নেপালের পোখারায় রোববার মেয়েদের রিকার্ভ দলগত ইভেন্টে ভুটানের বিপক্ষে ৬-০ সেট পয়েন্টে জিতে মেয়েরা। পরে রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টে রোমান সানার সঙ্গে ভুটানকে ৬-২ সেট পয়েন্টে হারিয়ে সোনার পদক জিতেন ইতি।
বর্তমানে ১৪ বছর বয়সী এই ইতিকেই কি না তার পরিবার ২০১৬ সালে বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিল! তখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। কিন্তু ইতির স্বপ্ন ছিল বড় হওয়ার। আলো ছড়ানোর। আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল স্মৃতি আওড়ে জানালেন পেছনের দিনগুলির কথা।
“কি বলব? ইতি বিস্ময় বালিকা! কারণ এত অল্প বয়সে এই পর্যায়ে কেউ খেলে না। ২০১৬ সালে ট্যালেন্ট হান্টের সময় ওকে পেয়েছি। চুয়াডাঙ্গার মেয়ে। প্রথম যখন ও আসে, সোহেল আকরাম ছিল চুয়াডাঙ্গার ক্যাম্পে, তখন আমার বড় ছেলে বলল আমি একটা মেয়ে দেখেছি, প্রতিভাবান। তাকে তৈরি করা যাবে।”
“ওর বাবা-মা ওকে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। বলতে গেলে বিয়ের পিঁড়ি থেকে ওকে তুলে আনা। ওর বিয়ের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু ওর চিন্তা ছিল পড়াশোনা করা। আর্চার হওয়ার ইচ্ছা ছিল না হয়ত, কিন্তু ওপরে ওঠার ইচ্ছা ছিল। এখন সে দেশ বরেণ্য আর্চারে পরিণত হয়েছে।”
“পড়াশোনা করবে বলেই সে বিয়ের আসর থেকে উঠে গিয়েছিল। সে তখন সুযোগ খুঁজছিল কিভাবে পালাবে। বিয়েটা যেন না হয়। আমাদের ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগামটা তার জন্য একটা উপলক্ষ্য ছিল। তার বো ধরা ও দাঁড়ানোর স্টাইল দেখলে আমাদের কোচরা বুঝে ফেলেন যে সে ভালো আর্চার হবে। তখন তীরন্দাজ সংসদ তাকে দলে নেয়।”
“কালকের খেলা যদি দেখতেন…ভুটানের আর্চার কারমা যে অলিম্পিক কোয়ালিফাই করেছে। ব্যাংককে কিন্তু ইতি কোয়ালিফাই করতে পারেনি। এখানে এসে কিন্তু প্রতিশোধটা নিয়ে নিল। সরাসরি ৬-০ সেট পয়েন্টে কারমাকে হারাল।”
“ইতি অবিশ্বাস্য উন্নতি করেছে। রোমান সানা বা কারো মতো হওয়া ইতির স্বপ্ন না। ওর চাওয়া নিজের মতো হয়ে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেওয়া।”
দুটি সোনা জয়ের পরও খুব একটা উচ্ছ্বাস নেই ইতির। আগামী রোববার এককে সাফল্য পেলেই কেবল কথা বলতে চান তিনি। বিয়ের প্রসঙ্গেও মুখে ছিঁপি তার। কথা বললেন শুধু আজকের প্রাপ্তি নিয়ে।
“রিকার্ভ থেকে তিনটি গোল্ড জয়ের সুযোগ আমরা কখনও আশাও করতে পারিনি। আশা ছিল একটা পদকের, একটা ভালো ফল করার।”
“আমি জানতামই না ও (কারমা) অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করেছে। যখন ওর সঙ্গে খেললাম, তখন সেটা মনে হয়নি।”
“আজ আমি কোনো কিছু নিয়েই কথা বলব না। আগামীকাল আমার রিকার্ভ এককের ফাইনালের পর কথা বলব।”