ফরিদপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধার জায়গা দখলের অভিযোগ

এ ব্যাপারে ইউএনও ও থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সোলার সাহা।

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2024, 02:15 PM
Updated : 16 March 2024, 02:15 PM

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় প্রকাশ্যে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

উপজেলার কামারখালী বাজারের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা দ্বিজেন্দ্রনাথ সাহার ১৫ শতাংশ জমির ওপর শুক্রবার সকালে দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে সোলার সাহা। 

তিনি বলেন, “বাবা-মা দুজনই মারা গেছেন, আমি চাকরি সূত্রে চট্টগ্রামে থাকি। বাড়িতে কেউ থাকে না। ফলে জায়গাটি পরিত্যক্ত ছিল। আমি শুক্রবার বাড়িতে আসি। তার কিছু সময় পরেই খবর পাই, আড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা খলিল শেখ ও তার লোকজন টিনের বেড়া ও ঘর তুলে জায়গাটি দখলে নিচ্ছে।”  

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সোলার সাহা।  

স্থানীয়রা জানান, দ্বিজেন্দ্রনাথ সাহা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। ২০০২ সালে মারা যান তিনি। মৃত্যুর আগে তার নিজ নামে কামারখালী বাজারে ১৫ শতাংশ জমি রেখে যান। ওই জমিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে ছিল। কিছুদিন আগে তার স্ত্রীও মারা যান। একমাত্র সন্তান সোলার সাহা চাকরির কারণে চট্টগ্রামে থাকেন। 

আড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা খলিল শেখ এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি তিনি দ্বিজেন্দ্রনাথের জমির পাশে একটু জমি কিনেছেন। 

সোলার সাহা অভিযোগ করে বলেন, “আমি নির্মাণকাজ বন্ধ করতে গেলে আমাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে থানায় ফোন দিলে পুলিশ এসে কাজ বন্ধ করে। পরবর্তীতে পুলিশ চলে গেলে পুনরায় তারা আবার কাজ শুরু করে। পরে আবার পুলিশ এলে তারা চলে যায়।” 

কামারখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান চৌধুরী টারগেট বলেন, “আমরা সবাই জানি, এই জায়গাটা মুক্তিযোদ্ধা দ্বিজেন্দ্রনাথ সাহার। তিনি মারা যাওয়ার পর জায়গাটা পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরাও বাইরে থাকে। 

“শুক্রবার সকালে শুনতে পাই, জায়গাটি দখল করছে খলিল শেখ ও তার লোকজন। ওই মুহূর্তেই আমি সেখানে যাই, গিয়ে দেখি দখলের মহোৎসব চলছে। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু তারা কোনো কথাই শুনেনি। আমার সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটিও হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধার জায়গা এভাবে প্রকাশ্যে দখল করে নেবে এটা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর।” 

এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন মনিরুজ্জামান চৌধুরী।

কামারখালী বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম মণ্ডল বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার জমি দখল করে নিচ্ছে এমন খবর পাই। পরে মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে থানায় ফোন দিতে বলি। পুলিশ এসে কাজ বন্ধ করে। প্রকাশ্যে এমন বিষয় খুবই দুঃখজনক।”

কামারখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাকিব হোসেন চৌধুরী ইরান বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার জমি জোরপূর্বক দখল করা হয়েছে। প্রকাশ্যে যেভাবে খলিল শেখ জমি দখল করে নিয়েছে তা খুবই দুঃখজনক।

“স্থানীয় একটি মহল বিভিন্ন মানুষের জমি দখলের সঙ্গে জড়িত। এর আগেও একাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারের জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে। কিছু উদ্ধার করতে পেরেছি, কিছু পারিনি। জমি দখলের ঘটনা অহরহ ঘটছে।” 

এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
মধুখালী থানার ওসি মো. মিরাজ হোসেন বলেন, “সংবাদ পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা ছেলে সোলার সাহা অভিযোগ দিয়েছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” 

তবে জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খলিল শেখ। তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার কোনো জায়গা আমি দখল করিনি। আমার ক্রয়কৃত জায়গায়ই আমি স্থাপনা নির্মাণ করেছি।”