খুলনার উপকূলীয় অঞ্চল পরিদর্শন করলেন সুইডিশ রাজকন্যা

কয়রা উপজেলায় বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তরের স্মার্ট সার্ভিস পয়েন্ট উদ্বোধন করেন সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2024, 02:05 PM
Updated : 19 March 2024, 02:05 PM

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির শুভেচ্ছা দূত ও সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া খুলনার উপকূলীয় এলাকায় গ্রামীণ সম্প্রদায়ের ডিজিটাল পরিষেবার উপকারভোগীসহ সরকার ও ইউএনডিপি কর্তৃক বাস্তবায়িত একাধিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। 

মঙ্গলবার সকালে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নোয়ানি গ্রামের যজ্ঞমন্দির এলাকায় লজিক প্রকল্পের আওতায় নির্মিত রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম পরিদর্শনে আসেন তিনি। 

প্রকল্পটি ইউএনডিপি, ইউএনসিডিএফ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও সুইডেন সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন পরিচালিত হয়। 

এ সময় ক্রাউন প্রিন্সেস ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম থেকে স্থানীয় মানুষদের লবণমুক্ত সুপেয় পানি সংগ্রহ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন এবং ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেমের উপকারভোগীদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সময় মতবিনিময় করেন।

মতবিনিময়কালে উপকারভোগীরা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততা সমস্যার কারণে অতীতে পানযোগ্য পানির সংকটের কথা তুলে ধরেন। 

তারা জানান, আগে গ্রামীণ উৎস হতে পরিবারের পানযোগ্য পানি সংগ্রহের জন্য নারীদের বাড়ি থেকে দূরে যেতে হত। এখন নতুন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম হওয়ার পরে সহজেই লবণমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাচ্ছে। 

পরে ক্রাউন প্রিন্সেস একই ইউনিয়নের শিকারিপাড়া এলাকায় লজিক প্রকল্পের আওতায় জলবায়ু সহনশীল জীবিকায়নের অংশ হিসেবে ভেড়া পালন, মৎস্য চাষ এবং জলবায়ু ও জীবিকা উন্নয়ন সমবায় সমিতির মধু বিপণন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। 

পরে তিনি কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে অবস্থিত ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিদর্শন এবং ডিজিটাল সেন্টার হতে সেবাগ্রহীতারা কীভাবে সেবা পান তার সম্যক ধারণা নেন এবং ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে ডিজিটাল সেন্টারের সুবিধা-সেবাসমূহ নিয়ে পটগানের পরিবেশনা উপভোগ করেন।

এরপর কয়রা উপজেলা সদরে বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তরের স্মার্ট সার্ভিস পয়েন্ট উদ্বোধন করেন ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া । 

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব উলরিকা মোদের এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা ও বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক সুইডিশ মন্ত্রী জোহান ফরসেল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাগণ ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “ডিজিটাল সেন্টার সরকারি পরিষেবাগুলোকে তৃণমূল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে, প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোকে সহজলভ্য করে তুলছে।” 

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। 

তিনি বলেন, “স্মার্ট সার্ভিস পয়েন্ট এমন একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ, যার লক্ষ্য হচ্ছে ডাক পরিষেবাগুলোতে প্রতিটি নাগরিকের অভিগম্যতা এবং দক্ষতা উন্নত করতে প্রযুক্তি ব্যবহার করা।”

প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, “স্মার্ট সার্ভিস পয়েন্ট (এসএসপি) উদ্যোগ, প্রথাগত ডাক পরিষেবাগুলোর সঙ্গে ডিজিটাল সমাধানগুলোকে একীভূত করার একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। যা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বিনির্মাণে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করবে। 

“পার্সেল ট্র্যাকিং, বিল পেমেন্ট এবং ই-কমার্স সুবিধার মতো সুযোগ-সুবিধার আয়োজন নিয়ে এই সার্ভিস পয়েন্ট বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় অভিগম্যতা ও দক্ষতার বিপ্লব ঘটাবে।”

ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেজান্ড্রা বের্গ ভন লিনডে, এটুআই-এর যুগ্ম-প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) মোল্লা মিজানুর রহমান, এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সফরে অংশগ্রহণ করেন। 

এ উদ্বোধনী কার্যক্রম শেষে বেলা ১২ টার দিকে তিনি কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয় মাঠ থেকে হেলিকপ্টারে কয়রা ত্যাগ করেন। ১৮ মার্চ চার দিনের সফরে ঢাকায় আসেন সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া ।