবনের বিপক্ষে গোল শূন্য ড্রয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল তারা। প্রথম জয়ের তাড়না নিয়ে নামবে দুই দলই। ফিলিস্তিন কোচ মাকরাম দাবৌব বলেছেন জয়ই তার একমাত্র লক্ষ্য।

“জয় ছাড়া আমাদের ভিন্ন কোনো চাওয়া নেই। বাছাইয়ে পেরুনোর জন্য এটাই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ দলকেও আমরা অনুসরণ করেছি। উন্নতির ধারাবাহিকতায় আছে তারা। (সৌদি আরবে) সুদানের বিপক্ষে খেলা দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে একটিতে ড্র করেছে, অন্যটিতে তারা হেরেছে।”

“বাছাইয়ে ওরা লেবাননের বিপক্ষে ভালো খেলেছে এবং ড্র করেছে। আমাদের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি ক্যাম্প করেছে সৌদি আরবে, কিন্তু আমরা এশিয়ান কাপে যে স্পিরিট নিয়ে খেলেছি, সেভাবেই খেলব এবং খেলোয়াড়দের প্রতি দারুণ আত্মবিশ্বাস আছে আমার।”

আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই বাংলাদেশেরও। পরিসংখ্যানের পাতায় এবার নতুন গল্প লেখার তাড়না থেকেই সৌদি আরবে ১৫ দিনের ক্যাম্পে নিবিড় অনুশীলন সেরেছে দল। গত বছর একইভাবে ক্যাম্প করার সুফল কাবরেরা তুলেছিলেন ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে ১৪ বছর পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি-ফাইনালে উঠে। এবারের ক্যাম্পের ফসল তিনি তুলতে চান ফিলিস্তিনের বিপক্ষে।

“প্রস্তুতি ইতিবাচক। যেটা পরিকল্পনা, কৌশল সাজিয়েছিলাম, সেটাই পুরোপুরি অনুসরণ করেছি আমরা। সৌদি আরবে দুই সপ্তাহ ছিলাম, প্রায় ১১টি সেশনে নিজেদের যে কৌশল, সেখানে উন্নতি করেছি। এখানে আসার পর দুই সেশন অনুশীলন করেছি। দল ভালো অবস্থায় আছে। আত্মবিশ্বাসী আছে এবং ইতিবাচক ফলের জন্য ছেলেরা লড়বে বলে আমি আশাবাদী।”

“যদি আপনারা সবশেষ এশিয়ান কাপ একটু অনুসরণ করে থাকেন, তাহলে দেখে থাকবেন, ফিলিস্তিন খুবই শক্তিশালী দল এবং তার ফর্মের তুঙ্গে আছে। এশিয়ান কাপে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল খেলেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, কাতার- যারা পরে এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তাদের বিপক্ষেও ভালো করেছিল। বাছাইয়ে তাদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ লড়াই করেছিল। শারীরিকভাবে তারা সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে, কিন্তু আমাদের চাওয়া এই ব্যবধান আমরা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা। আশাকরি জমজমাট লড়াই হবে।”

কোচের সুরে সুর মিলিয়েছেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ম্যাচ বলে আবেগের বিষয়টিও এসে যায়। দেশটিতে এখনও চলছে ইসরায়েলের আগ্রাসন। প্রতিদিন আসছে প্রাণহানির খবর। তবে মাঠের বাইরের বিষয়গুলো বাইরেই রাখতে চান।

“প্রস্তুতি সব মিলিয়ে ভালো হয়েছে। অনেকদিন আমরা একসাথে ছিলাম। (ফিলিস্তিনের বিপক্ষে) বড় ম্যাচ। গেল ১৬-১৭ দিন আমরা অনেক অনুশীলন করেছি। একসঙ্গে প্রচুর সময় কাটিয়েছি। সবকিছুই ইতিবাচক। আমরা রেজাল্ট চাই। ফিলিস্তিন ভালো দল। তারা এশিয়ান কাপ খেলছে। সেখানে তাদের নৈপুণ্য ভালো ছিল। তারা আমাদের গ্রুপের অন্যতম শক্তিশালী দল। আমাদের এ ম্যাচটা খুব সিরিয়াসলি নিতে হবে।”

“দিনটি আমাদের হতে হবে। আমরা সবাই জানি, বিশ্বে কী হচ্ছে… ফিলিস্তিন, ইসরায়েল… অবশ্যই সবাই এগুলো নিয়ে ব্যথিত। কিন্তু আমাদের কাজ ফুটবল খেলা এবং মাঠে মনোনিবেশ করা, মাঠের বাইরের বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া নয়। অবশ্যই আমি চাই, এখানে যারা আমার দেশের মানুষ, তারা বাংলাদেশকে সমর্থন করবে। হ্যাঁ, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে অন্য দেশের মানুষ ফিলিস্তিনকে হয়তো সমর্থন করবে, কিন্তু আমি চাই আমার দেশের মানুষ আজ আমার দেশকে সমর্থন করুক।