বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়ে খেলা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন রিশার্লিসন

ব্রাজিলের এই ফরোয়ার্ড বললেন, বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার পর দুঃস্বপ্নের দিনগুলিতে তার জীবন বাঁচিয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2024, 06:48 AM
Updated : 28 March 2024, 06:48 AM

২০২২ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে ব্রাজিলের বিদায়ের পর মানসিক অবসাদের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে রিশার্লিসনকে। যন্ত্রণাময় দিনগুলিতে ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছেন এই ফরোয়ার্ড। এখন অবশ্য তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন তিনি। ব্রাজিলের এই তারকার মতে, বিষন্নতায় আক্রান্ত হলে সবারই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

রিশার্লিসনের বিষন্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ইঙ্গিত প্রকাশ্যে প্রথম পাওয়া যায় গত সেপ্টেম্বরে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বলিভিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের ৫-১ গোলের জয়ের ম্যাচে তাকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তখন ডাগআউটে বসে কাঁদতে দেখা গিয়েছিল এই ফরোয়ার্ডকে। তার কান্নার সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফুটবল বিশ্বময়। আলোচনার প্রবল খোরাক জোগায় তা। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে হাস্যরস করতেও ছাড়েনি। 

পরে রিশার্লিসন জানান, মনস্তত্ত্ববিদের সহায়তা প্রয়োজন তার।

২৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড এবার ইএসপিএন ব্রাজিলকে জানালেন, তার লড়াইটা চলছে আগে থেকেই। ২০২২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিল। এরপরই নিজের মানসিক পরিবর্তন টের পান তিনি। 

“মাত্রই বিশ্বকাপ খেললাম তখন, নিজের খেলার চূড়ায় ছিলাম। সামর্থ্যের শেষ সীমানায় পৌঁছে যাচ্ছিলাম… জানি না আসলে… নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা বলছি না আমি, তবে বিষন্নতায় ভুগছিলাম তখন এবং সব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম।” 

“আমার মতো একজন মানুষ, যাকে মনে হতো মানসিকভাবে ভীষণ শক্ত… বিশ্বকাপের পর মনে হচ্ছিল, সবকিছু চুরমার হয়ে গেছে।” 

সেই সময়টায় ফুটবল একদমই উপভোগ করছিলেন না রিশার্লিসন। খেলার ইচ্ছেই মরে গিয়েছিল তার।

“অনুশীলনে যাওয়ার আগে আমার মনে হতো, বাড়ি ফিরে যাওয়াই ভালো। বাড়িতে ফিরে গিয়ে নিজের ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে হতো আমার… জানি না মাথার ভেতর কী চলছিল। এমনকি বাবার কাছে গিয়েও বলেছি যে, আমি (খেলা) ছেড়ে দিতে চাই।” 

“বিশ্বকাপের পর যেসবের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম আমি… বাবার সঙ্গে এসব কথা বলা ছিল খুবই দুঃখজনক। যে ছিল আমার পথচলার সঙ্গী এবং একসঙ্গেই স্বপ্নটাকে তাড়া করেছি আমরা… তার কাছে গিয়ে বলা যে, ‘বাবা, আমি (খেলা) ছেড়ে দিতে চাই’… পুরো পাগলাটে ব্যাপার ছিল এটা।” 

দুঃস্বপ্নের মতো দিনগুলিতে তাকে উদ্ধার করেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই টটেনহ্যাম হটস্পারের এই ফরোয়ার্ডের পরামর্শ, কেউ বিষন্নতায় আক্রান্ত হলে বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া উচিত। 

“থেরাপিস্ট তখন আমাকে বাঁচিয়েছে… পছন্দ করুন আর না করুন, আমার জীবন বাঁচিয়েছেন তিনি। তখন আমি স্রেফ ফালতু কথাই ভেবেছি…।” 

“কারও যদি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন মনে হয়, তাহলে যাওয়া উচিত, কারণ কারও কাছে এভাবে খোলামেলা হওয়া, মন খুলে কথা বলা, এসব খুবই জরুরি এই সময়ে।” 

এই সাক্ষাৎকারের পর রিশার্লিসনের ক্লাব টটেনহ্যাম ও তার সাবেক ক্লাব এভারটন সামাজিকমাধ্যমে জানায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে তার পাশে আছে তারা।