বাংলাদেশকে ‘কিছু ফিরিয়ে’ দিতে চান লেমোস

প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় মেলেনি। অনুশীলনেও একসঙ্গে পাননি পূর্ণাঙ্গ দল। ব্যক্তিগত কারণ, চোট ও পাসপোর্ট সমস্যা মিলিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা পাঁচ ফুটবলারকেও পাচ্ছেন না মারিও লেমোস। তবুও জাতীয় ফুটবল দলের এই অন্তর্বর্তীকালীন কোচ স্বপ্ন দেখছেন দারুণ কিছুর। বাংলাদেশকে ‘কিছু ফিরিয়ে’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিলেন প্রত্যয়ী কণ্ঠে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2021, 01:33 PM
Updated : 4 Nov 2021, 02:02 PM

শ্রীলঙ্কার প্রাইম মিনিস্টার মাহিন্দা রাজাপাকসে ট্রফিতে আগামী ৮ নভেম্বর সিশেলসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ। ১১ নভেম্বর মুখোমুখি হবে মালদ্বীপের। তিন দিন পর প্রতিপক্ষ স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। এই টুর্নামেন্ট সামনে রেখে হঠাৎ করে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পাওয়া লেমোস কাজ শুরু করেছেন গত ২৫ অক্টোবর থেকে।

২০১৭-১৮ মৌসুমে জাতীয় দলের ফিটনেস কোচ ছিলেন লেমোস। ২০১৮ সাল থেকে তিনি আবাহনী লিমিটেডের দায়িত্বে। দলটি প্রথমবারের মতো এএফসি কাপের জোনাল সেমি-ফাইনাল খেলেছে তার হাত ধরেই। আর এবার প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের কোচ হয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী এই পর্তুগিজ। কোচ হিসেবে এই দেশে এসে যা পেয়েছেন, তার প্রতিদান দেওয়ার তাগিদ অনুভব করার কথা বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে জানাতে ভোলেননি লেমোস।

“আমি চিন্তিত নই, কিন্তু এটা অনেক বড় দায়িত্ব। আগেও বলেছি এখানকার মানুষের সঙ্গে, খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমার একটা সংযোগ রয়েছে। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে এখন আমার ওপর অনেক বড় দায়িত্ব। আমি তাদেরকে কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই। দেখুন, আবাহনী এবং জাতীয় দল আমার ক্যারিয়ারকে অন্য একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশের কাছে আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। তাই আমারও দায়িত্ব আছে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার। সেটা আমি দিতে চাই।”

“এর আগেও সাক্ষাৎকারে বলেছি, আমি সেরাটা দিতে চাই, এ কারণে আমি একটু চিন্তিতও; এটা অনেক বড় দায়িত্ব। কিন্তু আমি প্রতিটি দিন উপভোগ করেছি। আমি লুজার নই, আমি উইনার। চার বছর আগে আমি এই দলের ফিটনেস কোচ ছিলাম। এখন প্রধান কোচ। ঘরোয়াতে আমি কিছু জিতিনি, কিন্তু আমার মধ্যে কিছু আছে। তাই আমি বিশ্বাস করি, আমি শ্রীলঙ্কায় জিততে পারি।”

সবশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে রাউন্ড রবিন লিগ পেরুতে পারেনি বাংলাদেশ। সাফের দুই প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গে চার জাতি টুর্নামেন্টে দেখা হতে যাচ্ছে আবারও। ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পরের ১৮ বছরে মালদ্বীপকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। গত সাফের দেখাও হেরে যায় দল।

অবশ্য সাফে শ্রীলঙ্কাকে ১-০ গোলে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবারের প্রতিযোগিতা শ্রীলঙ্কার মাঠে। শ্রীলঙ্কায় ২০০৮ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এবং ২০১০ সালের এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে সবশেষ দুই ম্যাচে হেরেছিল দল। লেমোসও মানছেন এবারের পথও মসৃণ নয়।

“ফুটবল কখনই সহজ নয়, যদি আমরা দুর্বল মানসিকতা নিয়ে যাই, তাহলে কেউ আমাদের কিছু দিবে না। যদি বিষয়টাকে আমরা সহজভাবে নেই…কোনো পেশাদার খেলোয়াড় ফুটবলকে সহজভাবে নেয় না। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, এএফসি কাপ বা আন্তর্জাতিক ফুটবল, যেটার কথাই বলুন না কেন, আন্তর্জাতিক ফুটবল সবচেয়ে কঠিন, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমরা কিছু করতে পারব।”

“আমরা জানি কোনো কিছু জেতা সহজ নয়, কিন্তু বিশ্বাস করি আমরা জিততে পারব। কেননা, এটা ফুটবল এবং আমাদেরও সুযোগ আছে। যদি আমরা সেরাটা দিতে পারি, ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারি, যদিও ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আমাদের কৌশল ভিন্ন হবে, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের জয়ের সুযোগ আছে। কিন্তু আবারও বলছি, এটা সহজ নয়।”

“১৮ বছর মালদ্বীপকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ছেলেদের এই বার্তাই দিতে পারি-ভেবে দেখ, মালদ্বীপকে হারানো কতটা দারুণ বিষয় হতে পারে। লেটস মেক হিস্টোরি। এএফসি কাপে আমরা কখনও জোনাল সেমি-ফাইনালে খেলিনি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানে খেললাম। এএফসি কাপ আমাকে সেই আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, কেন আমরা পারব না? আমি মনে করি, আমার এই মানসিকতাই দলের মধ্যে ছড়িয়ে দিব, অতীত নিয়ে পড়ে থাকব না। কেন আমরা নতুন কিছু করতে পারব না? আমি কিছু করে দেখাতে চাই।”

প্রস্তুতির কমতি মানসিক শক্তি দিয়ে পূরণ করে নিতে চান লেমোস। কিছু করতে পারার আত্মবিশ্বাসের বীজ তিনি বুনে দিচ্ছেন দলের মধ্যে।

“খুব বেশি সময় পাইনি। কিন্তু আমি মনে করি, আমরা সাত দিনে ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। টুর্নামেন্টের দিকে তাকিয়ে আছি। আগেও বলেছি, প্রতিটি ম্যাচে আমরা লড়াই করতে চাই, আমরা প্রতিটি ম্যাচ জয়ের চেষ্টা করব। এই মানসিকতা আমাদের খেলোয়াড়দের আছে। অবশ্যই এটা সহজ নয়, কিন্তু টিম স্পিরিট অনেক উঁচুতে।”

“অনুশীলনের কয়েকটা দিন ভালো গেছে। আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমি মনে করি, এই টুর্নামেন্টে আমাদের অভিযান সুন্দর হবে। প্রমাণ করা বা না করা নয়, আমাদের দলটা অভিলাষী; শ্রীলঙ্কায় আমরা কিছু করতে যাব। খেলোয়াড়দের জন্য এটাই আমার বার্তা।”

সবশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা ফুটবলারদের মধ্যে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে নেই বিশ্বনাথ ঘোষ ও মতিন মিয়া। সোহেল রানা ও বিপলু আহমেদ চোটের কারণে এবং পাসপোর্ট ঝামেলায় নেই ফিনল্যান্ড প্রবাসী ডিফেন্ডার কাজী তারিক রায়হান। চোট কাটিয়ে উঠলেও মাঝে কোনো ম্যাচ না খেলায় ফিরতে পারেননি মিডফিল্ডার মাশুক মিয়া জনি। অভিজ্ঞদের হারানো ধাক্কা মানলেও লেমোস আস্থা রাখছেন বর্তমান দলে।

“তারা অবশ্যই জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। কিন্তু এটাই ফুটবল এবং আমি কোচ…আমাকেই সমাধান খুঁজে নিতে হবে। নতুন যাদের ডেকেছি, এখন তারা সুযোগ পাবে। আমার আত্মবিশ্বাসের জায়গা হচ্ছে, যে ২৩ জন খেলোয়াড়কে আমি নিয়েছি, তারা এই দলে থাকার যোগ্য। কে নেই, এটা আমার ভাবনায় নেই। আমি জামাল, ইয়াসিন আরাফাত, টুটুল এদের নিয়ে ভাবছি, এটাই আমার কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে।”

উজবেকিস্তানে অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপের বাছাই খেলা দলের সাত জন শ্রীলঙ্কায় গিয়ে দলের সঙ্গে যোগ দিবে। সেখানে গিয়ে পুরো দল নিয়ে প্রস্তুতির জন্য মাত্র দুদিন সময় পাবেন লেমোস। এমন সমস্যাসংকুল পরিস্থিতির মধ্যেও সাফল্য পাওয়ার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন তিনি।

“এটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জের এবং আমি ফুটবলকে এভাবেই দেখি। জয় ব্যতীত অন্য কোনো কিছুর জন্য আমি প্রস্তুত হতে পারি না। সমস্যা থাকবে এবং সেগুলো নিয়েই আমাকে জয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আমি এভাবেই দলকে প্রস্তুত করি এবং কোচ হিসেবে সবকিছু এভাবেই ভাবি।”

“ফুটবল এমনই…কখনও আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। এখানে আমি দায়িত্ব নিয়ে এসেছি, আমার কোনো কিছু আড়াল করার নেই এবং আমি সেটা করতে চাই না। আমি জিততে চাই এবং এটা বলতে আমার কোনো ভয় নেই।”