অ্যানফিল্ড বিপর্যয়ের পর বার্সেলোনার বিবর্ণ বছর

সব বড় সাফল্যের পিঠেই থাকে একটা ব্যর্থতার গল্প। লিভারপুল নিজেদের মাঠে লিখেছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তনের গল্প। বার্সেলোনার জন্য যা ইউরোপ সেরার লড়াইয়ের আরেকটি বেদনাগাথা। 

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2020, 03:55 PM
Updated : 7 May 2020, 03:55 PM

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গত কয়েক মৌসুমে সময়টা ভালো কাটেনি বার্সেলোনার। টানা তিন আসরে কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়ে স্প্যানিশ দলটি। আগের মৌসুমে রোমার মাঠে বিব্রতকর হারের স্মৃতি তখনও তাজা।

গত মৌসুমে অনেকটাই নিজেদের ফিরে পেয়েছিল বার্সেলোনা। শেষ আটের গেরো কাটিয়ে জায়গা করে নিয়েছিল শেষ চারে। নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে জাগিয়েছিল ফাইনালে খেলার আশা। কে জানতো, আবারও তাদের পুড়তে হবে আশাভঙ্গের বেদনায়। ফিরতি পর্বে বাজে ফুটবল খেলে ছিটকে পড়ে তারা।

বার্সেলোনার সাফল্যে ভরা ইতিহাসে ‘অ্যানফিল্ডের সেই বিপর্যয়’ অনেকের কাছে কালো এক অধ্যায়। সেই কষ্ট হয়তো আজও কাতালান ক্লাবটির অনেককে তাড়া করে ফেরে। হতাশার সেই অধ্যায়ের বৃহস্পতিবার পূর্ণ হলো এক বছর।

কাম্প নউয়ে শেষ আটের প্রথম পর্বে একপেশে লড়াইয়ে ৩-০ গোলে জিতে ফাইনাল এক পা দিয়েই রেখেছিল বার্সেলোনা। কিন্তু ফিরতি পর্বে পুরোপুরি খেই হারিয়ে ফেলে তারা।

সপ্তম মিনিটে দিভোক ওরিগির গোলে শুরু। ৫৪তম মিনিটে জর্জিনিয়ো ভিনালডাম ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। দুই মিনিট পর ডাচ এই মিডফিল্ডারের দ্বিতীয় গোলে দুই লেগ মিলে স্কোরলাইন হয়ে যায় ৩-৩। তখনও লা লিগা চ্যাম্পিয়নদের আশা বেঁচে ছিল, একটি গোল করতে পারলেই তো ম্যাচ তাদের হাতে চলে আসত। পারেনি সফরকারীরা। ৭৯তম মিনিটে ওরিগির গোলে পূর্ণতা পায় লিভারপুলের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।

ওই হারের পর আবারও আগের আসরের ‘রোমা অধ্যায়’ নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে। সেবার প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ৪-১ গোলে জেতার পর ফিরতি পর্বে ৩-০ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিল বার্সেলোনা।

লিভারপুলে হেরে ছিটকে যাওয়ার পর ওঠে সমালোনার ঝড়; যেন প্রমাণ হয়ে যায়, আগের বছরের সেই তেতো অভিজ্ঞতা থেকে কিছুই শেখেনি তারা।

অ্যানফিল্ডে হারের খানিক পরই বার্সেলোনা গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন বলেছিলেন, “এই হারের কারণ জানতে মনের গভীরে গিয়ে মনস্তাত্বিক দিকগুলো বুঝতে হবে।”

ভেঙে পড়া লিওনেল মেসির কাছে পুরো বিষয়টি ছিল দুর্ভাগ্যজনক। ডিফেন্ডার জেরার্দ পিকের কাছে দুঃস্বপ্ন।

“এটি দুঃস্বপ্ন, যা আমাদের অনেক দিন তাড়া করবে।”

সেবার বার্সেলোনা লা লিগা জিতলেও অ্যানফিল্ডের সেই হার খেলোয়াড় যেন ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। লুইস সুয়ারেসের কথায় তা ফুটে ওঠে।

“আমরা অনেক দিন, সপ্তাহ ভুগেছি। আমি বাসা থেকে বের হতে চাইতাম না। অনেক সতীর্থের মত সময়টা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল।”

ক্লাবটির ওপর সেই রাতের বিরূপ প্রভাব বেশ ভালোভাবেই পড়েছিল। ওই হারের পর তখনকার কোচ এরনেস্তো ভালভেরদেকে ছাঁটাই করা উচিত ছিল বলে অনেকের মত। কিন্তু বার্সেলোনা তা করেনি। অবশ্য তাতে ভালো কিছুও হয়নি; মৌসুমের মাঝামাঝি গত জানুয়ারিতে তাকে বিদায় করে কর্তৃপক্ষ। ক্লাবটির ইতিহাসে গত ১৫ বছরে কোচ ছাঁটাইয়ের যা প্রথম ঘটনা।

ভালভেরদে যাওয়ার কিছুদিন পর দলটির অন্যতম পরিচালক এরিক আবিদাল মন্তব্য করে বসেন, ভালভেরদের সময় ফুটবলারদের অনেকে মাঠে শতভাগ দেননি।

তার এমন কথায় ক্ষেপে যান মেসি। ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা সাবেক সতীর্থের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন, “ফুটবলারদের নিয়ে এ ধরনের কথা বললে তাদের নাম উল্লেখ করা উচিত। তা না হলে, অনেক কিছু ছড়ায় যা সত্যি নয়।” আবিদালের পেশাদারিত্ব ও ক্লাবের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। পরে ক্লাব সভাপতি জোজেপ মারিয়া বার্তোমেউ দুজনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করেন।

সেখানেই শেষ নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে ক্লাবটির বিরুদ্ধে অনেক বড় অভিযোগের খবর বের হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে দাবি করে, বার্তোমেউয়ের ভাবমূর্তি বাড়াতে ও যারা তার মতের বিপক্ষে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বার্সেলোনা ‘আইথ্রি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভাড়া করেছে। তুমুল সমালোচনার মুখে ‘এসব খবর পুরোপুরি ভিত্তিহীন’ বলে বিবৃতিতে জানায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

এরপর তো মার্চে করোনাভাইরাসের আঘাতে স্থগিত হয়ে যায় সব ধরনের খেলাধুলা। তবে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি দলটিকে। গত ১০ এপ্রিল ক্লাবটির একসঙ্গে ছয় জন পরিচালক পদত্যাগ করেন।

পদত্যাগের কারণ হিসেবে সঙ্কটকালীন সময়ে ক্লাবের দুর্বল ব্যবস্থাপনা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে তৈরি হওয়া ইস্যু এবং করোনাভাইরাসে সৃষ্টি হওয়া জরুরি অবস্থা পরবর্তী ক্লাবের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা বলা হয় তাদের যৌথ বিবৃতিতে।

সবকিছু মিলে গত বছরের মে মাসে সেই যে লা লিগা জিতেছিল বার্সেলোনা, এরপর বারবার শুধু খারাপ খবর তাড়া করছে দলটিকে।

চলতি মৌসুমে তাদের পারফরম্যান্সেও ওঠানামা আছে। তবে লা লিগা শিরোপা ধরে রাখার পথে ভালোভাবেই এগিয়ে আছে তারা। স্থগিত হয়ে থাকা লিগে ২৭ ম্যাচে ৫৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে শিরোপাধারীরা। দুইয়ে থাকা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে এগিয়ে আছে ২ পয়েন্টে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এখনও টিকে আছে বার্সেলোনা। শেষ ষোলোর প্রথম লেগে নাপোলির মাঠে ১-১ গোলে ড্র করেছে দলটি। বিলবাওয়ের মাঠে ১-০ গোলে হেরে কোপা দেল রে থেকে বিদায় নিয়েছে দলটি।