‘দলে জায়গা পাওয়ার লড়াই উপভোগ করছি’

নাম নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় ইয়াসিন আরাফাত। বাংলাদেশ দলের রক্ষণভাগে তার সিনিয়র সতীর্থের নাম যে ইয়াসিন খান। মূল নাম ইয়াসিন ছেঁটে দিয়ে তাই দলের সর্বকনিষ্ঠ সতীর্থকে সবাই আরাফাত বলে ডাকে। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে দারুণ এক গোল করা ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ চান ‘আরাফাত’ নামেই ছাপ রেখে যেতে।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2019, 11:21 AM
Updated : 20 Oct 2019, 11:25 AM

২০২২ কাতার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে প্রথম জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন। পরে লাল-সুবজ জার্সিতে অভিষেক হয় ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের বড় আঙিনায় এখনও নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাননি। সময় কেটেছে বেঞ্চে।

জাতীয় দলে লেফট-ব্যাক পজিশনে কিছুদিন আগেও সবচেয়ে বড় নির্ভরতার নাম ছিলেন বিশ্বনাথ ঘোষ। কার্ডের খাঁড়ায় পড়া এই ডিফেন্ডারের জায়গায় ফিরে কাতার ও ভারত ম্যাচে আলো ছড়িয়েছেন রায়হান হাসান। গত লিগে সাইফ স্পোর্টিংয়ের হয়ে ২৪ লিগ ম্যাচের ২৩টিতে রক্ষণ সামলানো আরাফাতকে তাই সুযোগই দিতে পারছেন না জেমি ডে।

বাংলাদেশ দলের বদলে যাওয়াটা বেশ বুঝতে পারছেন আরাফাত। টের পাচ্ছেন জায়গা পাওয়ার লড়াইয়ের উত্তাপ এবং তা উপভোগের সঙ্গে দেখে শেখার কাজটুকুও করে যাচ্ছেন মনোযোগী ছাত্রের মতো।

“এখন সেরা একাদশে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। যে যে পজিশনে সুযোগ পাচ্ছে, কাজে লাগাচ্ছে। দলের মধ্যে এই যে লড়াইটা চলছে, সেটা উপভোগ করছি। চ্যালেঞ্জও নিচ্ছি।”

“বাছাইয়ে ম্যাচগুলোয় বেঞ্চে থাকলেও অনেক শিখেছি। আমার পজিশনে অন্য দেশের যারা খেলেছে, তাদের কাছ থেকে শিখছি। কাতারের লেফট-ব্যাকের ক্রস, সুইচ প্লে, ডিফেন্ডিং শিখেছি। ভারতের লেফট-ব্যাকের পাসিং বিল্ড আপ, ওভারল্যাপিং এগুলো দেখেছি; শিখেছি।”

ছবি: সাইফ স্পোর্টিং

রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্সেলোকে অনুসরণ করা আরাফাত শিখছেন জাতীয় দলের সতীর্থদের কাছ থেকেও।

“মার্সেলোকে ফলো করি। সিনিয়রদের সঙ্গে ক্যাম্পে থাকছি। তারা আমাকে অনেক উজ্জীবিত করেন। ইয়াসিন ভাইরা কীভাবে খেলে, তা দেখে অনুপ্রাণিত হই। সবসময়, সবার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করছি।”

শেখ কামাল ক্লাব কাপে গতবারের চ্যাম্পিয়ন টিসি স্পোর্টসকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে শুভসূচনা করেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। সাইফ থেকে ‘ধারে’ চট্টগ্রাম আবাহনীতে খেলতে আসা আরাফাত প্রথম ম্যাচেই চমক দেখিয়েছেন বাঁকানো শটে গোল করে। সবাই যখন তার গোল নিয়ে উচ্ছ্বসিত, তখন এই তরুণ জানালেন গোল নিয়ে তিনি নিজেই অবাক!

“আমি আসলে ক্রস বাড়াতে চেয়েছিলাম। যেন স্ট্রাইকারদের কেউ গোল করতে পারে, কিন্তু বল সরাসরি জালে ঢুকে গেছে। একটু অবাক হয়েছি। খুশিও হয়েছি। আন্তর্জাতিক কোনো আসরে এটাই আমার প্রথম গোল। তবে এর আগে বয়সভিত্তিক দলে গোল আছে আমার, এভাবে বাঁকানো শটে করা।”

কেবল ক্লাব কাপ নিয়ে নয়, এই তরুণ সামনের পথচলার ছকটাও কষে ফেলেছেন। সেখানে আগামী বছর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপও আছে। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ এই আসরে ২০০৩ সালের পর কখনও শিরোপার স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ। বারবার গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়ার হতাশাও দলের সঙ্গী।

“শেখ কামাল ক্লাব কাপের সামনের ম্যাচগুলোতে ভালো করতে চাই। দল যেন চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা খেলে যাচ্ছি। একটি দল হিসেবে খেলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ক্লাবের হয়ে যদি ভালো করতে পারি, তাহলে জাতীয় দলে সুযোগ আরও বাড়বে।”

“বর্তমান জাতীয় দলে আমাদের অনেকে তরুণ। কয়েকজন সিনিয়রও আছে। আমাদের দলটা যদি এভাবে চলতে থাকে, কম্বিনেশনটা ঠিকঠাক হয়ে যায়, তাহলে আমার বিশ্বাস সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে খরা কাটানোর সুযোগ থাকবে আমাদের।”