বরিশাল জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের ৬ নেতা মনোনয়ন চান

এক সিটি কর্পোরেশন, ছয় পৌরসভা, ১০ উপজেলা ও ৮৮ ইউনিয়ন পরিষদের ১২৯৩ জন প্রতিনিধি বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেবেন।

সাইদ মেমনবরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2022, 07:45 PM
Updated : 9 Sept 2022, 07:45 PM

বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন চেয়ে আওয়ামী লীগের ছয় নেতা আবেদন করেছেন।

বৃহস্পতিবার শেষ দিন পর্যন্ত এই ছয় নেতা দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে ফরম জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনিসহ বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক মো. মইদুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খান আলতাফ হোসেন ভুলু, দলের মহানগর সহ-সভাপতি ভিপি আনোয়ার হোসাইন, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আনিসুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ নেতা দেলোয়ার হোসেন দিলু।

চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ছয় নেতা প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও দলীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকে অন্যরা মেনে তার পক্ষে কাজ করবেন বলে তারা জানিয়েছেন।

অন্য কোনো রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী দেওয়া না হলেও স্বতন্ত্র হিসেবে একজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা লেখক ও সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকব। এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্বান্ত।”

বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক ও বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মইদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। দলীয় প্রধান যদি তাকে মনোনয়ন দেন তাহলে নির্বাচন করবেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলে নির্বাচন প্রার্থী হবেন না।

সাবেক চেয়ারম্যান খান আলতাফ হোসেন ভুলু এবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি প্রথমে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তাকে বাদ দিয়ে মো. মইদুল ইসলামকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টিও কেন্দ্র থেকে জানানো হয়নি।

“পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে খবর জেনে ঢাকায় গণভবনে গিয়ে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। তখন সভানেত্রী বলেছেন পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন।”

তাকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নির্দেশ দেন বলে দাবি করেন প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ। তবে এবার দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেলে এবার আর স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন না বলে জানান।

মনোনয়ন চাওয়া মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তার ইচ্ছায় দলীয় প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় ফরম জমা দিয়েছেন। আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনীত করবে।”

দল মনোনয়ন না দিলে নির্বাচন করবেন না জানিয়ে বলেন, যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষে কাজ করবেন।

একবার বরিশাল সদর আসনের, একবার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং তিনবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি জানিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ভিপি আনোয়ার হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিবারই দলের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের অনুরোধে দলীয় মনোনয়ন চাননি।

কিন্তু এবার মনোনয়ন চেয়েছেন জানিয়ে সাবেক এ ছাত্রনেতা বলেন, “দলের প্রতি আমার ত্যাগের বিষয়টি সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জানেন। তাই আমি আশবাদী।”

তিনি বলেন, “তফসিল ঘোষণার পর আমি মনোনয়ন চাওয়ার বিষয় নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে জানিয়েছি।”

তিনি দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার জন্য তাকে সমর্থন দিয়েছেন বলে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র সংসদ থেকে ১৯৯০ সালে ভিপি নির্বাচিত এ নেতা জানিয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আনিসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ফরম জমা দিয়েছি। ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত দলের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। কখনও দলের বিরুদ্ধে যাইনি। দলের প্রতি আমার ত্যাগের পুরস্কার পাব।”

দল মনোনয়ন না দিলে তিনি নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের দীর্ঘ ১৭ বছরের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া যোগ্যতা আমার রয়েছে। তবে দল না দিলে নির্বাচন করব না। দল যাকে দেবে তার পক্ষে কাজ করব।”

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আলোচনায় থাকলেও শেষ মহূর্তে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেননি বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু, বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ওবায়দুল্লাহ সাজু।

দলীয় ফরম সংগ্রহ করার পরেও জমা দেননি জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।

এছাড়া চেয়ারম্যান পদে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বরিশাল-১ ও ২ আসনের সাবেক এমপি তালুকদার মো. ইউনুস প্রার্থী হবেন বলে গুঞ্জন ছিল। কিন্তু তিনিও আবেদন করেননি।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা এ নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

একইভাবে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এ সরকারের অধীনে কোনো ‘পাতানো নির্বাচনে’ তাদের দলের কোনো নেতা অংশ নেবেন না।

দ্বিতীয়বারের মতো এ নির্বাচনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সরক্ষিত সদস্য পদে ভোট দেবেন এক সিটি কর্পোরেশন, ৬ পৌরসভা, ১০ উপজেলা পরিষদের এবং ৮৮ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা। এ হিসাবে বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে এক হাজার ২৯৩ জন জনপ্রতিনিধি ভোট দেবেন।

বরিশাল জেলা নির্বাচন অফিসার মো. নুরে আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভোটার তালিকার খসড়া প্রস্তুত করে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। এতে ভোটার সংখ্যা হলো ১ হাজার ২৯১।

নির্বাচন অফিসার জানান, নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে মনোনয়নপত্র বিতরণ চলছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে সাতটি মনোনয়নপত্র বিতরণ করেছেন। জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকেও প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। সেখান থেকে কতজন ও কোন কোন পদের মনোনয়নপত্র বিতরণ করেছেন সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।