এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না: নাদাল

ম্যাচের পরতে পরতে ছড়াল উত্তেজনা। ক্ষণে ক্ষণে বদলাল রঙ। প্রথম দুই সেট হারের পর রাফায়েল নাদাল ঘুরে দাঁড়ালেন দোর্দণ্ড প্রতাপে। চোটের কারণে মাস তিনেক আগে যিনি নিজেই জানতেন না আবার টেনিস খেলতে পারবেন কি-না, সেই নাদাল গড়লেন নতুন ইতিহাস। পাঁচ সেটের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে দানিল মেদভেদেভকে হারিয়ে জিতে নিলেন রেকর্ড ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা। এভাবে ফিরে এসে এমন অর্জনের পর যেন অনুভূতি প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না এই স্প্যানিশ তারকা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2022, 05:17 PM
Updated : 30 Jan 2022, 05:17 PM

মেলবোর্নে রোববার পাঁচ ঘণ্টা ২৪ মিনিটের মহাকাব্যিক লড়াইয়ে ২-৬, ৬-৭ (৫-৭), ৬-৪, ৬-৪, ৭-৫ গেমে জিতে নাদাল উঁচিয়ে ধরেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফি। রজার ফেদেরার ও নোভাক জোকোভিচকে ছাড়িয়ে পুরুষ এককে সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ড নিজের করে নেন ৩৫ বছর বয়সী তারকা।

এতদিন টেনিসের ‘বিগ থ্রি’ নামে পরিচিত এই তিন তারকারই মেজরের ট্রফি ছিল সমান ২০টি করে। নাদাল এবার এককভাবে উঠলেন চূড়ায়।

মেলবোর্নে পরপর দুই বছর ফাইনালে হেরে গেলেন রাশিয়ান তারকা মেদভেদেভ। মাঝে গত বছর ইউএস ওপেনে তিনি জেতেন ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম।

জয়ের প্রতিক্রিয়ায় শুরুতেই নিজের চেয়ে ১০ বছরের ছোট মেদভেদেভকে প্রশংসায় ভাসালেন নাদাল।

“আমি জানি এটা কঠিন মুহূর্ত- দানিল তুমি অসাধারণ, তোমার মতো আমিও এই অবস্থানে ছিলাম। আমার কোনো সন্দেহ নেই এই ট্রফিটি ক্যারিয়ারে তুমি কয়েকবার পাবে, কারণ তুমি অসাধারণ।”

বাম পায়ের চোটে গত বছরের শেষ সাত মাসে কেবল একটিই টুর্নামেন্ট খেলতে পারেন নাদাল। গত ডিসেম্বরে আবু ধাবিতে মুবাদালা বিশ্ব টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে খেলে দেশে ফেরার পর তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন এবং জ্বরে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন গত পাঁচ মাসের মধ্যে তার মাত্র দ্বিতীয় প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্ট। আর এ মাসের শুরুর দিকে মেলবোর্ন পার্কে একটি প্রস্তুতিমূলক টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন তিনি।

চোটে ক্যারিয়ারই যেখানে পড়ে গিয়েছিল শঙ্কায়, সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি জিতলেন ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম। নাদাল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন সমর্থক ও প্রতিবারের প্রতি।

“জানি না কী বলব। এটা আমার জন্য অসাধারণ এক মুহূর্ত। সত্যি বলতে দেড় মাস আগেও আমি জানতাম না, আবার টেনিস খেলতে পারব কি-না। আর আজ এই ট্রফি নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার কাছে এখানে ফিরে আসার অর্থ কী, তা বোঝাতে পারব না। আপনারা অসাধারণ, আপনাদের সকলের ভালোবাসা এবং সমর্থনের জন্য অনেক ধন্যবাদ।”

“নিঃসন্দেহে এটা আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আবেগময় মুহূর্তগুলোর একটি। গত তিন সপ্তাহ আমি যে সমর্থন পেয়েছি, তা আমার হৃদয়ে থাকবে। অনেক, অনেক ধন্যবাদ।”

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে এর আগে কেবল তিনবার দুই সেট হারের পর ম্যাচ জিততে পেরেছিলেন নাদাল। এবারের আগে সবশেষটি ছিল ২০০৭ উইম্বলডনের চতুর্থ রাউন্ডে, আরেক রাশিয়ান মিখাইল ইয়োজনির বিপক্ষে।

নাদাল-মেদভেদেভের লড়াইটি ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘতম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল, ২০১২ সালে মেলবোর্নেই জোকোভিচের বিপক্ষে নাদালের হারের ম্যাচটির চেয়ে ৩০ মিনিট কম।

এবারের আগে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে একবারই শিরোপা জিততে পেরেছিলেন নাদাল, সেই ২০০৯ আসরে। আরেকটির অপেক্ষা ফুরাল এক যুগ পর।

এখন নিজের মাঝে তিনি প্রাণশক্তি খুঁজে পাচ্ছেন নতুন করে। বললেন, আগামী বছরও চেষ্টা করবেন মেলবোর্নে ফেরার।

“দেড় মাস আগে আমি ভেবেছিলাম, এটাই হয়তো আমার শেষ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। কিন্তু এই শিরোপা আমাকে সামনেও খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক শক্তি দিয়েছে।”

“এই মুহূর্তে সত্যিই আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আগামী বছর আবার এখানে আসার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাব। আপনাদের ধন্যবাদ এবং শিগগিরই দেখা হবে।”