ফুটবলারদের কান্নার পাশে কোচের মুখে হাসি, তীব্র সমালোচনার মুখে ক্লিন্সমান

দক্ষিণ কোরিয়ার কোচ অবশ্য সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘এসব বড় কোনো ব্যাপার নয়।’

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2024, 07:30 AM
Updated : 7 Feb 2024, 07:30 AM

হৃদয়ভাঙা হারের যন্ত্রণায় তখন কাতর দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবলাররা। কেউ কেউ স্তম্ভিত হয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে, কেউ তাকিয়ে শূন্যে, কারও কারও চোখে পানি। গ্যালারিতে তো অশ্রুসজল চোখের অভাব নেই তখন। কিন্তু দলটির কোচ ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানের মুখে দেখা গেল হাসি। তিনি তখন হাসিমুখে অভিনন্দন জানাচ্ছেন প্রতিপক্ষ জর্ডানের কোচকে।

এশিয়ান কাপের সেমি-ফাইনাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বিদায়ের পর ক্লিন্সমানের হাসির এমন ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিকমাধ্যমে। সমর্থকেরা ক্ষোভও প্রকাশ করছেন। তীব্র সমালোচনা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমেও। ক্লিন্সমান অবশ্য সব সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, এসবকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। 

কাতারের আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার জর্ডানের কাছে ২-০ গোলে হেরে যায় ক্লিন্সমানের দল। আগে কখনোই এশিয়ান কাপের মূল পর্বে কোনো ম্যাচ জিততে না পারা দলটিই এবার স্বপ্নযাত্রায় পৌঁছে যায় ফাইনালে। 

ফাইনাল খেলার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ার সমর্থকদের বেদনার আগুনে যেন ঘি ঢেলেছে কোচের অমন হাসিমুখ। তবে সেসবকে পাত্তাই দিচ্ছেন না ক্লিন্সমান। 

“ম্যাচ যখন শেষ হয়, আমি অন্য দলের কোচকে সবসময়ই অভিনন্দন জানাই হাসিমুখে। এটাই তো উচিত। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাকে শুভেচ্ছা জানাতেই পারি। এটা বড় কোনো ব্যাপার নয়। এমন তো নয় যে আমি হাসিমুখে ঘুরে বেড়াচ্ছি ও মাঠের নানা জায়গায় যাচ্ছি।”

“আমাদের ম্যাচ হেরে যাওয়ার কারণ আছে এবং সেই কারণগুলি মেনে নিতেই হবে। প্রতিপক্ষ দল মাঠে নিজেদেরকে মেলে ধরেছে আমাদের চেয়ে বেশি। আমরা যদি এটা বলি, তাহলে সেই সম্মানও তাদেরকে দেওয়া উচিত।” 

এবারের আসরে দক্ষিণ কোরিয়ার সেমি-ফাইনালে ওঠাও কম আলোচনার খোরাক জোগায়নি। একের পর এক ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও শেষ সময়ের গোলে ম্যাচে ফেরা ও নাটকীয় সব জয়ের অধ্যায় রচনা করে শেষ চারে পা রাখে তারা। ম্যাচের পর ম্যাচে তাদের হার না মানা পারফরম্যান্সের কারণে তাদের এই ফুটবলকে সমর্থকেরা নাম দিয়েছিল ‘জম্বি ফুটবল।’ কিন্তু জম্বি ফুটবলের দম চলে গেল শেষ চারে। 

ম্যাচের ৭০ ভাগ সময় বল ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার পায়ে। প্রতিপক্ষের গোলমুখে তারা হানা দিয়েছে ৩৬ বার, জর্ডান তা পেরেছে মোটে ১৬ বার। কিন্তু আসল কাজটি করতে পারেনি কোরিয়ানরা। 

শেষ পর্যন্ত দলীয় লক্ষ্য পূরণ করতে না পারার দায় সবটুকুই নিচ্ছেন ক্লিন্সমান। 

“একটা দলের টুর্নামেন্ট কেমন কেটেছে, সেটির দায় অবশ্যই কোচের। পুরোপুরিই। আমাদের লক্ষ্য ছিল ফাইনালে খেলা এবং আমরা তা করতে পারিনি।”

“এটা মেনে নিতেই হবে। এই ধরনের ফলাফল মানতেই হবে। জর্ডান আজকে যেভাবে খেলেছে, এই ফলাফল তাদের প্রাপ্য ছিল।” 

দক্ষিণ কোরিয়ার এই দলকে তাদের দেশে বলা হচ্ছিল ‘সোনালি প্রজন্ম।’ কিন্তু সেই দল নিয়ে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন না ক্লিন্সমান। এটা নিয়ে প্রবল সমালোচনাও আছে কোরিয়ায়। তবে দায়িত্ব ছাড়ার কোনো ইচ্ছেই নেই ক্লিন্সমানের। 

“আমি কিছু করার পরিকল্পনা করছি না। আমার পরিকল্পনা হলো এই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সকে বিশ্লেষণ করা, দলের সঙ্গে কোরিয়াতে ফিরে যাওয়া, ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলে ভালোটুকু তুলে ধরা, খারাপগুলোও উপস্থাপন করা।” 

“আমি মনে করি, ভালো অনেক কিছুই এই টুর্নামেন্টে ছিল। এই দলটা গড়ে উঠছে। কঠিন একটি বাছাইপর্ব পেরিয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপের পথে আগামী কয়েক বছরে দলটাকে আরও গড়ে তোলার ব্যাপার আছে। আমাদের সামনে অনেক কিছু করার আছে এখনও।”