জন্মের পর চুরি যাওয়া শিশু ৭ মাস পর মায়ের বুকে

২০২৩ সালের ১৩ অগাস্ট কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল থেকে শিশুটি চুরি হয়; তাকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল বলে জানায় পিবিআই।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2024, 12:01 PM
Updated : 5 March 2024, 12:01 PM

সাত মাস আগে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া এক শিশুকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে পিবিআই। এ ঘটনায় দুই নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

চুরি যাওয়া কন্যাশিশুটি আদর্শ সদর উপজেলার বারোপাড়া এলাকার জসিম উদ্দীন ও আয়েশা আক্তার কলি দম্পতির।

স্বভাবতই সন্তানকে পেয়ে আপ্লুত আয়েশা আক্তার কলি। নাড়িছেঁড়া ধনকে বুকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা।

তিনি বলছিলেন, “সাত মাস শুধু আল্লাহর কাছে কেঁদেছি। বিশ্বাস ছিল আল্লাহ আমার নাড়িছেঁড়া ধনকে আমার বুকে ফিরিয়ে দেবেন।

“অবশেষে আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেয়েছি। আমার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ধন্যবাদ পিবিআইকে। আর এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে পিবিআই, কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গ্রেপ্তার দুই নারী হলেন- শিশুটির বাবা জসিম উদ্দীনের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও মুরাদনগর উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের জাকির হোসেনের স্ত্রী পারভীন আক্তার এবং বরুড়া উপজেলার পূর্বপদুয়া গ্রামের আব্দুল মালেকের মেয়ে জেসমিন আক্তার। পারভীনের স্বামীর বাড়ি বগুড়ায়।

মঙ্গলবার দুপুরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ১০ অগাস্ট হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে কন্যাশিশুটির জন্ম হয়। ১৩ অগাস্ট সকালে শিশুটিকে নিয়ে তার নানী নূরজাহান বেগম হাসপাতালের বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এ সময় শিশুটির শারীরিক সমস্যা আছে, তাকে বড় চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে টিকেট কাউন্টারের দিকে নিয়ে যায় পারভীন আক্তার। গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি শিশুটির মা বিষয়টি জানতেন না। আর বাড়ির ভাড়াটিয়া হিসেবে পারভীন পরিবারেরও আস্থাভাজন ছিলেন।

“পারভীনের সঙ্গে তখন আড়ালে বোরকা পরিহিত অবস্থায় জেসমিনও ছিলেন। টিকেট কাউন্টারে অনেক মানুষের ভিড় ছিল। তখন জেসমিন শিশুটির নানী নুরজাহান বেগমের কাছে গিয়ে দরদ দেখিয়ে বলেন, ‘আপনি বৃদ্ধ মানুষ এবং আপনার কষ্ট হচ্ছে, শিশুটিকে আমার কোলে দেন। বাচ্চা সঙ্গে থাকলে তাড়াতাড়ি টিকেট দেবে’।

“নূরজাহান বেগম সরল বিশ্বাসে নাতনিকে জেসমিনের কোলে দিয়ে দেন। আর তখনই জেসমিন শিশুটিকে নিয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়। এবং পুরো ঘটনাটি হয়েছে পারভীন আক্তারের মাধ্যমে।”

পরদিনই কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইনে মামলা করেন শিশুটির বাবা। কিন্তু প্রায় তিন মাস চেষ্টা করেও শিশুটিকে উদ্ধার করতে পারেনি থানা পুলিশ।

পরবর্তীতে শিশুর বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কুমিল্লাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পরিদর্শক মফজল আহমদ খানকে।

পুলিশ সুপার বলেন, “অবাক করা বিষয় হলো, ঘটনার পর পুলিশ পারভীনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে থানায় নিয়েছিল। তখন শিশুটির বাবা জসীম উদ্দীন সরল বিশ্বাসে থানায় গিয়ে জানান যে, পারভীন এমন কাজ করতে পারে না। তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। এবং এরপরও তিনি জসীমের বাড়িতেই ভাড়াটিয়া হিসেবে অবস্থান করছিলেন।

“কিন্তু পারভীনই ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে বিক্রি করেছিলেন। জেসমিন আক্তার হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পারভীনকে একসঙ্গে ৩০ হাজার টাকা দেন। পারভীন বলেছিলেন, শিশুটি ছেলে। কিন্তু যেহেতু শিশুটি মেয়ে তাই জেসমিন আর ২০ হাজার টাকা পারভীনকে দেননি।”

পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, “জেসমিন শিশুটিকে নিয়ে প্রথমে কিছুদিন বরুড়া উপজেলার পূর্বপদুয়া গ্রামের বাবার বাড়ি ছিলেন। পরে তিনি তার দ্বিতীয় স্বামীর বাড়ি বগুড়ায় চলে যান।”

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই জানায়, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ও ব্যাপক তদন্তের পর সোমবার বিকালে রাজধানীর মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে শিশুটিসহ জেসমিনকে আটক করা হয়। পরে রাতে জসীমের বাড়ি থেকে পারভীন আক্তারকেও আটক করা হয়।

পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমরা এসব বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। অভিভাবকরা সচেতন হলেই হাসপাতাল থেকে এভাবে আর কোনো শিশুকে কেউ চুরি করতে পারবে না।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্তকর্তা পরিদর্শক মফজল আহমদ খান, পরিদর্শক হিলাল উদ্দিন, মঞ্জুর আলম, বিপুল চন্দ্র দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন।