নিয়োগ: রুয়েটের সাবেক ভিসি ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা

অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে সরকারের সোয়া এক কোটি টাকা ক্ষতি করার অভিযোগ এনে ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2024, 06:13 PM
Updated : 27 March 2024, 06:13 PM

জনবল নিয়োগে অনিয়ম করে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করার অভিযোগে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। 

বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীতে মামলাটি করেন সংস্থাটির রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম। 

আসামি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম সেখ এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার মো. সেলিম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। 

দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক কামরুল আহসান জানান, রোববার দুদক তাদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সুপারিশের ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধানে নামে। তবে প্রথম তদন্তেই অনিয়ম পায় ইউজিসি।

পরে দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে দণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলাটি করেন বলে জানান তিনি।

মামলার পর দুদক থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পারস্পরিক যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশে নিজেরা লাভবান হয়ে অন্যদের লাভবান করার জন্য অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীদেরকে মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ‘সেকশন অফিসার’ পদে ছয়জনের জায়গায় ১৩ জনকে নিয়োগ, শূন্য পদ না থাকা সত্ত্বেও সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদের বিপরীতে ‘জুনিয়র সেকশন অফিসার’ পদে একজন এবং উপাচার্যের পিএ পদে দুজনের জায়গায় তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে একজনকে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও দুইজনকে নিয়োগ, মালি পদে তিনজনের জায়গায় সাতজনকে, গাড়িচালক পদে একজনের জায়গায় তিনজন এবং ‘সহকারী কুক’ পদে তিনজনের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পাঁচজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অতিরিক্ত নিয়োগ পাওয়া ১৭ জন ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের অগাস্ট পর্যন্ত বেতন ভাতা বাবদ মোট এক কোটি ২৬ লাখ ১২ হাজার ১০৯ টাকা নিয়েছেন; যা সরকারের ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই চার বছরের জন্য রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ পান অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ। পরের বছর তিনটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে ১৩৫ জনকে নিয়োগ দেন তিনি। ২০২২ সালের ৪ মে ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় এসব নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়।

নিয়োগ অনুমোদনের পর অভিযোগ ওঠে, উপাচার্য স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে তার সহোদর মুকুল হোসেনকে সেকশন অফিসার ও আরেক সহোদর লেবারুল ইসলামকে জুনিয়র সেকশন অফিসার ও শ্যালক সোহেল আহমেদকে পিএ টু ডিরেক্টর, চাচাত বোন মাছুমা খাতুনকে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, গৃহকর্মী লাভলী আরাকে অ্যাসিস্ট্যান্ট কুক, গৃহকর্মী লাভলীর স্বামী এনামুল হককে উপাচার্যের গাড়িচালক ও স্ত্রীর ফুফাত ভাই মেহেদী হাসানকে কেয়ারটেকার পদে নিয়োগ দেন।

এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা পদের চেয়ে অতিরিক্ত ১৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়; যা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে উঠে আসে।

পরে ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল সাবেক উপাচার্য রফিকুল ইসলামের মেয়াদে দেওয়া সব নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে বাতিলের আদেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ ব্যাপারে জানতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম সেখকে মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।