শরীয়তপুর পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী; তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
Published : 10 Jun 2023, 12:08 AM
শরীয়তপুরের জাজিরায় এক ব্যবসায়ীকে থানায় আটকে নির্যাতনের পর ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় বিচার চেয়ে শরীয়তপুর পুলিশ সুপার সাইফুল হকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী।
অভিযোগ তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।
গত ২ জুন করা ওই অভিযোগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) রাসেল মনির এবং পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তারা।
ভুক্তভোগী আবু জাফর ওরফে ঠাণ্ডু চোকদার উপজেলার নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা থেকে জানা গেছে, গত ২১ মে জাজিরার আহাদী বয়াতিকান্দি গ্রামের শাহীন আলম শেখ ও তার সহযোগী ছোট কৃষ্ণনগর গ্রামের সেকান্দার মাদবরের কাছ থেকে ১৭ হাজার ডলার, টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়। এ ঘটনায় গত ২৩ মে ৯ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন শাহীন আলম।
মামলায় নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফরের চার আত্মীয়কে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন জাফরের চাচা রশিদ চোকদার, তার ছেলে বকুল চোকদার, জাফরের আরেক চাচা বাদশা চোকদার ও তার ছেলে সাদ্দাম চোকদার।
পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া অভিযোগে আবু জাফর উল্লেখ করেছেন, গত ৩১ মে রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর তাকে চার আত্মীয়ের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এর বিনিময়ে ওই আত্মীয়দের মালিকানাধীন নাওডোবা বাজারের দুটি দোকান তার নামে লিখে দেওয়ার কথা বলা হয়।
এতে রাজি হননি আবু জাফর। তখন দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে মারধর করেন। ওসির কক্ষে আটকে চোখ বেঁধে দুই ঘণ্টাব্যাপী পেটানো হয়। এক পর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তার চাচা রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরদিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখায় নিজের হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন আবু জাফর। পরে চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুরের কাছে দেওয়া হয়। চেকগুলোতে শহীদুল ইসলামের নাম লিখে রাখা হয়।
শহীদুল পূর্বের ছিনতাই মামলার বাদী ও পুলিশের পরিচিত বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী আবু জাফর।
আবু জাফর সাংবাদিদের বলেন, পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে পাঁচটি চেক উদ্ধারও করেছেন তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা।
অভিযোগের বিষয়ে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি মোস্তাফিজুর বলেন, “আমরা কাউকে উঠিয়ে এনে নির্যাতন করিনি। কারও চেক সই করে আমরা কেন নেব? এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
অপরদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বদিউজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
পুলিশ সুপার সাইফুল হক মোবাইল ফোনে বলেন, তদন্ত কমিটি কাজ করছে। প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত এই মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না।