বন্যায় সব হারানো মানুষের হাহাকার আর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় দুর্গত জনপদে চলছে ঘাম-ছোটানো সংগ্রাম।
গত ১৬ জুন প্রতিদিনের মত রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যান কলমাকান্দা উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের অনুশীলা ঘাগ্রা, ফজিলা রোবানরা।
অনুশীলা বলেন, “গভীর রাতে হঠাৎ চারদিকে মানুষের আহাজারি আর কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি বন্যার পানিতে ঘরদোর সয়লাব। অবস্থা বেগতিক দেখে নাতিকে কোলে নিয়ে দৌড়ে বাড়ির সামনে যাই। উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিই।
সেই রাতে বানের পানি অনুশীলাদের জীবনে রেখে যায় গভীর ক্ষত।
বাঁধ ভেঙে গেলে বানের পানি তাদের বাড়িতেই প্রথম আঘাত করে বলে জানান অনুশীলার স্বামী সোলেমান রিছিল।
রিছিল বলেন, “গরের ভিতরে কোমর পানি। পানির তোড় বাড়ির চাইরটা গরই ভাইঙ্গা ফালাইচে। বিচনাপত্র সব নিয়া গেচে। গরে ধান আছিল। তাও ভাসাইয়া নিয়া গেচে। পরনের কাপড়ডা চাড়া কিছুই আচিল না। কী করাম? মানুষ বাঁচায়াম, না অন্য কিছু করাম। দাঁড়ায়া খালি তাকায়া তাকায়া দেকলাম।
গ্রামটির ষাটোর্ধ্ব ফজিলা রোবানেরও একই অবস্থা। স্বামী, ছেলে, ছেলের বউ, নাতি নিয়ে মোট পাঁচজনের সংসার তার। তাদের বাড়িও বানের পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তারা এখন স্থানীয় একটি চার্চে আশ্রয় নিয়েছেন।
ফজিলা বলেন, তাদের তিনটা ঘর চোখের সামনে ভেঙে যায়। একটা একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। থাকার মত জায়গা নেই তাদের।
“ধানগুলাও নিয়া গেছে বানের পানি। চলার মতো কিছুই নাই। সরকার যদি আমরারে দেইখ্যা মায়া লাগে তাইলে আমরার খুব ভালা অইতো।”
একইভাবে বানের পানিতে কলমাকান্দা উপজেলায় শত শত বাড়িঘর ভেঙে গেছে। অনেকের গোলার ধান, ঘরের জিনিসপত্রসহ গৃহপালিত পশু, খামারের মুরগি পানিতে ভেসে গেছে। বন্যায় সর্বস্বান্তরা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
“বাঁইচ্যা যে আচি এইডাই বড় কতা। সব তছনছ কইরা দিয়ে গেচে। ঘর থেইক্যা কিছুই বাইর করতে পারি নাই। পানি অহন নামচে। বাড়িঘর ঠিকঠাক করতাছি। কিন্তু চারদিকের গন্ধে টিহনই যায় না। এই অবস্তার মধ্যেই আছি।”
গ্রামেই একটি হার্ডওয়্যারের দোকান চালাতেন আতাউল ইসলাম। টিউবওয়েল, টিউবওয়েলের পাইপসহ দোকানে যা ছিল সবই ভেসে গেছে বলে জানান আতাউল।
আতাউল বলেন, “রাত ৪টার দিকে রাস্তার পানি ওভার ফ্লু হওয়া শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে দোকানে পানি উঠা শুরু হয়। আমি দোকানেই আছিলাম। পরে কোনোমতে জীবনটা বাঁচাইছি। অহন কিবায় কী করাম? সবই তো গেছে গা। খায়াম কী? চলাম কিবায়?”
এমন পরিস্থিতিতে ওই এলাকায় এখনও সরকারের সহযোগিতা তৎপরতা দেখা যায়নি।
মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেত্রকোনা-১ (কমলাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য মানু মজুমদার।
তিনি বলেন, দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে স্থানীয় প্রশাসন ও চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা তৈরির পর মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ এনে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।