সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী অস্থিরতা এবং চলমান বন্যায় দুঃসময়ের মধ্যে থাকা দেশের মানুষের মুখে এই জয় একটু হাসি ফোটাবে বলে মনে করেন খেলোয়াড়-কোচ সবাই।
Published : 28 Aug 2024, 06:05 PM
শেষের বাঁশি বাজতেই একপ্রান্তে শুরু হলো নোভা-আসিফদের বিজয়োৎসব। অন্যপ্রান্তে দেখা গেল হেরে কান্নায় ভেঙে পড়া নেপালের খেলোয়াড়দের সান্ত্বনা দিতে ব্যস্ত মিরাজুল ইসলাম। এরপর শিরোপা জয়ের প্রতিক্রিয়ায় কোচ, খেলোয়াড়দের মুখে উঠে এলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের কথা, চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মানুষের প্রসঙ্গও।
ললিতপুরের আনফা কমপ্লেক্সে বুধবার সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিকদের ৪-১ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বয়সভিত্তিক এই ক্যাটাগরিতে সাফল্যের উচ্ছ্বাসে ভাসল দল। তারা সবাই এই আনন্দ, অর্জন উৎসর্গ করলেন গত জুলাই ও অগাস্টের গণআন্দোলনে শহীদদের উদ্দেশে।
দুই গোল করে ও রাব্বী হোসেন রাহুলের গোলে অবদান রাখেন মিরাজুল। চার গোল নিয়ে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা এই ফরোয়ার্ড যেমন বললেন, তারা নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের জন্য খেলেছেন। এই তরুণ হেরে যাওয়া নেপালের প্রশংসাও করতে ভোলেননি।
“আলহামদুলিল্লাহ, সবকিছুর জন্য আল্লাহ সাহায্য করেছেন, নইলে পারতাম না। নেপাল ভালো খেলেছে, নেপাল দলেও অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে, কিন্তু ভাগ্য ওদের পক্ষে ছিল না। আমাদের পক্ষে ছিল।”
“সত্য কথা বলতে, এখানে আমাদের প্রথম থেকে লক্ষ্য ছিল ফাইনালে খেলা। আমাদের দেশে এখন খারাপ অবস্থা, অনেক কিছু হয়েছে, বন্যা চলছে, এই পুরো খেলাটা আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য খেলেছি। নিজের জন্য আমরা খেলিনি। দেশের মানুষের জন্য খেলেছি। ফুটবল যেন এগিয়ে যায় এজন্য খেলেছি।”
সেমি-ফাইনালে টাইব্রেকারে দুই ভারতের দুই শট আটকে দেওয়া আসিফ হোসেন পেয়েছেন সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার। ফাইনালেও দারুণ ছিলেন তিনি। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে গোলের আলো ছড়িয়েছেন রাব্বীও। এই তরুণ উইঙ্গারের কণ্ঠে থাকল গ্রুপপর্বে নেপালের বিপক্ষে হারের মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার তৃপ্তি। উঠে এলো দেশের সাম্প্রতিক প্রসঙ্গও।
“নেপালের কাছে গ্রুপ পর্বে আমরা ২-১ গোলে হেরেছিলাম। এবার আমাদের লক্ষ্য ছিল, যেভাবেই হোক ফাইনালে জিততে হবে। সেই নিবেদন ও মনোযোগ আমাদের ছিল। স্টেডিয়ামে পরিবেশ, সমর্থক সবকিছুই দারুণ ছিল। আমরা খুব উপভোগ করেছি। এই উপভোগ্য পরিবেশের মধ্যে সেরাটা দিতে পেরেছি, এ কারণে জিততে পেরেছি।”
“আমাদের দেশের অবস্থা এখন ভালো নয়। বন্যার্ত যারা আছেন এবং গত জুলাই মাসে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদেরকে আমরা অনেক শ্রদ্ধা করি এবং তাদের জন্য এই ট্রফিটা উৎসর্গ করলাম।”
কোচ মারুফুল হকের কণ্ঠে ম্যাচ পরিকল্পনার পাশাপাশি উঠে এলো আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের কথা। বন্যায় ক্ষুধা, তৃষ্ণায় দুঃসময় দিন কাটানো দেশবাসীর কথাও। এই শিরোপা নতুন বাংলাদেশ গড়তে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলেও মনে করেন বাংলাদেশ কোচ।
“আজকের ম্যাচের আগে আমাদের পরিকল্পনা ছিল ধীরলয়ে খেলার। কেননা, গত পরশুই আমরা একটা ম্যাচ খেলেছিলাম (ভারতের বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল), নেপাল দুই দিন সময় পেয়েছিল বিশ্রামের জন্য। ভেবেছিলাম, শুরুতে তেড়েফুঁড়ে খেলতে যাওয়াটা ছেলেদের জন্য চাপের হয়ে যাবে। শুরুর ১০ মিনিটে…নেপাল আসলেই ভালো দল, মেধাবী খেলোয়াড় আছে, কিন্তু দেখলাম তারা চাপ অনুভব করছে। তখন ছেলেদের বললাম, যদি তোমরা সহজাত খেলতে পার, পাস-মুভ ধারাবাহিকভাবে করে যাও (ফল আসবে)।”
“প্রথমত আমি এই ট্রফি উৎসর্গ করছি গত মাস এবং এ মাসে নতুন বাংলাদেশের জন্য যে নায়কেরা জীবন দিয়েছে, তাদের উদ্দেশে। গত মাসে (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে) আমরা অনেক নায়ককে হারিয়েছি। এরপর গত কিছুদিন ধরে ভীষণ বন্যা চলছে। অনেক পরিবার খাবার, পানির জন্য ভুগছে। সরকার চেষ্টা করছে (পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের)। আমি মনে করি, এই জয় নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে।”