অচেনা আর্সেনালকে গুঁড়িয়ে লিগের ব্যাটন নিল সিটি

হাইভোল্টেজ ম্যাচটিতে নূন্যতম লড়াইও করতে পারেনি মিকেল আর্তেতার দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2023, 08:58 PM
Updated : 26 April 2023, 08:58 PM

অনেকের চোখে শিরোপা নির্ধারক হয়ে ওঠা ম্যাচটিতে ছন্নছাড়া ফুটবল খেলল আর্সেনাল। শুরুতে পিছিয়ে পড়ে পুরোপুরি ভেঙে পড়ল দলটি। আক্রমণের ঝড় তুলে, প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল ম্যানচেস্টার সিটি। দুর্দান্ত জয়ে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা লড়াইয়ের নিয়ন্ত্রণ হাতের মুঠোয় নিল চ্যাম্পিয়নরা।

ম্যাচটি জিতে শিরোপা ভাগ্য পুরোপুরি নিজেদের হাতে নিতে চেয়েছিলেন পেপ গুয়ার্দিওলা। কোচের চাওয়া কী দারুণভাবেই না পূরণ করলেন সিটির খেলোয়াড়রা। ঘরের মাঠে বুধবার ৪-১ ব্যবধানে জিতল গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।

জোড়া গোল করে সিটির জয়ের নায়ক কেভিন ডে ব্রুইনে। একটি করে গোল করেন জন স্টোন্স ও আর্লিং হলান্ড।

সিটির বিপক্ষে এই নিয়ে টানা আট ম্যাচ হারল আর্সেনাল। দলটির বিপক্ষে সেই ২০১৫ সাল থেকে জয়ের স্বাদ পায়নি লন্ডনের ক্লাবটি।

এই হারের পর পয়েন্ট তালিকায় অবশ্য এখনও চূড়ায় আছে আর্সেনাল। ৩৩ ম্যাচে ২৩ জয় ও ৬ ড্রয়ে ৭৫ পয়েন্ট তাদের। ২ ম্যাচ কম খেলা সিটি পিছিয়ে আছে মাত্র ২ পয়েন্টে।

ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই গ্যালারি ভর্তি সমর্থকদের উৎসব শুরুর উপলক্ষ এনে দেয় সিটি। কিছুক্ষণের জন্য একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে যায় আর্সেনাল স্ট্যান্ড।

সপ্তম মিনিটে প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামলে প্রতি-আক্রমণে ওঠে স্বাগতিক দল। সতীর্থের লম্বা করে বাড়ানো বল মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হলান্ড ছোট পাসে খুঁজে নেন ডে ব্রুইনেকে। ওখান থেকে দারুণ ক্ষিপ্রতায় এগিয়ে প্রতিপক্ষের দুজনের মধ্যে দিয়ে কোনাকুনি গিয়ে বক্সের মুখ থেকে নিখুঁত শট নেন ডে ব্রুইনে। কিঞ্চিৎ বাঁক খেয়ে পোস্ট ঘেঁষে বল খুঁজে নেয় ঠিকানা।  

শুরুতেই গোল হজমের ধাক্কা ভালোমতোই লাগে আর্সেনাল শিবিরে। প্রতিপক্ষের চাপ সামলে তেমন কোনো পাল্টা আক্রমণেই উঠতে পারছিল না তারা।

হলান্ড-ডে ব্রুইনে জুটির দারুণ বোঝাপড়ায় ২৬তম মিনিটে আবারও আর্সেনাল শিবিরে ভীতি ছড়ায় সিটি। অনেকটা প্রথম গোলের মতোই তরুণ সতীর্থের পাস ধরে মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ শাণান বেলজিয়ান মিডফিল্ডার। তবে এবার শেষ দিকে গিয়ে হঠাৎই গতি কমিয়ে দেন তিনি। তারপরও ডিফেন্ডার গাব্রিয়েলকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে শট নেন ডে ব্রুইনে; কিন্তু ঠিক সময়ে পা বাড়িয়ে রুখে দেন আরেক ডিফেন্ডার বেন হোয়াইট।

দুই মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারতেন হলান্ড। তবে বক্সে একজনকে কাটিয়েও ঠিকমতো শট নিতে পারেননি তিনি। ৩২তম মিনিটে দুরূহ কোণ থেকে তার জোরাল শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।

৩৫তম মিনিটে উল্লেখযোগ্য প্রথম যাও একটা সুযোগ তৈরি করে আর্সেনাল। বক্সের বাইরে থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে কেবল হতাশাই বাড়ান থমাস পার্টি। পরের মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিলেন হলান্ড; বক্সের বাইরে থেকে তার নিচু শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়।

বিরতির একটু আগে ডে ব্রুইনের ফ্রি কিকে দারুণ কোনাকুনি হেডে স্কোরলাইন ২-০ করেন জন স্টোন্স। রেফারি শুরুতে অফসাইডের বাঁশি বাজালেও ভিএআরে পাল্টায় সিদ্ধান্ত।

প্রথমার্ধের বিবর্ণ আর্সেনাল বিরতির পর ঘুরে দাঁড়াবে কী, উল্টো ৫৪তম মিনিটে তৃতীয় গোল খেয়ে বসে। এই গোলেও জড়িয়ে হলান্ড-ডে ব্রুইনে জুটি। নরওয়ের ফরোয়ার্ডকে পাস দিয়ে এগিয়ে যান ডে ব্রুইনে, হলান্ড একটু এগিয়ে বক্সে আবার খুঁজে নেন ওই সতীর্থকে। এবার বল ধরে ডান পায়ের নিখুঁত শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ৩১ বছর বয়সী ডে ব্রুইনে।

ম্যাচের ফল নিয়ে অনিশ্চয়তা একরকম কেটে যাওয়ার কারণেই কি-না, এরপর আর তেমন আগ্রাসী ফুটবল খেলতে দেখা যায়নি সিটিকে। সেই সুযোগে আর্সেনাল কিছুটা চেষ্টা করে বটে।

৮৬তম মিনিটে একটা গোলের দেখাও পায় তারা। ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে জোরাল শটে গোলটি করেন ইংলিশ ডিফেন্ডার রব হোল্ডিং। শেষ পর্যন্ত যদিও তা কেবলই সান্ত্বনার ছোঁয়া হয়েই থাকে।

পাঁচ মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে রেকর্ড বইয়ের আরেক পাতায় নাম তোলেন হলান্ড। ফিল ফোডেনের পাস বক্সে ফাঁকায় পেয়ে গোলটি করেন তিনি।

গত গ্রীষ্মে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ছেড়ে সিটিতে যোগ দেওয়া হলান্ডের লিগে গোল হলো ৩৩টি। ৩৮ ম্যাচের প্রিমিয়ার লিগে এতদিন ৩২ গোল করে চূড়ায় ছিলেন লিভারপুলের মোহামেদ সালাহ।

প্রিমিয়ার লিগ যুগে এক আসরে অ্যালান শিয়েরার ও অ্যান্ডি কোলের ৩৪ গোলের যৌথ রেকর্ড ছুঁতে হলান্ডের চাই আর একটি।

অবিশ্বাস্য ছন্দে ছুটে চলা এই স্ট্রাইকারের মৌসুমে গোল হলো ৪৩ ম্যাচে ৪৯টি।

১৯ বছর পর আবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন ভাঙার শঙ্কায় ম্যাচ শেষে আর্সেনালের সবার চোখে মুখে ছিল বিধ্বস্ততার ছাপ। বিপরীতে, হলান্ড-গ্রিলিশরা মাঠ ছাড়ে চওড়া হাসিমুখে।

এপ্রিলের প্রথম দিনেও এবারের প্রিমিয়ার লিগের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখা হচ্ছিল আর্সেনালকে। ২৯ ম্যাচ খেলে সিটির চেয়ে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল তারা। চার সপ্তাহেরও কম সময়ে টানা চার ম্যাচের জয়শূন্যতায় (টানা তিন ড্রয়ের পর এই হার) তাদের সেই সম্ভাবনা এখন ফিকে হয়ে গেল।

সিটির সমান ৩১ ম্যাচে ৫৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। এক ম্যাচ কম খেলে তাদের সমান পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ৩৩ ম্যাচে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে অ্যাস্টন ভিলা।

দিনের আরেক ম্যাচে ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডকে ২-১ গোলে হারিয়েছে লিভারপুল। দারুণ এই জয়ে টটেনহ্যাম হটস্পারকে পেছনে ফেলে ষষ্ঠ স্থানে উঠেছে তারা। সমান ৩২টি করে ম্যাচ খেলা দুই দলের পয়েন্ট অবশ্য সমান ৫৩।

ব্যর্থতার ঘেরাটোপে বন্দি চেলসি হেরেছে আবারও। ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২-০ গোলে হারের পর ৩২ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে ১১ নম্বরে।