বিশ্বকাপ হতাশার পর ‘অবসর ভাবনা’ পেয়ে বসেছিল রোনালদোকে

পর্তুগালকে এখনও তার অনেক কিছু দেওয়ার বাকি আছে বলে বিশ্বাস পাঁচবারের ব্যালন দ'অর জয়ী এই ফুটবলারের।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2023, 11:15 AM
Updated : 23 March 2023, 11:15 AM

অনেক স্বপ্ন নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে শেষটা হয় একরাশ হতাশায়। ব্যক্তিগতভাবেও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর জন্য আসরটি ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। মনের কষ্টে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে ‘অবসরের চিন্তা’ পেয়ে বসেছিল বলে জানালেন তিনি। শেষ পর্যন্ত যদিও দেশের হয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এই তারকা ফরোয়ার্ড।

গত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার-ফাইনালে মরক্কোর বিপক্ষে হেরে শেষ হয় পর্তুগালের পথচলা৷ আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার রোনালদো আসরে করতে পারেন মাত্র একটি গোল। নকআউট পর্বে জায়গা হারান শুরুর একাদশে। ওই সময়ের কোচ ফের্নান্দো সান্তোসের সঙ্গে তার দ্বন্দের গুঞ্জনও শোনা যায়।

মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচে প্রথমার্ধেই পিছিয়ে পড়েছিল পর্তুগাল। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নামেন রোনালদো। কিন্তু তিনি পারেননি ব্যবধান ঘোচানোর, ম্যাচ শেষে অশ্রুসিক্ত চোখে মাঠে ছাড়েন পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার।

বয়স হয়ে গেছে, বিশ্বকাপ শুরুর পর বিতর্কিত ঘটনায় ভেস্তে যায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে চুক্তি। সব কিছু মিলিয়েই সময়টা ভীষণ খারাপ ছিল রোনালদোর জন্য। সব কিছুর প্রেক্ষিতে অনিশ্চয়তা জেগেছিল তার আন্তর্জাতিক ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

তবে সান্তোসের জায়গায় রবের্তো মার্তিনেস কোচ হয়েই জানান, তার পরিকল্পনায় আছেন ৩৮ বছর বয়সী এই ফুটবলার।

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বৃহস্পতিবার পর্তুগাল খেলবে লিখটেনস্টাইনের বিপক্ষে। আগের মতো নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড আছে রোনালদোর হাতেই।

ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন রোনালদো। সেখানেই এক পর্যায়ে ওঠে তার পেছনের ভাবনা। 

“আমি মিথ্যা বলব না। আমাদের জীবনে, একটা সময় সবকিছু পরিমাপ করতে হয়।”

“আমরা ভেবেছিলাম, আমি ও আমার পরিবার পেছন ফিরে চেয়েছিলাম, অনেক ভাবার পর আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাই যে, সমস্যা থাকলেও হার মানতে পারি না। পুরো বিষয়টা আমি নানাভাবে পর্যালোচনা করতে পেরেছিলাম। সেখান থেকে অনেক কিছু শিখেছিলামও।”

পর্তুগালের হয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ও উয়েফা নেশন্স লিগ জয়ী রোনালদো দেশকে আবারও শীর্ষ পর্যায়ে নিতে চান।

“ফিরে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। রবের্তো মার্তিনেস দেখিয়েছেন যে, তিনি আমার ওপর ভরসা রাখছেন। আমি সবসময় খেলতে চেয়েছি। আপনারা জানেন, তিনি সবার সঙ্গে এবং আমার সঙ্গেও কথা বলেছেন। আমি বুঝতে পেরেছি যে, জাতীয় দলকে আমার এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে।”

“আমি অনুভব করতে পারছি, আমি এটাই চাই। পর্তুগালকে আমি শীর্ষ স্তরে নিতে চাই। দলের যখনই আমাকে প্রয়োজন হবে, আমি সবসময় নিজেকে উজাড় করে দেব।”

বিতর্কিত এক সাক্ষাৎকারের জের ধরে বিশ্বকাপ চলাকালীন রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ইউনাইটেড। বিষয়টি নিয়ে এতদিন পর নীরবতা ভাঙলেন তিনি। বললেন, ওই ঘটনা থেকে শিখেছেন অনেক কিছু।

“মাঝে মাঝে পাশে কে আছে, তা দেখার জন্য কিছু পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কঠিন সময়ে দেখা যায় যে কে আপনার পাশে থাকে। আমার ক্যারিয়ারে খারাপ সময় গেছে, তা বলতে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে কোনো অনুশোচনা নেই।”

“ভালো করি বা না, জীবন এগিয়ে যায় এবং এটা আমার বেড়ে ওঠার অংশ। আমরা যখন পাহাড়ের চূড়ায় থাকি, তখন নিচে কী আছে, প্রায়ই তা দেখতে পাই না।”

ইউনাইটেডে পাট চুকিয়ে গত বছরের শেষ দিন সৌদি ক্লাব আল নাস্‌রে যোগ দেন রোনালদো। বিশ্ব ফুটবলে এখনও খুব একটা জনপ্রিয় নয় সৌদি প্রো লিগ। 

রোনালদো অবশ্য আশাবাদী এই লিগ নিয়ে। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকার বিশ্বাস, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের সেরা লিগগুলোর কাতারে চলে যাবে প্রতিযোগিতাটি।

“নিঃসন্দেহে এটা প্রিমিয়ার লিগের মতো নয়, আমি যদি তা বলি তাহলে মিথ্যা বলা হবে। তবে এটি দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ভালো ভালো দল আছে, লিগটা ভারসাম্যপূর্ণ, আরব খেলোয়াড়রা ভালো, বিদেশিরাও মানসম্পন্ন।”

“যদি তারা এই পরিকল্পনায় এগিয়ে যায়, তাহলে সম্ভবত পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে বিশ্বের চতুর্থ বা পঞ্চম সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক লিগ হয়ে যাবে।”