কলিনদ্রেস বললেন ‘সাবাশ’, মারিও লেমোসের কাছে ‘বিশেষ কিছু’

শেষের বাঁশি বাজতেই শুরু হলো আবাহনীর উদযাপন। রাকিব-কলিনদ্রেসরা একে অন্যকে আলিঙ্গনে বাঁধলেন। নিজেদের মতো করে গানের তালে তালে নাচলেন মামুনরা। বৃত্ত এঁকে ঘুরে ঘুরে উদযাপনের পর কোচ মারিও লেমোস দলবল নিয়ে ছুটলেন গ্যালারির দিকে। সেখানে সমর্থকদের সঙ্গে ফেডারেশন কাপের দ্বাদশ শিরোপা জয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিলেন তারা। মাঠের ভেতরে অন্যপ্রান্তে তখন ভিন্ন চিত্র। প্রথম শিরোপা জয়ের খুব কাছাকাছি এসে আরও একবার ব্যর্থ হওয়ার হতাশায় মুখ ঢেকে বসে ছিলেন রহমতগঞ্জের চিজোবা-তুষাররা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2022, 03:02 PM
Updated : 9 Jan 2022, 03:48 PM

কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে রোববার ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ২-১ গোলে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস অ্যান্ড সোসাইটিকে হারিয়েছে আবাহনী। ২০১৯-২০ মৌসুমে রহমতগঞ্জের কাছে হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়ে দুই মৌসুম পর এ প্রতিযোগিতার শিরোপাও ফিরে পেয়েছে আকাশী-নীলরা।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে রাকিব হোসেনের পাস ধরে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের প্লেসিং শটে আবাহনীকে এগিয়ে নেন কোস্টা রিকার ফরোয়ার্ড দেনিয়েল কলিনদ্রেস সোলেরা। দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রাকিব। ৭০তম মিনিটে ফিলিপ আজাহর গোলে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি রহমতগঞ্জের।

জয়ের উচ্ছ্বাসে পুরোপুরি ভেসে যাচ্ছেন না লেমোস। দলের প্রথমার্ধের খেলায় সন্তুষ্ট নন এই পর্তুগিজ কোচ। চোটের কারণে মোহাম্মদ হৃদয়, সুশান্ত ত্রিপুরা, দোরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তো ও রাফায়েল অগাস্তো সান্তোস দি সিলভাকে না পাওয়ায় চাপ অনুভব করার কথাও জানালেন তিনি।

“হৃদয়, সুশান্ত, দোরিয়েলতন ও রাফায়েল এই চারজনকে আমরা পাইনি। রাফায়েল আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তার অনুপস্থিতিতে আমরা প্রথমার্ধে ভুগেছি। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভালো খেলেছি। প্রথমার্ধে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না, সে তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে নিয়ন্ত্রণ আরও বেশি ছিল।”

“জানতাম রাফায়েল ও দেরিয়েলতনকে পাব না। তাই গোলের জন্য বক্সের কাছাকাছি কলিনদ্রেসকে খেলিয়েছি। এটা আসলেই কঠিন ম্যাচ ছিল। আমিও চাপ অনুভব করেছি। কখনও কখনও আপনি যদি শিরোপা না জিতেন, তাহলে নিজের প্রতি দ্বিধা জাগবে। এই শিরোপা তাই আমার কাছে বিশেষ কিছু।”

মায়ের অসুস্থতার খবর জেনে খেলতে নেমেছিলেন কলিনদ্রেস। দলের জয়ের নায়ক হয়ে সে বিষয় নিয়ে অবশ্য কথা বলতে চাননি। বাংলায় ‘সাবাশ’ বলে আবাহনী সমর্থকদের বার্তাও দিলেন কোস্টা রিকার হয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপ খেলা এই ফরোয়ার্ড।

“আমি সুযোগ পেয়েছি এবং সেটা কাজে লাগিয়েছি। মাকে নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আবাহনীতে এবং বাংলাদেশে আমার ভালো সময় কাটছে। (আবাহনী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলব) সাবাশ, সাবাশ।”

ফাইনালে কলিনদ্রেসের গোলের পথ তৈরি করে দিয়েছেন। নিজেও গোল করেছেন। রাকিবের উচ্ছ্বাস তাই বাধভাঙা।

“টানা দুটি টুর্নামেন্ট জিতলাম। আমার কারিয়ারে এটা প্রথম। আমি খুব আনন্দিত। আমি ট্রফি জেতার জন্য এখানে এসেছি। বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে গোল পেয়েছি। আজও পেলাম। আমি গোল করতে চাই নিয়মিত। যে কোনো ফাইনাল ম্যাচে গোল করাটা খুব কঠিন। আমি সেটা করতে পেরেছি। আজ খেলতে নামার আগে কোচ বলেছেন, রাফায়েল নেই, দোরিয়েলতন নেই, তোমার ওপর অনেক দায়িত্ব। আমি সেটা পেরেছি। কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে।”

ফাইনালের সেরা ও টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের মুকুট জিতেছেন কলিনদ্রেস। চারটি করে গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা আবাহনীর দোরিয়েলতন গোমেস রদ্রিগেস ও রহমতগঞ্জের ফিলিপ আজাহ। কিন্তু ফাইনালে এক গোল করলেও তিনি দলকে জয় এনে দিতে পারেননি। রহমতগঞ্জ কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানীর কণ্ঠেও ফুটে উঠল হতাশা।

“ফুটবল গোলের খেলা। ভাগ্যেরও খেলা। আমরা দুটি গোল উপহার দিয়েছি। আমরা প্রথমার্ধে আধিপত্য করেছি, কলিনদ্রেসকে খেলার সুযোগ দেইনি। সে একটা সুযোগ পেয়ে কাজে লাগিয়েছে। সানডে (চিজোবা) গত দুই বছর যেভাবে খেলছে, আজ সেভাবে খেলতে পারেনি। চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। আমি এবার লিগ নিয়ে আশাবাদী; লিগে রহমতগঞ্জ উজ্জীবিত হয়ে খেলবে।”