নাটোরে পেঁয়াজের ডগা কেটে নারীদের বাড়তি আয়

“সকাল থেকে দুপুর কাজ করলে এক থেকে দেড়শ টাকা; বিকাল থেকে সন্ধ্যা কাজ করলে প্রায় দুই থেকে আড়াইশ টাকা পাওয়া যায়।”

নাটোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2023, 03:33 AM
Updated : 8 March 2023, 03:33 AM

সংসার, সন্তান দেখাশোনাসহ বাড়ির নানা কাজের মধ্যে সামান্য কিছু আয়ের জন্য নাটোরে গৃহস্থ নারীরা পেঁয়াজের ডগা কেটে বাড়তি উপার্জন করছেন। মণপ্রতি ৫০ টাকা উপার্জনে খুশি গ্রামের নিম্নআয়ের নারীরা।

রোববার নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নের ঠাকুর লক্ষ্মীপুর এলাকায় ঘুরে প্রায় ১০টি পেঁয়াজের ক্ষেতে নারীদের রোদের মধ্যে পেঁয়াজের ডগা কাটতে দেখা যায়।

এ সময় মাঠে বসে পেঁয়াজের মাথা বটিতে কেটে বাছাই করছিলেন এলাকার ষাটোর্ধ্ব মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ির কাজ শেষ করে এসেছি, যোহরের আযানের আগেই চলে যাবো। দুই থেকে আড়াই মণ যা হয় হবে।

ঠাকুর লক্ষ্মীপুরে আসমা খাতুন মনোয়ারা বেগমের পাশে বসেই পেঁয়াজ বাছাই করছিলেন। তিনি বলেন, “এই এলাকার অনেক মহিলারা আছেন যারা বাড়ির কাজ শেষে পেঁয়াজ কাটা ও বাছাইয়ের কাজ করে। পেঁয়াজ কেটে বাছাইয়ের জন্য মণপ্রতি ৫০ টাকা করে পাই।

এই মাঠের অন্য ক্ষেতে কাজ করছেন সেপালি, জোহরা, হাফেজারা। তারা জানান, গ্রামে শুধু দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের নারীরা নয় গৃহস্থ বাড়ির বউয়েরা পেঁয়াজ কেটে আয় করছে।

পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের আয় অনেক কম হলেও এটা বাড়তি উপার্জন; বাড়ির অন্যান্য কাজ শেষে অবসর সময়ে কাজের সুযোগ ভাল বলে জানান তারা।

জোহরা বেগম বলেন, “সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করলে এক দেড়শ টাকা; আবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত করলে প্রায় দুই থেকে আড়াইশ টাকা পাওয়া যায়।

“এই টাকা দিয়ে বাচ্চাদের হাত খরচ, সংসারে এইটা ওইটা কিনেও কিছু জমানো যায়। কাজের সুযোগ থাকলে বসে থাকে না এ এলাকার মেয়েরা। নলডাঙ্গার মেয়েরা খুবই কর্মঠ।”

এ সময় হাফেজা বেগম বলেন, “কাজ করতে করতে গরম আর গায়ে লাগে না। আর রোদে তো ভিটামিন আছে। কামাইও হচ্ছে, শরীরটাও ভালো থাকবে।”

নারীদের পারিশ্রমিক একটু কম বলে জানান পেঁয়াজের মাঠে কাজ করতে থাকা তাহের ও রানা।

তাহের বলেন, নিজেদের খেয়ে ৫০০ টাকা দিনে শুধু পেঁয়াজ জমি থেকে তুলে দেই। পেঁয়াজ কাঁটা ও বাছাইয়ের কাজ করেন নারীরা। তাদের এই কাজে কষ্ট আছে; কিন্তু বাড়ির কাজের পাশাপাশি এটা তাদের উদ্বৃত্ত আয়।

পাশের জমিতে পেঁয়াজ বীজের (কলি) পরিচর্যা করছিলেন রায়হান ও আজম। তারা জানান, মৌমাছি কম আসায় ফুল বেশি বাড়েনি, যত্নাদি করে কতটুকু হয়!

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বাড়ির কাজের পাশাপাশি বাড়তি উপার্জনের জন্য অনেক মহিলা অবসরে পেঁয়াজের মাঠে কাজ করেন। এতে এলাকার নিম্ন আয়ের নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

তিনি জানান, এবার জেলাজুড়ে চার হাজার ২১৮ হেক্টর জমিতে শীতকালীন পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। যার মধ্যে দুই হাজার ৪২০ হেক্টর জমি নলডাঙ্গায়। এবার পেঁয়াজ বিঘা প্রতি ৬৭ মণ হারে উৎপাদন হয়েছে।

সাতটি উপজেলায় কন্দ তাহিরপুরী (মুড়িকাটা) পেঁয়াজের চাষ ৯৬২ হেক্টর জমিতে আর চারা বা বীজ উৎপাদনের জন্য তিন হাজার ২৫৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। নাটোরের শীতকালীন পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এলাকার পাইকারি বাজারগুলো থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যাচ্ছে।

দাম না থাকায় লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না পেঁয়াজ চাষিরা বলে জানান ঠাকুর লক্ষ্মীপুর বাজারের পেয়াজ চাষি গোলাম মোস্তফা।

এক বিঘা জমিতে বীজ, সার, কীটনাশক, পরিচর্যা ও শ্রমিক খরচেই ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা কৃষকের খরচ হয়ে যায়। বিঘাতে ৬০ থেক ৭০ মণ পেঁয়াজ হয়; কিন্তু বেচতে হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে।

যদিও মুড়িকাটা পেঁয়াজে কৃষকদের কিছু লাভ হবে কারণ গতবার চারা পেঁয়াজের দাম কম ছিল। বাজারে গত দুই সপ্তাহ ৫০০-৭০০ টাকা বাজার গেলেও এখন এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকা পেঁয়াজের মণ।

ঠাকুর লক্ষ্মীপুর পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ী মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, “গত দুই সপ্তাহে ৭০০ টাকা বাজার ছিল, এ সপ্তাহে মানভেদে প্রতি মণ পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়। এলসি বন্ধ হলেই একদিনেই বাজার দুই হাজার টাকা হয়ে যাবে।”