জোয়ারে সুন্দরবনের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ঝুঁকিতে বন্যপ্রাণী

জোয়ারের পানির উচ্চতা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে রোববার দুপুরে বেশি ছিল।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2022, 06:39 PM
Updated : 14 August 2022, 06:39 PM

সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যপ্রাণির ঝুঁকির আশঙ্কা করছে বনবিভাগ।

গত তিন দিন ধরে সুন্দরবন বেষ্টিত প্রধান প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ছয় থেকে সাত ফুট উচ্চতায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

সুন্দরবনের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। সাগরের কোলঘেঁষা পশুর, শিবসা, আড়-পাঙাশিয়াসহ প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোতে গত তিন দিন ধরে পানির উচ্চতা অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

“এর মধ্যে রোববার দুপুরে জোয়ারের পানির উচ্চতা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ছিল।”

তিনি জানান, সুন্দরবনের দুবলা, কচিখালী, কটকা, নীলকমল এলাকায় রোববারের জোয়ারের পানির উচ্চতা ছিল ছয় থেকে সাত ফুট। এতে পশুর নদের তীরে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি তলিয়ে যায়।

এ বন কর্মকর্তা বলেন, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনটির প্রাণিকুল। সুন্দরবনের সব এলাকাতে কমবেশি বন্যপ্রাণির বিচরণক্ষেত্র আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিচরণক্ষেত্র কটকা ও কচিখালীতে।

“এখানে হরিণ, বাঘ ও শূকরের বড় আবাসস্থল। হরিণ, বাঘ ও শূকরের সদ্যজাত শাবক থাকলে সেগুলোর মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। এসব এলাকার বন্যপ্রাণির মৃত্যু হয়েছে কিনা তা আমরা এখনও জানতে পারিনি।”

তিনি আরও বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। দিন দিন পানির উচ্চতা বাড়ছে। সুন্দরবনের প্রাণিকুল রক্ষার বিষয়টি বনবিভাগকে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রাণিকুলকে রক্ষা করতে সুন্দরবনের কম্পার্টমেন্টগুলোতে বড় বড় মাটির উঁচু ডিবি তৈরি করার পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। পানি বাড়লে যেন প্রাণিকুল এসব মাটির উঁচু ডিবিতে আশ্রয় নিতে পারে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্ণিমা তিথিতে উপকূলীয় বাগেরহাটের প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ পৌরসভাসহ নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল পূর্ণিমা তিথির জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। গত তিন দিনের জোয়ারের পানিতে এসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

পানি রাস্তাঘাট তলিয়ে দোকানপাটেও উঠে যাচ্ছে। এতে এসব এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। স্থানীয়রা পানগুছি নদীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে মোরেলগঞ্জ পৌরসভাকে বাঁধের আওতায় আনতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, মোরেলগঞ্জ পৌরসভার খলিফাপট্টি, পাদুকাপট্টি, মেইন রোড, কলেজ রোড, এসিলাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কুঠিবাড়ি এলাকায় পানিতে তলিয়ে যায়। ভাটার সময় পানি আবার নেমে যায়।

স্থানীয় মইনুল হোসেন বলেন, “প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলে মোরেলগঞ্জ পৌরসভা এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। দোকানপাটে জোয়ারের পানি ওঠে। পানি ওঠা বন্ধ করতে একটা বেড়িবাঁধ দরকার।

নদীতীরবর্তী বাঁধ নির্মাণ করতে সরকারের কাছে দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পূর্ণিমা তিথিতে উপকূলীয় বাগেরহাটের ভৈরব, পানগুছি, বলেশ্বর, পশুর ও মোংলা নদীতে পানির চাপ বেড়েছে। এসব প্রধান নদ-নদীগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে আড়াই থেকে তিন ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের পানিতে নদীতীরবর্তী বেশ কিছু নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে সাময়িকভাবে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে এটা ঠিক, তবে ক্ষয়-ক্ষতি হবে না। ভাটা এলে এই পানি আবার নেমে যাচ্ছে।”