আজকের কষ্টের জন্য আমরা দায়ী নই: কাদের

“এই কষ্টের জন্য দায়ী বিশ্বের সঙ্কটজনক পরিস্থিতি। ...বিশ্বে আজকে স্যাংশন, যুদ্ধ। নতুন নতুন সংঘাত পৃথিবীকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে”, বলেন তিনি।

নওগাঁ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2023, 11:16 AM
Updated : 4 June 2023, 11:16 AM

বাংলাদেশ ‘কষ্টে’ আছে স্বীকার করে নিয়ে এর জন্য সরকারের দায় অস্বীকার করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিশ্বের বড় বড় দেশ নিজেদের মধ্যে যুদ্ধের কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, দেখা গিয়েছে জ্বালানির সংকট, ফিরে এসেছে লোডশেডিং। এই পরিস্থিতির দ্রুতই অবসান হবে।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের দশম মৃত্যুবার্ষিকীতে রোববার দুপুরে নওগাঁ নওযোয়ান মাঠে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

জ্বালানি সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতি’ দায়ী উল্লেখ করে কাদের বলেন, “বড় বড় দেশগুলো যুদ্ধ করে একে-অন্যকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এসব কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। সেটার জন্য কষ্ট করতে হয় বাংলাদেশের মত দেশগুলোর সাধারণ মানুষকে।

“আমাদের আজকে এই কষ্টের জন্য আমরা দায়ী নই। এই কষ্টের জন্য দায়ী বিশ্বের সঙ্কটজনক পরিস্থিতি। ...বিশ্বে আজকে স্যাংশন, যুদ্ধ। নতুন নতুন সংঘাত পৃথিবীকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এটা শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সমস্যা।”

কষ্ট পাচ্ছেন শেখ হাসিনা

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী কষ্ট পাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা শান্তিতে নেই। আজকে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনার চেয়ে গরিব মানুষের আপনজন আর কেউ নেই। এই বাংলাদেশে গত ৪৮ বছরে সবচেয়ে পরিশ্রমী ও দক্ষ প্রশাসক শেখ হাসিনা। ৪৮ বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ও সবচেয়ে দক্ষ কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। এই সম্মান বাংলাদেশের মানুষের।”

প্রধানমন্ত্রী দিনে তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে বাকি ২১ ঘণ্টাই কাজ করেন জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “তিনি দিনরাত বসে অর্থনীতির কথা ভাবেন। সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন।

“শেখ হাসিনা বিদেশে যান আনন্দ করার জন্য না। প্রমোদ ভ্রমণের জন্য নয়। শেখ হাসিনা সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন। তিনি নালিশ করতে যান নাই।”

প্রধানমন্ত্রী কাতারে গিয়ে জ্বালানি নিয়ে যে সহযোগিতা পেয়েছেন, সেটা সংকট থেকে সামনের দিনগুলোতে উদ্ধার করবে বলেও আশ্বাস দেন কাদের। বলেন, “কিছু দিন লোডশেডিং হয়ত থাকবে। সেটাও ঠিক হয়ে যাবে।” 

ফাইনাল খেলা আগামী নির্বাচনে

পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পাতাল রেল, বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো প্রকল্পগুলো বিএনপির ‘অন্তর্জ্বালা’ তৈরি করছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, “বিএনপির লুটপাট, অর্থপাচার, সন্ত্রাস ও জ্বালাও পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে খেলা হবে। আর ফাইনাল খেলা হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।”

বিএনপির আন্দোলনকে ‘ভুয়া’ উল্লেখ করে কাদের বলেন, “তাদের সঙ্গে জনগণ নেই । দেখতে দেখতে গেল ১৪ বছর, তারা আন্দোলন করবে কোন বছর?

“১৫ বছরে পা দিয়েছে, আন্দোলন হয় না। মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না। তার মানে জনগণ না থাকলে আন্দোলন হয় না।…  ৫২ দফা ভুয়া, ২৭ দফা ভুয়া। বিএনপির ৫৪ দল ভুয়া।”

জনগণ না থাকায় আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধরনা আর নালিশ করে বলেও অভিযোগ করেন কাদের। বলেন, “ইউরোপ ও আমেরিকায় নালিশ করে তারা পেয়েছে ঘোড়ার ডিম। যেখানেই গেছে তারা ঘোড়ার ডিম পেয়েছে।

“মির্জা ফখরুল দিবারাত্রি স্বপ্ন দেখেন ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসনে যাওয়ার। দিবাস্বপ্ন দেখে কি সিংহাসনে যাওয়া যায়?” 

আব্দুল জলিলের মতো কাউকে দেখিনি

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের নেতৃত্বের প্রশংসাও করেন কাদের। তিনি বলেন, “আব্দুল জলিল দুর্দিনে দলের পতাকা ধরে রেখেছিলেন। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দল সুসংগঠিত হয়ে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। আমার রাজনৈতিক জীবনে আওয়ামী লীগের যত সাধারণ সম্পাদক দেখেছি, তার মত আর কাউকে পাইনি।”

নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁর চার সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, ছলিম উদ্দিন তরফদার, নিজাম উদ্দিন জলিল, আনোয়ার হোসেন হেলালও বক্তব্য রাখেন।

স্মরণসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।

স্মরণসভায় যোগ দেওয়ার আগে আব্দুল জলিলের কবর জিয়ারত এবং এরপর জেলা আওয়ামী লীগের নব নির্মিত কার্যালয় উদ্বোধন করেন ওবায়দুল কাদের।

স্মরণসভা শেষে নওগাঁ সাকির্ট হাউজে সড়ক বিভাগের চলমান কাজ নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।