ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
৫৮ বছরের খরা কাটিয়ে বড় ট্রফি জিতে ইংল্যান্ড দলের প্রতি ফুটবলবিশ্বের সম্মান ফিরিয়ে আনতে চান কোচ গ্যারেথ সাউথগেট।
Published : 14 Jul 2024, 11:12 AM
কল্পনার জগৎ রূপকথা। সবসময়ই সেটি হয়ে থাকে চমকপ্রদ। গ্যারেথ সাউথগেট সেই মোহে বুঁদ হতে চান না। তিনি বরং বাস্তববাদী। তিনি ভালোবাসেন স্বপ্ন দেখতে এবং তাড়া করতে। তেমনই এক স্বপ্ন পূরণের খুব কাছাকাছি ইংল্যান্ড কোচ। একটি বড় ট্রফি জিতে ইংল্যান্ড দলের প্রতি গোটা ফুটবল বিশ্বের সম্মান ফেরাতে চান তিনি।
সেই চাওয়া পূরণ করার মঞ্চ প্রস্তুত। বার্লিনে রোববার ইউরোর ফাইনালের তার দল লড়বে স্পেনের বিপক্ষে।
সাউথগেটের নিজের জন্য এটি হতে পারে প্রাশশ্চিত্ত করার মঞ্চ। ১৯৯৬ ইউরোর সেমি-ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে টাইব্রেকারে তিনি গোল করতে ব্যর্থ হওয়ায় ওয়েম্বলিতে ৭৬ হাজার দর্শকের সামনে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ইংল্যান্ডের। কোচ হিসেবেও পরে সেই হৃদয়ভাঙার অভিজ্ঞতা তার হয়েছে। গত ইউরোর ফাইনালে ইতালির কাছে টাইব্রেকারেই হেরে গেছে ইংলিশরা। এবার সেসব হতাশা পেছনে ফেলার আরেকটি সুযোগ।
ফাইনালের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক হ্যারি কেইন ও কোচ সাউথগেটের সংবাদ সম্মেলনে অবধারিতভাবেই প্রসঙ্গটি উঠল। তবে কি এসব ভাগ্যেই লেখা আছে?
প্রশ্ন শুনে সাউথগেটের দিকে তাকিয়ে কেইন বললেন, “আপনি এটার উত্তর দিতে পারে… আপনি ছিলেন ৯৬ সালে, আমার তো তখন বয়স ছিল কেবল তিন!”
২৮ বছর আগে পেছন ফিরে তাকিয়ে নিজের সেই টাইব্রেকার ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে সাউথগেট একটু মজা করলেন শুরুতে , “হ্যাঁ, আমি ছিলাম, ভালোভাবেই ছিলাম… আমার মনে হয়, বার্লিনে সবচেয়ে জনপ্রিয় ইংলিশম্যানদের একজন আমি…!”
তবে পরক্ষণেই তিনি বললেন, রূপকথার গল্পে তার বিশ্বাস নেই। বরং নিজেদের হাত দিয়েই স্বপ্ন পূরণের গল্প লিখতে চান তারা।
“দেখুন, রূপকথায় বিশ্বাস নেই আমার, তবে স্বপ্ন দেখায় বিশ্বাস করি অবশ্যই এবং বড় স্বপ্ন দেখেছি আমরা। সেটির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব দেখেছি আমরা, তবে সেটি তো কাজে প্রমাণ দিতে হবে হবে।”
“ভাগ্যের কথা বললে, যেভাবে আমরা এগিয়েছি, শেষ মুহূর্তে গোল করা, পেনাল্টি, টাইব্রেকার, এসব আসলে যথেষ্ট নয়। ফাইনালে আমাদের কিছু করে দেখাতে হবে। যে পর্যায়ে পারফর্ম আমরা করতে পারি, তা করে দেখাতে হবে। জিততে পারলে অবশ্যই গল্পটি দারুণ। তবে সেটা আমাদের হাতেই এবং আমাদের পারফরম্যান্সই সবচেয়ে জরুরি ব্যাপার।”
সেটা জরুরি শুধু তার নিজের জন্য বা এই দলের জন্য নয়, ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসের জন্যও। বরাবরই বিশ্বের শীর্ষ ফুটবল জাতিগুলোর একটি তারা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে মনে করা হয় বিশ্বের সেরা লিগ। যুগে যুগে অসাধারণ সব ফুটবলারও ইংল্যান্ডের জার্সিতে খেলেছেন। তবে দল হিসেবে প্রাপ্তি খুবই সামান্য। সেই ১৯৬৬ সালে দেশের মাঠে বিশ্বকাপ জয়ই তাদের একমাত্র সাফল্য। সাউথগেট কোচ হয়ে আসার আগে তো ইউরোতে কখনও ফাইনালও খেলতে পারেনি তারা!
সাউথগেট জানালেন, এই বাস্তবতার উপলব্ধিই তিনি দলকে দিয়েছেন আগে। এরপর দলকে তৈরি করেছেন নিজেদেরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তাড়নায়।
“শুরু থেকেই মানসিকতা বদলানোর চেষ্টা করেছি আমরা। ফুটবল জাতি হিসেবে নিজেদের অবস্থান নিয়ে আরও সৎ হতে চেয়েছি। দর্শক হিসেবে আমি বিশ্বকাপে গিয়েছি, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে গিয়েছি, সেখানে ম্যাচের আগে বড় পর্দায় হাইলাইটস দেখেছি এবং সেসবের কোনোটিতেই আমরা ছিলাম না, কারণ তারা শুধু ফাইনালই দেখায়। আমাদের তা বদলানোর প্রয়োজন ছিল।”
“সবসময়ই প্রবল প্রত্যাশা ছিল আমাদেরকে ঘিরে। কিন্তু পারফরম্যান্সের সেটির প্রতিফলন পড়েনি। প্রত্যাশা এখনও অনেক উঁচুতে, তবে গত চারটি বড় টুর্নামেন্টের তিনটিতেই ভালো করার ধারাবাহিকতা তো আছে!”
২০১৬ ইউরোর শেষ ষোলোয় আইসল্যান্ডের কাছে বিব্রতকরভাবে হেরে বিদায় নেওয়ার পর ইংল্যান্ডের কোচের দায়িত্বে আনা হয় সাউথগেটকে। তার কোচিংয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনালে খেলে ইংল্যান্ড, গত বিশ্বকাপে পা রাখে কোয়ার্টার-ফাইনালে। যে দেশ আগে কখনোই ইউরোর ফাইনাল খেলেনি, তারাই এবার ফাইনালে উঠল টানা দ্বিতীয়বার।
গত এই আট বছরে বড় আসরে এমন ধারাবাহিকতা নেই ইউরোপের আর কোনো দেশের। দলের খেলার ধরন নিয়ে কোচ হিসেবে সাউথগেটকে অনেক অনেক সমালোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে ধারাবাহিক কিংবা সফল কোচও তাকে বলা যায়।
তবে ট্রফি না জেতা পর্যন্ত এসব রেকর্ড বা অর্জনের কোনো মূল্য নেই সাউথগেটের কাছে। শিরোপা জিতে ইংলিশ ফুটবলকে তিনি এনে দিতে চান প্রাপ্য মর্যাদা।
“অনেক রেকর্ড ভাঙা হয়ে গেছে। তবে আমরা জানি, এই কাজটা এখনও বাকি আছে। গোটা ফুটবল বিশ্বের সম্মান আদায় করে নিতে হলে এই ট্রফি আমাদের জিততে হবে।”
“ফাইনালে কী হতে পারে, এটা নিয়ে ভয় নেই আমার, কারণ সবকিছু দেখে ফেলেছি আমি। ছেলেদেরকে আমি ভয়ডরহীন দেখতে চাই, কারণ আমাদের যদি হারার ভয় না থাকে, তাহলে জয়ের সম্ভাবনাও বেশি থাকে।”