কেন ফেরিটি দুর্ঘটনায় পড়ল, তা নিয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা।
Published : 17 Jan 2024, 08:39 AM
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের কাছে ঘন কুয়াশার মধ্যে যানবাহন নিয়ে পদ্মায় ডুবে গেছে একটি ফেরি।
ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বুধবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে বিআইডব্লিউটিসির ফেরি রজনীগন্ধা-৭ ডুবে যাওয়ার খবর পান তারা।
এরপর আরিচা ফায়ার স্টেশনের ডুবুরি ইউনিট সেখানে গিয়ে কাজ শুরু করে। ঢাকার সিদ্দিক বাজার থেকে আরো একটি ডুবুরি ইউনিট ঘটনাস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা সেখানে ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে কারো মৃত্যুর তথ্য মেলেনি। তবে ফেরির সেকেন্ড ড্রাইভার হুমায়ূন কবিরের (৩৯) খোঁজ মেলেনি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, ইউটিলিটি ফেরি 'রজনীগন্ধা' মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে দৌলতদিয়া থেকে সাতটি ছোট ট্রাক এবং দুটি বড় ট্রাক নিয়ে পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। কিন্তু পাটুরিয়ার কাছাকাছি গিয়ে ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে নোঙ্গর করে। সকাল আবার রওনা হয়ে ৫ নম্বর ঘাটের কাছাকাছি গিয়ে সেটি দুর্ঘটনায় পড়ে।
কেন ফেরিটি দুর্ঘটনায় পড়ল, তা নিয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একটি ছোট মালবাহী জাহাজ ফেরিটিকে ধাক্কা দিলে সেটি ডুবে যায়।
“ট্রাকের কর্মী ও ফেরির কর্মীরা ছাড়া আর কোনো যাত্রী ছিল বলে আমার কাছে এখন পর্যন্ত তথ্য নেই। সকলকে উদ্ধার করা হয়েছে, শুধু ফেরির চালকের সহকারীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”
তবে ফেরিতে থাকা এক ট্রাকের মালিক নাজমুল ইসলাম উদ্ধার পাওয়ার পর পাটুরিয়া ঘাটে সাংবাদিকদের বলেন, “কোনো বাল্কহেড ধাক্কা দেয়নি। নিচ দিয়ে পানি উঠে ডুবে গেছে।”
ট্রাকে করে মালামাল নিয়ে চাঁদপুর যাচ্ছিলেন নাজমুল। ফেরি ডুবতে শুরু করলে আশপাশে থাকা কয়েকটি নৌযান ফেরির আরোহীদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে। নাজমুলসহ কয়েকজনকে একটি ট্রলারে তুলে নেওয়া হয়।
এরমধ্যে নয়টি ট্রাকসহ উল্টে যায় ফেরি রজনীগন্ধা-৭। দীর্ঘ সময় ফেরির একটি অংশ উল্টো অবস্থায় ভাসতে দেখা গেলেও পরে সেটি ধীরে ধীরে ডুবে যায়।
উদ্ধার পাওয়া আরোহীদের মধ্যে এক ট্রাকের কর্মী শহিদুল ইসলাম এ ঘটনার জন্য ফেরির কর্মীদের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “পানি উঠে ডুবে গেছে। ঘাটের ২০০ মিটারের কাছে, তাও ডুবে গেছে। নিচ দিয়ে পানি উঠছে। ফেরিওয়ালারা ঘাট কর্তৃপক্ষ কাউকে জানায়নি। তারা এখন বলছে বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কর্যালয়ের ডিজিএম শাহ খালেদ নেওয়াজ বলেন, “বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবছে– এতটুকু তথ্যই আমার কাছে আছে। নিচ দিয়ে পানি উঠে ফেরি ডোবার যে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীরা করছেন, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।”
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়ায় পৌঁছেছে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ 'হামজা'। আরেক উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তমও মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাট থেকে রওনা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তাফা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উদ্ধার কার্যক্রমের তদারকি করতে ইতোমধ্যে রওনা দিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌবাহিনী ডুবুরি দলও সেখানে তল্লাশিতে যোগ দিয়েছে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে।
এ দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে দুটো তদন্ত কমিটি করেছে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ।
এর আগে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর সতেরটি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার ও আটটি মোটরসাইকেল নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে ডুবে যায় রোরো ফেরি শাহজালাল।