ঠাসা সূচিতে মাঠে ফিরছেন মেসি-রামোসরা

দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর অনিশ্চয়তার ইতি টেনে মাঠে ফিরতে যাচ্ছে লা লিগা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপ স্পেনে একটু কমেছে বটে, তবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে আগের মতোই। সেসব পাশ কাটিয়েই হতে যাচ্ছে স্পেনের শীর্ষ ফুটবল প্রতিযোগিতাটি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2020, 02:40 AM
Updated : 10 June 2020, 02:40 AM

বৃহস্পতিবার মুখোমুখি হবে সেভিয়া ও রিয়াল বেতিস। লিগ ফেরার ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত দুইটায়।

লিগের বাকি সব ম্যাচ হবে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। অতি সংক্রামক ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে একই সঙ্গে থাকবে নানা নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে গত মাসে প্রথম শুরু হওয়া বুন্ডেসলিগার ম্যাচগুলোর মতো নিয়মের ঘেরাটোপে শুরু হবে লা লিগা।

সবকিছু কিভাবে এগোবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে এবারের আসর যে সবচেয়ে ‘অদ্ভুত’ হতে যাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে মাঝপথে যে দীর্ঘ বিরতি পড়েছে, ততটা দেখা যায় না দুই মৌসুমের মাঝেও।

বাকি ১১ রাউন্ডের ম্যাচগুলো এক মাসের একটু বেশি সময়ে শেষ করার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ।

প্রায় দুই মাসের ঘরবন্দি জীবন শেষে গত মাসের শুরুর দিকে অনুশীলনে ফেরে ক্লাবগুলো। একক পর্যায়ের অনুশীলনে প্রস্তুতি শুরু করে চতুর্থ ধাপে এসে মাত্র গত সপ্তাহেই দলগত অনুশীলন করে খেলোয়াড়রা। এত কম সময়ে প্রস্তুতির পর অমন ঠাসা সূচিতে খেললে চোট শঙ্কা নিশ্চিতভাবেই বাড়বে। অনেক দলের কোচ যা নিয়ে চিন্তিত।

তবে পাল্টে যাওয়া পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিয়ে চলছে লক্ষ্য ছোঁয়ার জোর প্রস্তুতি। বদলি খেলোয়াড় তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ করাটা কিছুটা স্বস্তি হয়ে আসতে পারে তাদের জন্য।  

বার্সেলোনার কোচ কিকে সেতিয়েন যেমন ভাবনায় আছেন তার স্কোয়াড নিয়ে, “সামনে আমাদের অনেক ম্যাচ আছে আর স্কোয়াডটাও বেশ ছোট।” দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলা নিয়েও কিছুটা চিন্তিত তিনি। স্পষ্ট করেই জানালেন, সমর্থকদের অভাব অনুভব করবেন। পরকক্ষণেই অবশ্য তার কণ্ঠে মানিয়ে নেওয়ার তাড়া।

“আমরা সেই উদ্দীপনা ও সমর্থকদের সমর্থন মিস করব; ম্যাচে যাদের খুব বড় একটা প্রভাব থাকে। যদিও এটা বিশেষ একটা পরিস্থিতি, যেটা আমরা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করব। অবশ্য একই পরিস্থিতি থাকবে আমাদের প্রতিপক্ষের জন্যও।”

ফাঁকা গ্যালারি হোক কিংবা নিয়মের বেড়াজাল-এতসব বাধার মাঝেও যে দুর্দান্ত একটি শিরোপা লড়াই অপেক্ষা করছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের মাঝে ব্যবধান মাত্র ২ পয়েন্টের। শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে রিয়াল মাদ্রিদ। আর এত সুক্ষ্ম ব্যবধানে শীর্ষস্থান যে সুসংহত নয়, তা ভালোমতোই বুঝতে পারছেন সেতিয়েন। শিরোপা ধরে রাখতে বাকি সব ম্যাচ জিততে হবে, খেলোয়াড়দের মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

দলটির চিলিয়ান মিডফিল্ডার আর্তুরো ভিদালও নিজেদের বাকি ম্যাচগুলোর সবকটিকে ‘ফাইনাল’ হিসেবে দেখছেন। একইরকম ভাবনা রিয়ালের ফরোয়ার্ড লুকাস ভাসকেসেরও, “আমাদের ১১টি ফাইনাল বাকি আছে, আমরা এটাকে এভাবেই দেখি। আশা করি লা লিগা জিততে আমরা ১১টি জয় পাব।”

দুদলের মুখোমুখি লড়াইয়ের পালা শেষ। তাই উভয় পক্ষের সামনেই সুযোগ আছে বাকি রাউন্ডগুলোয় শতভাগ জয় তুলে নেওয়া। তেমনটা হলে রিয়ালকে হতাশায় ডুবিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবে কাতালান ক্লাবটি।

শেষ ১১ রাউন্ডে বার্সেলোনা ঘরের মাঠে খেলবে পাঁচটি ম্যাচ, আর রিয়ালের হোম ম্যাচ ছয়টি। এদিক থেকে মাদ্রিদের দলটি একটু সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও আরেক ক্ষেত্রে আবার উল্টো।

মৌসুমে ঘরের মাঠে সবচেয়ে সফল বার্সেলোনা তাদের ছয়টি অ্যাওয়ে ম্যাচের চারটি খেলবে সেভিয়া, আলাভেস, ভিয়ারিয়াল ও রিয়াল ভাইয়াদলিদের বিপক্ষে। এই দলগুলো তাদের ঘরের মাঠে তুলনামূলক বেশি পয়েন্ট হারিয়েছে।

পক্ষান্তরে রিয়াল তাদের পাঁচ অ্যাওয়ে ম্যাচের তিনটি খেলবে তুলনামূলক কঠিন তিন স্টেডিয়ামে; রিয়াল সোসিয়েদাদ, গ্রানাদা ও আথলেতিক ক্লাব। এই তিনটি দল আসরে ঘরের মাঠে তুলনামূলক কম পয়েন্ট হারিয়েছে। সমর্থকদের সামনে তারা ছিল বেশ শক্তিশালী। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে তারা কেমন করে, সেটা অবশ্য দেখার বিষয়।

শিরোপা লড়াইয়ে থাকা দুটি দলের জন্যই অনাকাঙ্ক্ষিত বিরতি একটা সুবিধা এনে দিয়েছে। জানুয়ারিতে চোট পেয়ে ছিটকে পড়া তারকা স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেসের এই মৌসুমে খেলার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। কিন্তু বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে ফিরতি পর্বের শুরু থেকেই তাকে পাচ্ছে বার্সেলোনা। একইভাবে রিয়ালের এদেন আজার ও মার্কো আসেনসিও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন, যাদের এই আসরে আর খেলার সম্ভাবনা ছিল না।

এদিকে, মাঝে লম্বা বিরতি থাকলেও সবশেষ কয়েক ম্যাচের ফল দল দুটির মানসিকতায় প্রভাব ফেলতে পারে। রিয়াল যেমন সবশেষ চার রাউন্ডের দুটিতে হেরেছিল; সবশেষ ম্যাচে রিয়াল বেতিসের মাঠে ২-১ গোলে হার। জিতেছিল মাত্র এক ম্যাচে; ওই জয়ই আবার আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে দলটিকে, জয়টি যে বার্সেলোনার বিপক্ষে। অন্যদিকে, সেতিয়েনের দল সবশেষ ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই জিতেছে। একমাত্র পরাজয়টি আবার রিয়ালের বিপক্ষে হওয়ায় তা তাদের আত্মবিশ্বাসে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

মূল বিষয় এখন মাঠে ফেরার। শিরোপা লড়াইয়ে নামার। তিন মাস আগের সব ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে নিশ্চিত নতুন উদ্যমে শুরু করবে তারা। সে লক্ষ্যে আগামী ১৩ মার্চ রিয়াল মায়োর্কার মাঠে খেলতে যাবে বার্সেলোনা। মাঝে হালকা চোট শঙ্কায় পড়া লিওনেল মেসি ফিরেছেন অনুশীলনে, যা দলটিকে উদ্দীপ্ত করে তুলছে। রিয়াল শিবিরেও থাকছে আজার-আসেনসিওকে ফিরে পাওয়ার স্বস্তি।

রিয়াল শিবিরে থাকছে একটা অন্য ধরনের শূন্যতা। দলটির হোম ম্যাচগুলো দেখা যাবে না চিরচেনা সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে। সব ম্যাচ শূন্য গ্যালারিতে হওয়ার কারণে এই সুযোগে স্টেডিয়ামটির সংস্কার করছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তাই তাদের হোম ম্যাচগুলো হবে ছয় হাজার আসন বিশিষ্ট আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামে।

২৭ রাউন্ড শেষে বার্সেলোনার পয়েন্ট ৫৮। রিয়ালের ৫৬। মাদ্রিদের দলটির চেয়ে ৯ পয়েন্ট পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা সেভিয়া শিরোপা লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়েছে বটে, তবে পাল্টে যাওয়া পরিস্থিতিতে ঘটতে পারে অনেক কিছুই।

শীর্ষ চারে থেকে আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইও তো আছে। যে দৌড়ে ভালোমতো আছে রিয়াল সোসিয়েদাদ (৪৬), গেতাফে (৪৬), আতলেতিকো মাদ্রিদ (৪৫)। খুব একটা পিছিয়ে নেই পরের কয়েকটি দলও।