পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায় ‘চিরকুট’ লিখে বিষপান করে থানার এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মৃত্যুর জন্য দুই থানার ওসিকে দায়ী করে তার লেখা ওই চিরকুটের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সোমবার সকালে আগাছা নিধনের বিষ কিনে পান করার পর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার পর সন্ধ্যায় ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পরিবারের সদস্যরা।
মৃত আল মামুন (৪০) ওই উপজেলার গাবগাছিয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি প্রায় ১০ বছর ইন্দুরকানী থানায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চাকরি করেছেন। দুই মাস আগে তাকে ইন্দুরকানী থেকে পিরোজপুর সদর থানায় বদলি করা হয়।
মামুনের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় মামুন তার ১৬ বছর বয়সী মেয়ে আফসানা আক্তার মীমের হাতে চিরকুটটি দেন।
ওই চিরকুটে লিখা ছিল, “আমি নিরদোশ (নির্দোষ) আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী ইন্দুরকানী থানার ওসি এনামুল হক আর পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মো. হোসেন। আমি ইন্দুরকানী থানার ওসির টাকা চুরি করি নাই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”
সেখানে আরও লেখা হয়, “আমি মরার পর আমার লাশটা পোশমর্টাম (পোস্টমর্টেম) করবেন না। লাশটা আমার মামার বাড়ি দাফোন (দাফন) করবেন।”
হাতে লেখা ওই চিরকুটে মামুনের স্বাক্ষর করা ছিল।
এ দিকে মামুন মারা যাবার খবর ছড়িয়ে পড়লে ইন্দুরকানী থানার ওসি ও পিরোজপুর সদর থানার ওসির বিচার দাবিতে ইন্দুরকানীর গাবগাছিয়া গ্রামের বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী।
মামুনের স্ত্রী মরিয়ম জানান, রোববার বিকালে পিরোজপুর সদর থানায় কাজ শেষ করে বাড়িতে ফেরার পর তার স্বামীকে খুবই বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। এরপর অনেক বার জিজ্ঞাসা করার পর মামুন তাকে জানান, মসজিদ থেকে একটি জায়নামাজ চুরির অভিযোগে পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন তাকে গালমন্দ করার পাশাপাশি শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেছেন।
মরিয়ম জানান, এ ঘটনায় মামুন কোনো অঘটন ঘটাতে পারে এই আশংকায় পরিবারের সদস্যরা পুরো বিকাল এবং রাতেও তাকে দেখে রেখেন। তবে সকালে বাজারে গিয়ে আগাছা নিধনের বিষ কিনে তা পান করেন মামুন। এরপর বাড়িতে এসে বিষয়টি স্ত্রীকে জানালে, তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, পরে তাকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে মামুনের শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় দ্রুত তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
মরিয়ম অভিযোগ করেন, ইন্দুরকানী থানায় থাকাকালীন ওসি এনামুল হক তার স্বামীর ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন করত।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পিরোজপুর সদর থানায় বদলির পরও ইন্দুরকানী থানার ওসি ওই থানার ওসির কাছে তার স্বামী সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলেছে যাতে সেখানেও তার স্বামী নির্যাতিত হন।
এ বিষয়ে পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “থানায় চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া মামুনের সঙ্গে গালমন্দ কিংবা মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
এ ছাড়া ঘটনাটি ইন্দুরকানী থানায় ঘটেছে। তাই এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান ওসি আবির।
অন্যদিকে ইন্দুরকানী থানার ওসি এনামুল হক এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, “মামুনের আত্মহত্যার বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে তাকে গালমন্দ কিংবা মারধরের কোনো বিষয় জানা নেই ।এ বিষয়ে এখানো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
চিরকুটের বিষয় তিনি বলেন, “মামুনের লেখা চিরকুটের বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছি। মামুন এ বিষয়ে আগে কখনো কোনো অভিযোগ করেননি।”
চিরকুটের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে; এ ঘটনায় কেউ দায়ী থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে হলে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।