সালাউদ্দিনের পাশে ‘ব্যর্থ’ মামুনুল-এমিলিরা

ভুটানের বিপক্ষে হারের পর সমালোচনার মুখে আছে ফুটবলাররাও। খেলোয়াড়দের নিষ্ঠা নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছেন কাজী সালাউদ্দিনও। সেই ফুটবলাররাই আবার সংবাদ সম্মেলনে সাফাই গাইলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2016, 01:06 PM
Updated : 30 Oct 2016, 01:49 PM

গত ১০ অক্টোবর ভুটানের কাছে ফিরতি লেগে ৩-১ গোলে হেরে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে খেলার স্বপ্ন গুঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের। ওই ব্যর্থতার প্রায় তিন সপ্তাহ পর রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে ‘জাতীয় ও ক্লাব ফুটবল দলের খেলোয়াড়বৃন্দ’ ব্যানারের নীচে মামুনুল-এমিলিরা জড়ো হয়েছিলেন ‘ফুটবল ধ্বংসের অপচেষ্টার’ প্রতিবাদ করতে।

ভুটান থেকে মামুনুলদের শূন্য হাতে ফেরার পর বাফুফের সভাপতি ও সংস্থাটির কার্যকলাপের সমালোচনা চলছে। সভাপতির পদত্যাগ চেয়ে একাধিকবার বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সমর্থকরা। তৃতীয় মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হওয়া সালাউদ্দিনের কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতার ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন তারা। কদিন আগে সাবেক কিছু ফুটবলার সংবাদ সম্মেলন করেন একই দাবি নিয়ে। এমন টালমাটাল সময়ে বর্তমান ফুটবলাররা সালাউদ্দিনের পাশে দাঁড়ালেন।

জাতীয় দলের ডিফেন্ডার আতিকুর রহমান মিশু কারও পদত্যাগের মধ্যে সমাধান দেখছেন না।

“এখানে এসেছি কাউকে সমালোচনা করতে নয়। বাফুফের সবার পদত্যাগেই সমাধান নয়। আমরাও তো মানুষ। আমাদেরও তো খারাপ লাগে ক্রমাগত কথা শুনতে। যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। সাবেক খেলোয়াড়, কর্মকর্তারা যারা বাইরে আছেন, তারা এগিয়ে আসুন।”

বর্তমান ফুটবলারদের এই ভিন্নধর্মী আয়োজনে চট্টগ্রাম আবাহনী ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের খেলোয়াড়দের উপস্থিতি ছিল বেশি। ঘরোয়া ফুটবলের দুই ঐতিহ্যবাহী দল আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কোনো খেলোয়াড় ছিল না। লিগের শিরোপাধারী শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের ফুটবলাররাও ছিল অনুপস্থিত।

জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলির কথায় উঠে এলো ‘বাজে সময়’ পার করার বিষয়টি। সময়টা কতটা বাজে, তা পিছু ফিরে সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোর দিকে তাকালে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের এশিয়া অঞ্চলের বাছাইয়ে খেলা ৮ ম্যাচে মামুনুলদের হার সাতটি। তাজিকিস্তানের সঙ্গে ড্রয়ে পাওয়া ১ পয়েন্টই মোট প্রাপ্তি।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গোলের হিসেবটা কষলে বাংলাদেশ হজম করেছে ৩২টি, দিয়েছে ২টি। এই দুই গোলের একটি এমিলির; যেটি করেছিলেন গত জুনে তাজিকিস্তানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে। অন্যটি কিরগিজস্তানের কাছে ৩-১ ব্যবধানে হারা ম্যাচে আত্মঘাতীর খাত থেকে পাওয়া।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ব্যর্থতার পর এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে খেলার সুযোগটিও কাজে লাগাতে পারেনি মামুনুলরা। নিজেদের মাঠে গোলশূন্য ড্রয়ের পর থিম্পুতে ৩-১ ব্যবধানের হার। নিজেদের ইতিহাসে ভুটানের কাছে এটাই বাংলাদেশের প্রথম হারও! থিম্পুতে যাওয়ার আগে মালদ্বীপের সঙ্গে খেলা প্রস্তুতি ম্যাচেও ৫-০ গোলে হেরেছিল মামুনুলরা।

সব শেষ ম্যাচের ভরাডুবির জন্য লজ্জিত হওয়ার কথা জানিয়ে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য্য বলেন, “ভুটানের হারের পর আমাদের নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। সামাজিক ও পারিবারিকভাবেও নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।”

বাফুফের সমালোচনা করা সাবেক ফুটবলারদের খোঁচা দিয়েছেন বিপ্লব। সালাউদ্দিনের আমলে প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ না থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বড় ভাইয়েরা সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তো একটা একাডেমি করেনি। নিজ জেলায় গিয়ে কখনও ফুটবলকে জাগানোর চেষ্টা করেনি। কিছু হলেই সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি তো মাঠে গিয়ে খেলে দেন না।”

জাতীয় দলে খেলোয়াড়দের নিষ্ঠা নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছিলেন সালাউদ্দিনও। এ অক্টোবরের মাঝামাঝিতেই মামুনুল-এমিলি-রায়হান-শাখাওয়াত রনিদের সামর্থ্য নিয়ে সভাপতি বলেন, “এখন সমস্যা হলো, দল ভালো করছে না, খেলোয়াড়রাও ভালো করছে না। সব ধরনের সুবিধা দেওয়ার পরও হচ্ছে না। তার মানে, শেষ পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পেরেছি, এই খেলোয়াড়রা জাতীয় দলে খেলার জন্য যথেষ্ট ভালো নয়। এটা আমি খেলার (ভুটান ম্যাচের) আগেই বুঝেছি।”

কিন্তু এমিলির দাবি ফুটবলের মান কমেনি। বাজে সময় কাটানোর কথা উল্লেখ করে জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড বলেন, “খারাপ সময় আপনাদের সামনে আসতে মন চায় না। আমরা খুব একটা বাজে সময় পার করছি। সাফের পর থেকে আমরা তেমন ভালো করিনি সত্যি, কিন্তু এই না যে ফুটবল শেষ হয়ে গেছে। ঘরোয়া ফুটবলের স্ট্যান্ডার্ড কিন্তু কমেনি।”

‘আমি তো আর খেলে দিতে পারি না’ সালাউদ্দিনের একাধিকবার বলা এই কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে দায়টা নিজেদের কাঁধে নিয়েছেন অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। বারবার অবসর ভেঙে ফেরা এই মিডফিল্ডার বলেন, “ম্যাচটা কিন্তু আমরা খেলি। হারার পর আমরাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাই। ওই ম্যাচের পর থেকে কারও ঘুম নাই, মুখে হাসি নাই। দশ বছর ধরে আমরা একই প্লেয়ার খেলছি। ভাল-মন্দ আমরাই করেছি। এসএ গেমসে জিতেছি, লেবাননকে হারিয়েছি।”

২০০৩ সালে সাফ ফুটবলের সোনা জেতার পর পরের আসরে রানার্সআপ। কিন্তু এরপর টানা তিন আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। সাফের পর সাফল্য বলতে ২০১০ সালে এসএ  গেমসের সোনা।

“এখনকার পরিস্থিতিতে বাবা-মায়েরা তার সন্তানকে ফুটবলার বানাতে চাইবে না। এমন কাদা ছোঁড়াছুড়ি চলতে থাকলে আর নতুন কোন প্রজন্ম সৃষ্টি হবে না। ফুটবল থাকলে আমরা থাকবো। ফুটবল না থাকলে কিছুই হবে না।”