শিশুটি জানায়, এর আগেও পড়া না পারায় একই শিক্ষক তাকে মারার পর মারধরের বিষয়ে কাউকে বলতে নিষেধ করে দেন।
Published : 19 Oct 2022, 11:46 PM
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মাদরাসা ছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগে এক শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তিনদিন পর বুধবার দুপুরে বিষয়টি জানাজানি হলে ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয় বলে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জানায়।
গত রোববার ভোরে সিদ্ধিরগঞ্জের আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানীনগর মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে।
বরখাস্তকৃত মাওলানা সাইফুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটির হেফজ বিভাগের শিক্ষক।
নির্যাতনের শিকার ১১ বছর বয়সী শিশুটি ওই বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থী।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত এ কওমি মাদরাসাটি মাদানীনগর মাদরাসা নামে অধিক পরিচিত।
আবাসিক সুবিধা থাকা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে বলে জানায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
শিশুটির বাবা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ছেলে গত ১৩ মাস ধরে মাদরাসাটির বোর্ডিং-এ থেকে হেফজ বিভাগে পড়ে। গত রোববার ফজর নামাজের পর পড়া ভুলে যাওয়ায় ওই বিভাগের শিক্ষক হাফেজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম ছেলেকে বেত দিয়ে বেধড়ক পেটায়।”
নির্মমভাবে নির্যাতনের পরও মাদরাসা থেকে অভিভাবকদের জানানো হয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, “নির্যাতনের ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য ছেলেকে শাসানও ওই শিক্ষক। ভয়ে সে আমাদের কিছু বলেনি। সপ্তাহে একবার ছেলের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ থাকে। গত মঙ্গলবার বিকালে তার মা মাদরাসায় দেখা করতে গেলে ছেলে কান্নাকাটি করে মাকে সব কথা জানায়।”
পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী শিশুটির বাবা আরও বলেন, “বড় ছেলে হাইস্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ে। ছোট ছেলেকে মাদরাসায় পড়তে দিয়েছিলাম। শিক্ষকরা শাসন করতে পারেন কিন্তু যেভাবে আমার শিশু ছেলেটাকে মারা হয়েছে সেটা কেউ করে না।”
শিশুটির ভাষ্য, “এর আগেও পড়া না পারায় উনি (শিক্ষক সাইফুল ইসলাম) মারছেন। মারধরের কথা কাউকে বলতে নিষেধ করে দেন।”
রোববার মারার পর তার কাছে থাকা ওষুধ খেয়ে ব্যথা কিছুটা কমিয়েছে বলে জানায় ওই শিশু।
বিকালে নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রকে মাদরাসা থেকে বাড়িতে নিয়ে যান তার অভিভাবক।
শিশুটির বাবা বলেন, “আমি ছেলেকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষকরা যদি দায়িত্ব নেয় তাহলে মাদরাসায় আবার পাঠাবো। না হলে এই মাদরাসায় আর পড়াবো না।”
এ বিষয়ে কথা বলতে মাদরাসায় গিয়ে শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
পাওয়া যায়নি মাদরাসার মুহতামিম (অধ্যক্ষ) হাফেজ মাওলানা ফয়জুল্লাহকেও।
এ সময় সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবুল ফাতাহ।
তিনি দাবি করেন, “ঘটনা রোববার ঘটলেও বিষয়টি মাদরাসার কেউ জানতেন না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অভিভাবক পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। বুধবার দুপুরে এক জরুরি সভার সিদ্ধান্তে শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে বরখাস্ত করেছেন মাদরাসার অধ্যক্ষ। একইসঙ্গে এই ধরনের নির্যাতনের ঘটনা যাতে আগামীতে কেউ না করেন সেই ব্যাপারে মাদরাসার সব বিভাগের প্রধানকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।”
এ ধরনের কাজে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সমর্থন নেই দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ ঘটনায় যদি অভিভাবকরা আইনগত ব্যবস্থা নেন তাহলে আমরা সহযোগিতা করবো।”
এদিকে, খবর পেয়ে ঘটনার তদন্তে মাদরাসায় যায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে থানার ওসি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলেছি। তারা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”