ঈদের পর ছুটি না থানায় ঘোরাঘুরিতে মানুষ কম সময় দিয়েছে বলে ধারণা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের; তবে আগামী সপ্তাহে পর্যটন স্পটে জনসমাগম বাড়ার আশা করছেন তারা।
Published : 24 Apr 2023, 12:08 AM
ঈদুল ফিতরের টানা পাঁচ দিনের ছুটিতেও পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত আশানুরূপ পর্যটক সমাগম হয়নি বলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর অল্প সময়ে পটুয়াখালীসহ দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে যাওয়া যাচ্ছে। কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে যাওয়াও তাই সহজ হয়েছে।
সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটায় পর্যটকদের সেবায় প্রস্তুত রয়েছেন হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীরা।
এবার ছুটি শুরু হয়েছে ১৯ এপ্রিল। পাঁচ দিনের ছুটি শেষ ২৩ এপ্রিল রোববার। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষ এসেছেন কুয়াকাটায়।
এ বছর ঈদের আগেই বেশি ছুটি হওয়ায় ঘোরাঘুরিতে মানুষ কম সময় দিয়েছে বলে ধারণা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। তবে আগামী সপ্তাহে পর্যটন স্পটে জনসমাগম বাড়ার আশা করা হচ্ছে।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ, মহিপুর থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন।
ঢাকা থেকে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটক পটুয়াখালীর সন্তান মো. শামিম হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়ক পথে আমরা বন্ধুরা মিলে ঈদের পরে এই প্রথম কুয়াকাটায় ঘুরতে এসেছি। অনেক মজা করছি। সাগরের বিশালতা দেখে মুগ্ধ আমরা। বহু স্থানে ঘুরেছি। দীর্ঘ সৈকতে সময় কাটাচ্ছি। এ এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা।”
যশোর থেকে পরিবার নিয়ে আসা পর্যটক মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা পরিবারের সকলে এবার ঈদের ছুটিতে ঘুরতে এসেছি কুয়াকাটায়। স্থানটি মনোমুগ্ধকর। এখানে দীর্ঘ সী-বিচ, বিশাল সমুদ্র। ফাতরার বন, ঝাউবাগান ঘুরলাম। খুব ভালো লাগছে। এখানে না আসলে বোঝাই যায় না প্রকৃতির লীলা।”
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পরিদর্শক মো. হাসনাইন পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবকটি স্পটে কয়েক স্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ, সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করছেন।
তিনি জানান, ঈদ পরবর্তী সময়ে পর্যটকদের ভিড় হবে মাথায় রেখেই ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য বা জনবল মোতায়েন করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে থানা পুলিশের সদস্যদেরও।
“পর্যটকদের যেকোনো ধরনের পরামর্শ সমস্যা সমাধানের জন্য জিরো পয়েন্টে আমাদের হেল্প ডেস্ক রয়েছে। কুয়াকাটা জুড়ে বিশেষ করে বিচে সার্বক্ষণিক মাইকিং করে সবাইকে দিক নির্দেশনাসহ সতর্ক করা হচ্ছে।”
এ ছাড়া ফায়ার সাভির্সের একটি দল এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম কাজ করছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এ বছর যেভাবে পর্যটক সমাগম হবে বলে ধারণা করেছিলেন তা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিচের কাছে এবং একটু দূরে সবগুলো হোটেল-মোটেল মিলিয়ে পঁচাত্তর ভাগ বুকিং রয়েছে। তবে এর আগের বছর শতভাগ বুকিং ছিল।”
তার ধারণা, আগামী বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার আরও পর্যটক সমাগম হবে। আগামী রোববার একদিন ছুটি নিলে আগের শুক্র ও শনিবার এবং পরের পহেলা মে মিলে চার দিন ছুটি হবে। তাই আগামী বৃহস্পতিবার আরেক দফা পর্যটক আসার সম্ভাবনা আছে।
স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের ছুটি পেয়ে পর্যটকরা ঘুরতে এসেছেন ঠিকই, কিন্তু এবারের ছুটি ঈদের আগে; তাই পর্যটক একটু কম হয়েছে। আগামী শুক্র ও শনিবার পর্যটক সমাগম একটু বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কুয়াকাটা গ্রিন ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কুয়াকাটা সমুদ্র বাড়ী রিসোর্টের পরিচালক আবুল হোসেন রাজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পর্যটকদের জন্য আমাদের গাইডগুলো আগে থেকেই বুকিং ছিল। গাইডের সদস্যরা পর্যটকদের সেবা দিতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন স্পটে ভ্রমণ করতে স্পিডবোটগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে।”
তিনি জানান, ঈদের পর থেকে মুখরিত হয়ে উঠেছে দর্শনীয় স্থান নারিকেল বীথি, ফয়েজ মিয়ার বাগান, জাতীয় উদ্যান (ইকোপার্ক), শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার। ভ্রমণের জন্য রয়েছে সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত কুয়াকাটার পশ্চিমে ফাতরার বন, গঙ্গামতি, লাল কাকড়ার চর, কাউয়ার চর, লেম্বুর চর, শুটকি পল্লী।
সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে মনমুগ্ধকর সমুদ্রের বুকে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার বেলাভুমি–সব স্থানেই পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্বাচ্ছন্দে।
কুয়াকাটা ভূইয়া মার্কেটের সভাপতি মো. নিজাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনার দুই বছরে পর্যটকরা তেমন আসেনি কুয়াকাটায়। গত বছর ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় হয়েছে। তবে এ বছর পর্যটকদের যে সমাগম আশা করেছিলাম তেমন হয়নি।
তার পরেও ছোট-বড় দোকানিরা পর্যটকদের কাছে বিকিকিনি করে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানান নিজাম।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোশিয়েসন সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হোটেল মোটেল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পর্যটকদের সুবিধার্থে সকল ধরনের সেবা ও নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
“এখানে শতাধিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। ঈদ পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু পর্যটকদের সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ঈদের পরের দিন আজ তাই কাছাকাছি মানুষের আনাগোনা, তবে বিকাল থেকে বেশ কিছু পর্যটন বাহির থেকে এসেছে।”
তিনি আরও জানান, ঈদের আগে ছুটি ছিল বলে এ বছর পর্যটক অনেক কম। তবে আগামী বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ঢাকাসহ অন্যান্য স্থান থেকে বেশ কিছু পর্যটক আসবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
ভালো মানের হোটেল-মোটেল, কটেজ অর্ধেক বুকিং আছে বলে তিনি জানান।