ঢাকা থেকে বরিশালগামী একটি লঞ্চে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক নারী। ওই লঞ্চে শিশুটি এবং তার মা-বাবাকে আজীবন বিনা খরচে যাতায়াতের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে মাঝ নদীতে ‘এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০’ নামের লঞ্চে ছেলে শিশুটির জন্ম হয় বলে লঞ্চের সুপারভাইজার জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন।
লঞ্চে সন্তান প্রসব করা ওই নারীর নাম ঝুমুর বেগম। তার স্বামী হারিসুর রহমানের বাড়ি জামালপুরে এবং তিনি নারায়ণগঞ্জে একটি মুরগির দোকানের কর্মচারী। আর ঝুমুর বরিশাল সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের শোলনা গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে।
ঝুমুরের সন্তান প্রসবের নির্ধারিত সময় ছিল আরও ২২ দিন পর। সেই প্রস্তুতি নিয়েই স্বজনদের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। এটা তার দ্বিতীয় সন্তান।
ঘটনার বর্ণনায় লঞ্চের সুপারভাইজার জিল্লুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাতে লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশাল নৌ-বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে রাত সাড়ে ৯টার দিকে লঞ্চের প্রথম তলার ডেকের যাত্রী ওই নারীর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। তখন তাকে লঞ্চের কেবিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো।
“কিন্তু ওই অবস্থায় সিঁড়ি পেরিয়ে যাওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা ছিলো না তার। তাই তাকে ডেকে রাখারই সিদ্ধান্ত হয়। পরে ডেকের সকল পুরুষ যাত্রীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর লঞ্চের এক নারী যাত্রী ও বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন নার্সের সহায়তায় ওই নারী সন্তান প্রসব করেন।”
লঞ্চের ডেকে ওই যাত্রীর সঙ্গে তার ভাই ও ভাবি ছিল বলে এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ এর সহকারী সুপারভাইজার হৃদয় খান জানান। চিকিৎসকের দেওয়া সময় অনুযায়ী সন্তান প্রসবের জন্য তার কাছে ২২ দিন ছিলো। তাই তিনি লঞ্চে করে বাবার বাড়ির দিকে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু পথেই শিশুটির জন্ম হয়।
হৃদয় বলেন, শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে লঞ্চ বরিশাল নৌ-বন্দরে ভিড়লে নবজাতকের ছবি তুলতে ও ভিডিও ধারণ করতে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলো। মোবাইল ফোনের ক্যামেরার আলোতে শিশুটি ঠিকমতো চোখও খুলতে পারছিলো না। পরে অনেক কষ্টে উৎসুক যাত্রীদের ভিড় সামলে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওই নারী তার নবজাতককে নিয়ে লঞ্চ থেকে নেমে যান।
লঞ্চে জন্ম নেওয়ায় শিশুসহ তার বাবা ও মা আজীবন ফ্রিতে যাতায়াত করতে পারবেন জানিয়ে এ সহকারী সুপারভাইজার বলেন, “লঞ্চ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আওলাদ শিপিং লাইন্সের পরিচালক মো. যুবরাজের পক্ষ থেকে শিশুটিকে নগদ ১০ হাজার টাকা উপহারও দেওয়া হয়েছে।”