টোকিও অলিম্পিক: স্পন্সর হারানোর শঙ্কা

করোনাভাইরাসের কঠিন পরিস্থিতির মাঝে অলিম্পিক আয়োজনের সিদ্ধান্তে আগে থেকেই নাখোশ জাপানের মানুষ। দিনে দিনে তাদের প্রতিবাদ বাড়ছে। এমন অবস্থায় অলিম্পিক সম্পর্কিত টিভি বিজ্ঞাপন প্রচার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টোকিও অলিম্পিকের স্পন্সর টয়োটা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2021, 12:38 PM
Updated : 19 July 2021, 12:47 PM

জাপানের স্থানীয় একটি গণমাধ্যমের জরিপে দেখা গেছে, গেমসটি আয়োজকরা নিরাপদ রাখতে পারবে কী-না, তা নিয়ে জাপানের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ সন্দিহান। অলিম্পিক ঘিরে নানামুখী নেতিবাচক খবরের মাঝে এক বিবৃতিতে সোমবার টয়োটা জানায়, টয়োটা মোটোর কর্পারেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আকিও টয়োডা এবং অন্যান্য নির্বাহীরা অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকবেন না।

জাপানের গাড়ি প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র জানান, “এটা সত্যি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে না টয়োটা। অনুষ্ঠানে কোনো দর্শক না থাকাসহ অনেকগুলো কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

“আমরা জাপানে অলিম্পিক সম্পর্কিত কোনো কিছু সম্প্রচার করব না।”

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এক বছর পিছিয়ে যাওয়া ২০২০ অলিম্পিকের স্পন্সরশিপ স্বত্ব হিসেবে ৬০টি জাপানিজ প্রতিষ্ঠান দিয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার। এখন দেশটিতে শক্ত জনসমর্থন না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতাটির সঙ্গে যুক্ত থাকা-না থাকা নিয়ে রয়েছে দ্বিধায়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাত্র চার দিন আগে দেশটির একটি পত্রিকার জরিপে উঠে এসেছে, মতামত জানানোদের ৬৮ শতাংশ মানুষ করোনভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অলিম্পিক আয়োজকদের সামর্থ্য নিয়ে সন্দিহান। আর ৫৫ শতাংশ মানুষ সরাসরি প্রতিযোগিতাটি এগিয়ে নেওয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছে।

টেলিফোনে জরিপে অংশ নেওয়া এক হাজার ৪৪৪ জনের তিন-চতুর্থাংশ বলেছেন, দর্শক ছাড়া খেলাগুলো আয়োজনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা একমত।

সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে গেছে আয়োজক শহর টোকিওতে। বৈশ্বিক মহামারীকালে অলিম্পিকের মতো একটি বৃহৎ আসরের আয়োজন চিন্তায় ফেলে দিয়েছে স্বাগতিক দেশের নাগরিকদের। তাদের আশঙ্কা, বিদেশিদের ক্রমাগত যাতায়াতের ফলে ভাইরাস দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা চাপের মুখে থাকা দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থাকে নাজুক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।

অবশ্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি টমাস বাখের মতে, প্রতিযোগিতাটি একবার শুরু হলে এবং জাপানের অ্যাথলেটরা পদক জিততে শুরু করলে এটাকে স্বাগত জানাবে জাপানের জনগণ।

টোকিও অলিম্পিক মাঠে গড়াবে আগামী ২৩ জুলাই। আগামী ৮ অগাস্ট পর্দা নামবে বৈশ্বিক ক্রীড়াযজ্ঞের সর্ববৃহৎ আসরের।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি

টোকিওর অলিম্পিক ভিলেজে রোববার প্রথমবারের মত কোনো অ্যাথলেটের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, যেখানে থাকবে প্রায় ১১ হাজার অ্যাথলেট। গত ২ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত অ্যাথলেট, অফিসিয়ালস ও সাংবাদিক মিলে ৫৮ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি আয়োজকদের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রকোপ ভিলেজে বেড়ে গেলে প্রতিযোগিতাটির জন্য হতে পারে বিশাল ধাক্কা, কারণ আক্রান্ত বা আইসোলেশনে থাকারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না।

ক্রমেই অলিম্পিক সংশ্লিষ্টদের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও টোকিও ২০২০-এর এক মুখপাত্র বলেছেন, থাকার জন্য ভিলেজ নিরাপদ; অ্যাথলেট ও প্রতিযোগিতাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা জাপান সফর করছেন তাদের মধ্যে আক্রান্তের হার কেবল প্রায় শূন্য দশমিক এক শতাংশ।

রোববার ফ্লাইটে এক সদস্য কোভিড-১৯ পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়ায় দুই অফিসিয়ালসের সঙ্গে ছয় ব্রিটিশ ট্রাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলেটকে পাঠানো হয়েছে আইসোলেশনে।

সব মিলিয়ে বছরের সবচেয়ে বড় ধাক্কা সামাল দিতে হচ্ছে টোকিওকে। শনিবার টোকিওতে নতুন করে এক হাজার ৪১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, এক দিনে যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ। টানা পাঁচ দিন ধরে শনাক্ত রোগী এক হাজার ছাড়িয়েছে।

নতুন করে আক্রান্তদের অধিকাংশই তরুণ। দেশটির বয়ষ্কদের অধিকাংশকেই অন্তত এক ডোজ করে টিকা দেওয়া হয়েছে। যদিও দেশটির মোট জনসংখ্যার কেবল ৩২ শতাংশ এক ডোজ করে টিকা নিয়েছেন।