টোকিও অলিম্পিকস: ছোট দেশ, বড় কীর্তি

জনসংখ্যা মাত্র ৬৩ হাজার। আয়তনেও খুব বড় নয়। ফ্লোরা ডাফির হাত ধরে ছোট্ট এই দেশটিই ‘দা গ্রেটেস্ট শো আন আর্থ’-এ নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। জনসংখ্যা ও আয়তনের বিচারে সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে অলিম্পিকের গ্রীষ্মকালীন গেমসে সোনার পদক জয়ের কীর্তি গড়েছে বারমুডা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2021, 05:31 PM
Updated : 27 July 2021, 05:46 PM

অলিম্পিকে আগের তিন আসরে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল ডাফিকে। চতুর্থবারে একেবারে সেরার আসনে জায়গা করে নিলেন ৩৩ বছর বয়সী এই অ্যাথলেট।

ওদাইবা মেরিন পার্কে টোকিও অলিম্পিকসের চতুর্থ দিনে মেয়েদের সাঁতার, সাইক্লিং ও দৌড় মিলিয়ে হওয়া ট্রায়াথলনে এক ঘণ্টা ৫৫ দশমিক ৩৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেরা হন তিনি। রুপা জয়ী গ্রেট ব্রিটেনের জর্জিয়া টেইলর-ব্রাউন ও ব্রোঞ্জ জয়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগী কেটি জ্যাফার্সকে এক মিনিটেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে পেছনে ফেলেন ডাফি।

সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে পদক জয়ের রেকর্ডটি আগে থেকেই দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ছোট্ট এই দ্বীপরাষ্ট্রের দখলে। ১৯৭৬ সালের মন্ট্রিল অলিম্পিকসে বক্সিংয়ের মেন’স হেভিওয়েট বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতে দেশকে প্রথম পদক এনে দিয়েছিলেন ক্লারেন্স হিল। এখন তারা পেয়ে গেল সোনা জয়ীও।

দেশকে সোনালী হাসি উপহার দিতে পেরে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন ডাফি। আনন্দে ভাসছে বারমুডার প্রতিটি মানুষ। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে তিনি শোনালেন পেছনের গল্প, যে পথচলায় চাপ ছিল নিত্যসঙ্গী।

“পাঁচ বছর ধরে অনেক চাপ সইয়ে এগিয়েছি। এই পাঁচ বছরে কখনোই আমাকে অলিম্পিক ফেভারিট হিসেবে দেখা হয়নি। সেজন্য এখন এই জয়টা অমূল্য।”

“আমার মনে হয়, পুরো বারমুডা এখন পাগলপ্রায় হয়ে গেছে। আর এটাই জয়টাকে আমার কাছে আরও বিশেষ করে তুলছে। হ্যাঁ, এটা আমার স্বপ্ন ছিল। সেই সঙ্গে আমি এটাও জানতাম যে বিষয়টি আমার চেয়েও বড় কিছু।”

কিশোরী বয়সে ব্রিটেনের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছিলেন ডাফি। কিন্তু তা ফিরিয়ে দিয়ে বারমুডার পতাকাকেই বেছে নেন তিনি। দেশের হয়ে তার ‘প্রথম’ এর জন্ম দেওয়ার ঘটনা অবশ্য এবারই প্রথম নয়। ২০১৮ সালে গোল্ড কোস্টে ট্রায়াথলনে জিতে বারমুডার প্রথম নারী কমনওয়েলথ গেমস চ্যাম্পিয়নও তিনি।

“আমি বারমুডার (গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে) প্রথম সোনার পদক জয়ী, প্রথম নারী পদক জয়ী, এটা ভেবেই আমি গর্বিত। আশা করি, এই সাফল্যে দেশে সবাইকে আমি উৎসাহিত করতে পারব যে, এটা সম্ভব।”

ডাফির কীর্তি কতটা বিশেষ তা বোঝাতে মজার একটি হিসেব দেখা যেতে পারে। ট্রায়াথলনের সোনা জিততে তাকে পেরুতে হয়েছে ৫১ কিলোমিটারের বেশি (১৫০০ মিটার সাঁতার, ৪০ কিমি সাইক্লিং ও ১০ কিমি দৌড়), যেখানে বারমুডার মোট দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার। দেশটির চেয়ে ১৫ গুন বড় নিউ ইয়র্ক।

টোকিওতে রাতভর বৃষ্টি হওয়ায় পথ হয়ে গিয়েছিল পিচ্ছিল, প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৫ মিনিট দেরিতে। তবে একবার শুরু হওয়ার পর সব প্রতিকূলতাকে বেশ সহজেই দূরে ঠেলে দেন ডাফি, প্রথম চার ল্যাপ শেষে নেন নিয়ন্ত্রণ। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

ফিনিশিং লাইন শেষ করার মুহূর্তে ডাফির মুখে ছিল চওড়া হাসি। মুহূর্তেই তার চোখ ভিজে ওঠে আনন্দাশ্রুতে, বিশ্ব জয় করার উচ্ছ্বাস।

“শেষ কিলোমিটার দৌড়ের আগ পর্যন্ত আমি নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলাম, শেষ পর্যন্ত এটা হতে যাচ্ছে-এমন ভাবনা মনে জায়গা নিতে দিচ্ছিলাম না।”

এরপর ধীরে ধীরে স্বপ্ন ছোঁয়ার কাছে এগিয়ে গেলেন ডাফি, শোনালেন সেই বিশেষ সময়ের কথা।

“পথের পাশে আমি আমার স্বামীকে দেখলাম, যে আমার কোচও। তাকে ছোট্ট একটা হাসি দিলাম।”

“সেখান থেকে আমি আমার সব আবেগকে বেরিয়ে আসতে দিলাম। কিন্তু আমার সত্যি মনে হচ্ছে, আসলে কী ঘটছে আগামী কয়েক দিনেও হয়তো পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারব না।”