সাফে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য বাংলাদেশের

আরও একটি সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ দোরগোড়ায়। পিছু ফিরে তাকালে হতাশাই বেশি। তারপরও নতুন স্বপ্ন সঙ্গী করে ছক কষতে শুরু করেছেন জেমি ডে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে আলোচনায় তুলে ধরেছেন সামনের দিনগুলোর করণীয়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2021, 06:38 PM
Updated : 16 August 2021, 06:40 PM

জাতীয় দলের পাইপলাইনে নতুন খেলোয়াড় তেমন না থাকা থেকে শুরু করে নাইজেরিয়ান থেকে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যাওয়া এলিটা কিংসলের খেলার সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপই; গত চার আসরের হিসেবে যেটি হতাশার এক গল্পই হয়ে আছে বাংলাদেশের জন্য।

সাফের ত্রয়োদশ আসরটি হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশে। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সেটি হবে মালদ্বীপে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে পাঁচ দল নিয়ে হবে আসরটি। ভুটান সরে দাঁড়ানোয় পাঁচ দল নিয়ে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে হবে খেলা। পয়েন্ট টেবিলের সেরা দুই দল উঠবে শিরোপার লড়াইয়ে।

২০০৩ সাফের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ ২০০৫ সালে হয়েছিল রানার্সআপ। এরপর থেকেই শুরু পেছনের দিকে ছুটে চলা। পরের চার আসরের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার বিষাদ হয়েছে সঙ্গী। মালদ্বীপের আসর সামনে রেখে আবারও নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে দল। বাফুফে প্রধানের সঙ্গে সোমবার মিটিংয়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কোচ জেমি অবশ্য অবিশ্বাস্য কোনো কিছুর আশা দেখাননি।

মালদ্বীপে যাওয়ার আগে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। কিরগিজস্তানের জাতীয় দল ও অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে এবং ফিলিস্তিনের বিপক্ষে। ফিফার সবশেষ র‌্যাঙ্কিংয়ে কদিন আগে চার ধাপ পিছিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের (১৮৮তম) চেয়ে কিরগিজস্তান (১০১তম) ও ফিলিস্তিন (১০২তম) অনেক এগিয়ে। শক্তিশালী দল দুটির বিপক্ষেই আগে পরীক্ষায় বসতে উন্মুখ জেমি।

“কিরগিজস্তান, ফিলিস্তিনের বিপক্ষে খেলা কঠিন হবে। ওদের র‌্যাঙ্কিং ভালো বিনা কারণে হয়নি। ওদের ভালো খেলোয়াড় আছে বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। প্রস্তুতির দিক থেকে এটা আমাদের জন্য ভালো চ্যালেঞ্জ ও পরীক্ষা হবে। সত্যি কথা হলো, বাস্তবিক অবস্থান থেকে আমরা এই সব ম্যাচ জেতার আশা করতে পারি না। কিন্তু আমি ভালো পারফরম্যান্স চাই।”

“আমরা হয়তো ভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল নিয়ে চেষ্টা করতে পারি। ভালো দলের বিপক্ষে খেলে এই পদ্ধতি আমরা সাফেও হয়তো ব্যবহার করতে পারব। কম সময়ের মধ্যে এই তিন ম্যাচে ছেলেদের সামর্থ্যের একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে। তবে আমি মনে করি, সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে এটা ভালো একটি পরীক্ষা। যদি এই তিন ম্যাচের পারফরম্যান্স আমরা সাফে নিয়ে যেতে পারি, প্রতিযোগিতার জন্য আমাদের খুব ভালো প্রস্তুতি হবে।”   

সালাউদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকেও ঘুরে ফিরে সাফে অতীতের ব্যর্থতা, আগামীর পরিকল্পনা উঠে এসেছে বলেও জানালেন জেমি। হতাশার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কিছু বিকল্প’ পথ ভেবে রাখার কথাও জানালেন এই ইংলিশ কোচ।

“এখানে কোনো ইস্যু নেই। আমরা একই অবস্থানে আছি। অবশ্যই আমরা সবাই জয় চাই এবং বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ভালো ফলটাই চাই। এর জন্য বিকল্পগুলো দেখছি, কোথায় উন্নতি করা যায়, কীভাবে খেলোয়াড়দের সাহায্য করা যায়, তুলনামূলক ভালো দলের বিপক্ষে কীভাবে ওদের পারফরম্যান্সের উন্নতি করা যায়। ভালো আলোচনা হয়েছে। এখানে সব বিষয়ই এসেছে। আমার কাজ হলো দলকে ঠিক পথে রাখা এবং সাফে ভালো করা।”

“পরের তিন মাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এবং সাফে ইতিবাচক ফল পাওয়ার জন্য আমরা যেটা প্রয়োজন বলে অনুভব করেছি, সেগুলো নিয়ে খোলাখুলিভাবে আলোচনা হয়েছে।”

“অবশ্যই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, এটা সবার মনের ভেতরেই আছে যে ওই টুর্নামেন্টে ভালো করতে হবে। অবশ্যই সেপ্টেম্বেরের ম্যাচগুলো খুব কঠিন হবে। আমার মনে হয়, সাফের জন্য ভালো প্রস্তুতির মঞ্চ হবে এই ম্যাচগুলো। সেপ্টেম্বর উইন্ডোতে লক্ষ্য হবে অক্টোবরের টুর্নামেন্টের জন্য নিজেদের ঝালাই করে নেওয়া।”

খেলোয়াড়দের অবশ্য এখনই হাতে পাচ্ছেন না জেমি। অনেকে ব্যস্ত চলমান লিগ নিয়ে। জাতীয় দলের অনেকে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে এএফসি কাপে খেলতে বর্তমানে আছেন মালদ্বীপে। তবে কিংসের তিন ম্যাচ ছাড়া আগামী ২৭ অগাস্ট শেষ হয়ে যাবে লিগের খেলা। কোচ চাইছেন এরপরই ক্যাম্প শুরু করতে। কিংসের খেলোয়াড়রা প্রয়োজনে মালদ্বীপ থেকে কিরগিজস্তানে যোগ দেবেন দলের সঙ্গে।

সাফের দল নিয়ে এখনও সবকিছু চূড়ান্ত করে রাখেননি জেমি। তবে আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন,খুব একটা পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আগে হাঁটুতে চোট পাওয়া সাদউদ্দিনের মাঠে ফেরা, চট্টগ্রাম আবাহনীর জার্সিতে রাকিব হোসেনের ধারাবাহিকতায় খুশি হওয়ার কথা জানালেন তিনি। আক্ষেপ ঝরল হাতে খুব বেশি বিকল্প না থাকায়।

“এখানে গত তিন বছর ধরে দেখছি, প্রতিটি দলে সেই একই খেলোয়াড় খেলছে। আমরা আসলেই নতুন ১০/১২ জন খেলোয়াড় যোগ করতে পারিনি। এখানে এমন কয়েক জন খেলোয়াড় আসতে পারে, যাদের আগে আমরা বাছাই করিনি। বাংলাদেশের বাইরে অনুশীলন করছে এমন কিছু খেলোয়াড়ও হয়ত আসতে পারে। যদিও কোভিড পরিস্থিতিতে এটা বেশ কঠিন। তবে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে না। দুয়েকটা জায়গায় পরিবর্তন হতে পারে।” 

“আমার হাতে এরই মধ্যে একটা স্কোয়াড আছে, যাদের নাম আগে থেকে নির্বাচিত হয়ে আছে। পরের ১০ দিনে স্রেফ এটা নিশ্চিত করা যে, সেরাদেরই বেছে নিয়েছি এবং কেউ বাদ থেকে যায়নি। কিরগিজস্তান যাওয়ার আগে সভাপতির সঙ্গে বসব। তবে আশা করছি, জাতীয় দলের জন্য সেরা সব খেলোয়াড়ই অ্যাভেইলেবল থাকবে।”

“রাকিব বেশ ধারাবাহিক। অনেক দিন বাইরে থাকার পর সাদ ফিরেছে। অন্যরা তাদের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। এএফসি কাপে বসুন্ধরা কিংস খেলতে গেছে, দেখে ভালো লাগছে। ওদের খেলা দেখার অপেক্ষায় আছি। আশা করি, আমরা ছন্দ নিয়ে সেপ্টেম্বরে যেতে পারব যেটা অক্টোবর পর্যন্ত ধরে রাখতে পারব।”

বাংলাদেশের পাসপোর্ট হাতে পেলেও ফিফা-এএফসির অনুমোদন মেলেনি বলে কিংসের হয়ে এএফসি কাপ খেলতে পারছেন না কিংসলে। জাতীয় দলের হয়ে সাফে খেলতেও অনুমোদন লাগবে। ৩১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের মধ্যে অনেকে খুঁজছেন গোলখরা অবসানের দাওয়াই। জেমির সাফের ছকেও কিংসলে আছেন ভালোভাবেই।

“কিংসলে পাসপোর্ট পেয়েছে, কিন্তু আমি যতদূর বুঝতে পারছি সে এখনও এএফসির ছাড়পত্র পায়নি। বাংলাদেশের হয়ে খেলতে হলে যেটা তার পেতে হবে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পাবে কি না, এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। তবে যদি সে অ্যাভেইলেবল হয় তাহলে সে অবশ্যই অপশন।”

“কিংসলে দীর্ঘকায়, আমি মনে করি, ওর আরেকটু বেশি ফিট হওয়া দরকার। সে আমাদের ফরোয়ার্ড লাইনকে উন্নত করবে, স্কোরিংয়ের সম্ভাবনা বাড়াবে। আমরা এই দিকটা দেখব। যদি আমি কাউকে নির্বাচিত করি, তাকে আমাদের খেলার ধরনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। যদি সে সেটা পারে, (দলে নিতে) আমার কোনো সমস্যা নেই। আমার মনে হয়, সে বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য যথেষ্ট ভালো। তার পাসপোর্টও আছে, এখন দেখতে হবে সে অ্যাভেইলেবল কি না।”