আবাহনী-মোহনবাগান দুই দলের কাছেই ‘ফাইনাল’

দুই দলেরই লক্ষ্য প্লে-অফের বৈতরণী পেরিয়ে এএফসি কাপের ‍মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়া। জয় ছাড়া নেই কোনো বিকল্প। আবাহনী ও মোহনবাগানের কাছে ম্যাচটি হয়ে উঠেছে অলিখিত ‘ফাইনাল’। দুই বাংলার দুই ঐতিহ্যবাহী দলের দ্বৈরথ তাই ছড়াচ্ছে উত্তাপও।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2022, 02:50 PM
Updated : 18 April 2022, 02:50 PM

কলকাতার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মুখোমুখি হবে দুই দল। বাড়ির উঠানে সমর্থকদের সামনে খেলবে মোহনবাগান, অতিথি আবাহনী। মাঠের লড়াইয়ের আগে সম্প্রীতির গানের বদলে বাজছে যুদ্ধের দামামা।

বাছাইয়ের দ্বিতীয় ধাপ মোহনবাগান পেরিয়ে এসেছে দাপুটে জয়ে; শ্রীলঙ্কার দল ব্লু স্টারকে ৫-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়ে। আবাহনী প্লে-অফের মঞ্চে উঠে এসেছে ওয়াকওভার পেয়ে; মালদ্বীপের দল ভালেন্সিয়া আর্থিক সংকটে খেলতে না আসায় বিনা বাধায় দ্বিতীয় ধাপ পার হয় মারিও লেমোসের দল।

কিন্তু এবার কঠিন পরীক্ষায় বসতে হবে তাদের। পরিসংখ্যানও আবাহনীর পক্ষে নেই। ২০১৭ সালে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে তাদের দেখা হয়েছিল মোহনবাগানের সঙ্গে। কলকাতায় ৩-১ গোলে হারের পর ফিরতি লেগে ঢাকায় ১-১ ড্র করেছিল ‘আকাশী-নীল’রা। লেমোসের ছকে তাই অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে।

“সবশেষ ম্যাচ আমাদের জন্য শিক্ষা, ওই ম্যাচে আমরা কিছু ভুল করেছিলাম এবং ওই ভুল থেকে আমরা শিখতে পারি। এটা সম্পূর্ণ আলাদা প্লে-অফ ম্যাচ, আগেরবার দুই লেগের ম্যাচ ছিল, এবার এক লেগের। তাই এ ম্যাচটি ফাইনালের মতো এবং জিততে হলে আমাদের সবটুকু নিংড়ে দিতে হবে।”

মোহনবাগানের আক্রমণভাগ যথেষ্ট শক্তিশালী। মানভির সিং, ডেভিড উইলিয়ামস, জনি কুয়াকো ব্লু স্টারকে উড়িয়ে দেওয়ার ম্যাচে জালের দেখা পেয়েছেন। আছেন ইন্ডিয়ান সুপার লিগে আট গোল করা লিস্টন কোলাকোও। ক্ষুরধার ফরোয়ার্ডদের জায়গা ছেড়ে না দেওয়ার বার্তাও সোমবার সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছেন আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ।

“অবশ্যই মোহনবাগান ভালো দল এবং আমি বিশ্বাস করি, তাদের বিপক্ষে জিততে হলে আমাদের সেরা ফুটবল খেলতে হবে। আমাদের গোছালো এবং শৃঙ্খল থাকতে হবে। মোহনবাগানকে খেলার জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। সবমিলিয়ে কন্ডিশন ভালো এবং খেলার জন্য প্রস্তুত আমরা।”

আইএসএলে গত মৌসুম ভালো কাটেনি প্রতিযোগিতার তিনবারের চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগানের। তৃতীয় স্থানে থেকে শেষ করেছিল তারা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে সে তুলনায় ভালো অবস্থায় আছে আবাহনী। প্রথম পর্ব লেমোসের দল শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানে থেকে। তাই প্রতিপক্ষ কোচ হুয়ান ফের্নান্দোস সমীহ করছেন জীবন-জুয়েলদের। এই স্প্যানিশ কোচের চোখে ম্যাচটি পাচ্ছে ফাইনালের মর্যাদা।

“এ ম্যাচটাও ফাইনালের মতো এবং আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাঠে আমরা যেন মনোযোগ না হারায়। আবাহনী জমাট দল, আমার জানামতে তারা তিন-চারজন নিয়ে আক্রমণে ওঠে না। তাদেরকে চাপ দিতে হলে আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে হবে, বল পায়ে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। ম্যাচটা মোটেও সহজ হবে না, জিততে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে আমাদের।”

আবাহনীর জন্য সবচেয়ে দুর্ভাবনা আক্রমণভাগের মূল সেনানি দোরিয়েলতন গোমেজ নাসিমেন্তোকে নিয়ে অনিশ্চয়তা। চোটে আক্রান্ত এই ফরোয়ার্ডকে পাওয়া যাবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। লিগের প্রথম পর্বে ৭ গোল করা এই ব্রাজিলিয়ানের শূন্যতা পূরণে উত্তর বারিধারা থেকে নেদো তুর্কোভিচকে দলে টেনেছে আবাহনী।

৬ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা এই বসনিয়া-হার্জেগোভিনার ফরোয়ার্ড লিগে চার গোল করেছেন। কিন্তু তাকে লেমোস পরখ করে নিতে পারেননি ভালেন্সিয়া না আসায়। নোদো-জীবন-জুয়েলের সামর্থ্য আছে দলকে পথ দেখানোর। লিগে পাঁচ গোল করা কোস্টা রিকার দেনিয়েল কলিনদ্রেস সোলেরা পারেন যেকোনো মুহূর্তে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে। মোহনবাগান অধিনায়ক প্রিতম কোটাল তাই আবাহনীকে নিয়ে সতর্ক।

“আমি মনে করি, তারা খুবই ভালো দল। তাদেরকে সম্মান করি। তারা তাদের খেলা খেলবে, আমরা আমাদের খেলা খেলব। সেরা দলটাই জিতবে।”

ভারতের গণমাধ্যমে অবশ্য নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মধ্যেই ম্যাচ বের করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মোহনবাগানের খেলোয়াড় কোয়াকো। অবশ্য আবাহনীদের বিদেশিদের নিয়ে সাবধান থাকার বার্তাও দিয়েছেন।

“আমাদের প্রথম লক্ষ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ম্যাচ শেষ করে দেওয়া। প্রতিপক্ষ নিয়ে আমরা ‍খুব বেশি জানি না এবং এই বিষয়টি সবসময়ই জটিল (ট্রিকি)। শুনেছি, ওদের ভালো বিদেশি খেলোয়াড় আছে, কঠিন লড়াই হবে।”

ফিনল্যান্ডের মিডফিল্ডার কোয়াকোর সঙ্গে অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে সুর মেলাননি প্রিতম। ২০১৯ সালে সল্ট লেকেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে হারতে হারতে ড্র করেছিল শক্তিশালী ভারত। সেই স্মৃতিও টাটকা এই ডিফেন্ডারের কাছে।

“আমরা জাতীয় দল বা ক্লাব পর্যায়ে যখনই খেলি না কেন, বাংলাদেশ দল, তাদের ক্লাব আমাদের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ থাকে। তবে এবার ভিন্ন ম্যাচ….আশা করি আমরা জিতব।”

প্রিতমের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব আবাহনীর জীবনের। কলকাতায় আবাহনী দল নোঙর ফেলার পর থেকেই শোনা যাচ্ছে ‘জীবনের দুঃসময়ে’ প্রিতমের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার গল্প। গত বছরের মাঝামাঝি চোট পেয়ে জীবন ভারতে চিকিৎসা নেওয়ার সময় তাকে খুব সাহায্য করছিল প্রিতম।

তবে, সল্ট লেকে বন্ধুত্বকে এক পাশে রেখে জয়ের জন্য লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন আবাহনী অধিনায়ক জীবন।